নিজস্ব প্রতিবেদক:
আওয়ামী লীগ সরকারের যুগপূর্তি আজ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রবৃদ্ধির ৭৩ শতাংশই এসেছে এই ১২ বছরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশ্বর রোল মডেল।
২০১৯-এর ৭ই জানুয়ারি টানা তৃতীয় মেয়াদে এবং চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ৯৬-এ প্রথম এবং ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পরপর তিনবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশকে নিয়ে গেছেন উন্নয়নের মহাসড়কে। এ সময়ে সরকারের ধারাবাহিকতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় উন্নয়ন যেমন গতি পেয়েছে তেমনি বলিষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সমুদ্রসীমা জয়, মহাকাশে স্যাটেলাইট, নারীর ক্ষমতায়ন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধের বিচারে স্বাধীনতার মর্যাদা সমুজ্জ্বল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে, উন্নয়ন টেকসই করতে বৈষম্য কমিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ তাদের।
অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেন,স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ৭৩ শতাংশই অর্জিত হয়েছে গত ১২ বছরে। প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩ গুনের বেশি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৭ গুন, মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ৪ গুন। একই সঙ্গে স্থিতিশীল ছিল মূল্যস্ফীতি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য নেতৃত্বের অবদান আছে। নেতৃত্ব যদি বিচক্ষণ, সুবিবেচনাপ্রসূত, সুদুরপ্রসারী হয়, জনগনের অংশগ্রহণটাকে নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে সেই দেশে উন্নয়ন এগিয়ে যায়। আমরা শুধু প্রথাসিদ্ধ উন্নয়ন করছি না, অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ উন্নয়নের দিকে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনার শাসনামলে অবকাঠামো ও আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে যে উন্নতি হয়েছে, তা স্বীকার করছেন সবাই। তবে উন্নয়নকে টেকসই করতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কমাতে হবে সামাজিক বৈষম্য ও দুর্নীতি।
অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে গত ১২ বছরে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি করেছে। মাথাপিছু আয়, জীবৎকাল, সাক্ষরতা বা নারী উন্নয়ন সূচক সব ক্ষেত্রেই অগ্রগতি ভালো, দৃশ্যমান হয়েছে অবকাঠামো প্রকল্প। দেশে যেমন অনেক উন্নতি হয়েছে, তেমনি বেড়েছে বৈষম্যও। এই পার্থক্য উন্নয়নকে টেকসই রাখতে আগামী দিনে হুমকি হয়ে আসতে পারে। উন্নয়নকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই করতে হলে যে পরিমাণে বৈষম্য, বঞ্চনা, দূর্নীতি, সুশসনের অভাব দূর করা দরকার সেভাবে আমরা করতে পারিনি এখনো। উন্নতি নিয়ে যেমন উচ্ছাস করি তেমনি একই রকম ভাবে বৈষম্য নিয়ে মর্মপীড়া রয়ে গেল।
গত এক যুগে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার প্রসার, শিশুমৃত্যু কমানো ও মাতৃস্বাস্থ্য রক্ষায় গোটা বিশ্বেই অগ্রগন্য ছিল বাংলাদেশ। নজর কেড়েছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারেও।
এদিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা এক যুগ পূর্তিতে বাংলাদেশের জনগণকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ‘দিন বদলের সনদ রূপকল্প ২০২১’ উপস্থাপন করেন। জনগণ নিরঙ্কুশভাবে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে। একইভাবে দেশের জনগণ ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় গণরায় দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চলমান অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের আস্থা, সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে টানা এক যুগ দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ধারাবাহিকভাবে গত ১২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রগতির সকল সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করেছে। ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেল। অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে অগ্রগতির অভূতপূর্ব স্মারক বহন করছে। দেশের গণতন্ত্র ও সুশাসনকে করেছে শক্তিশালী। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বের বুকে আজ বিশেষভাবে অনুকরণীয় রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা এক যুগ পূর্তিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন এবং দেশের মানুষের সার্বিক মঙ্গল কামনায় সারাদেশে দোয়া মাহফিল ও বিশেষ প্রার্থনার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয়ভাবে আজ বাদ আসর ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজনে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া দেশের সব মসজিদে সুবিধাজনক সময়ে দোয়া ও মিলাদ-মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসাবে সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায়, বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় এবং মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে খ্রিস্টান সম্প্রদায় বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।