নিউজ ডেস্ক:
ইউক্রেইনে যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করা ২৫ জন বাংলাদেশির মধ্যে প্রথম দফায় ১১ মেডিকেল শিক্ষার্থীকে সরকারি খরচে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে অস্ট্রিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস।
হাঙ্গেরিতে আসা ওই শরণার্থীদের ৪ মার্চ দেশে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ভিয়েনায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের উপপ্রধান রাহাত বিন জামান।
হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশ দূতাবাস না থাকায় অস্ট্রিয়া দূতাবাস ও হাঙ্গেরির কনসাল জেনারেলের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক ইউক্রেইন থেকে হাঙ্গেরিতে প্রবেশকারী বাংলাদেশিদের খোঁজ রাখা হচ্ছে।
তবে ইউক্রেইন থেকে সীমান্ত পেরিয়ে হাঙ্গেরিতে প্রবেশকারী বাংলাদেশি শরণার্থীদের দেখভালের মূল দায়িত্ব পালন করছেন রাহাত বিন জামান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাঙ্গেরির স্থানীয় সময় শনিবার রাতে ১৫ জন প্রবেশ করেছিলেন, এদের মধ্যে ১১ জন মেডিকেল শিক্ষার্থী দেশে ফিরে যাবেন ৪ মার্চ। দুইজন থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আরেকজনের পরিবার সৌদি আরবে থাকেন; তিনি সেখানে যাবেন।”
শনিবারই ওই ১৫ জনের বাইরে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী প্রবেশ করেছেন। তার স্ত্রী ও কন্যারা ইউক্রেনের নাগরিক বলে তিনিও হাঙ্গেরি থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ১৫ জনের ওই দলটির সবাই উজহরদ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে দুইজনের মাস্টার্স শেষ, তারা চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। এ দলটি জাহোনি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে হাঙ্গেরি প্রবেশ করেছে।
বাংলাদেশের এ শরণার্থী দলটি অবস্থান করছে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের সিমেলভেস ইউনিভার্সিটির ডটমেটরিতে।
এদের খরচ দুতাবাস বহন খরচে বলে রাহাত জানিয়েছেন।
দলটির টিম লিডার চিকিৎসক শুভজিৎ রক্ষিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অস্ট্রিয়া দূতাবাস এবং হাঙ্গেরির কনসাল জেনারেল সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। এখানকার সব খরচ তারা বহন করছেন।”
দূতাবাস উপপ্রধান রাহাত বিন জামান জানান, এর বাইরে জাকারপেশিয়া পয়েন্ট দিয়ে আরও ছয় জনের একটি বাংলাদেশি দল হারকিভ থেকে দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করেছে। এরাও মেডিকেল শিক্ষার্থী।
তিনি জানান, আরও দুইজন বাংলাদেশি নাবিক ক্রিমিয়ার নিকটবর্তী ওডেসা শহর থেকে হাঙ্গেরির টাইসা বর্ডারে এসে ঢোকার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
ওই দুই নাবিকের সঙ্গে হোয়াটস আপে যোগাযোগ করা হলে তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সীমান্ত পর্যন্ত আসতে তাদের তিনদিন লেগেছে। ওডেসা থেকে প্রথমে ট্যাক্সি করে স্টেশনে যাই। তারপর তিন থেকে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করে কোনও মতে এক টিকেটে দুইজন ট্রেনে উঠি।”
“লিভভ হয়ে উজহরদ শহরে একরাত থাকি। তারপর সেখান থেকে হাঙ্গেরির চপ সীমান্তে আসি।”
ঢাকার পাশে নারায়ণগঞ্জে ওই নাবিকের বাড়ি। তার সাথে থাকা অপর নাবিকের বাড়ি রাজশাহী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ওই নাবিক আরও বলেন, “সীমান্তের চপ চেক পয়েন্টে রোববার বিকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলাম। পরে সেখানে টিকেট না পেয়ে আফ্রিকার অভিবাসীরা মারামারি শুরু করে দেয়। ইউক্রেনিয়ান আর্মি এসেও ওদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।”
বাংলাদেশি নাাবিক জানান, “সেখানে অন্য তিনজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গেও দেখা হয়েছে। অবশেষে চেক পয়েন্ট পরিবর্তন করে আমরা দুইজন (দুই নাবিক) টাইসা সীমান্তে এসেছি। হয়তো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেতরে ঢুকতে পারবো। এখানে লাইনে ৬০০-র বেশি লোক আছে।”
ইউরোপেরই অন্য একটি দেশের মালিকানাধীন জাহাজে কর্মরত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের ওই নাবিক।
তিনি বলেন, “আমরা দুইজনই ৮ বছর ধরে তিনি ইউক্রেইন আছি। এখানেই পড়াশোনা। ক্রিমিয়ায় রাশিয়ান বাহিনী যখন ঢুকে পড়েছিল, তারচেয়ে অবস্থা এখন খুবই খারাপ। যাত্রাপথে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি দেখে রীতিমত গায়ে কাঁটা দিয়েছে।