নিউজ ডেস্ক:
এক পাশে হাতিরঝিল, আরেক পাশে বেগুনবাড়ীর বউবাজার ও তেজগাঁও শিল্প এলাকার সড়ক। মাঝে কথিত নেতাদের দখল করা জায়গায় বসানো হয়েছে বাজার ও সারি সারি দোকান। দখলদারির এমন পরিস্থিতিতে এখানেই থেমে যায় হাতিরঝিলসংলগ্ন উত্তর বেগুনবাড়ীর সংযোগ সড়ক নির্মাণ। কিছু দখলদারের কাছে বিশাল এলাকার প্রায় তিন লাখ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ে। অবশেষে প্রায় সাত বছর পর হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী সড়ক উন্মুক্ত হয়েছে। ভোগান্তিমুক্ত হয়েছে লাখো মানুষ।
স্থানীয়রা জানায়, সাত বছর আগে নগরবাসীর জন্য হাতিরঝিল খুলে দেওয়া হলেও ব্যতিক্রম ছিল সংলগ্ন বেগুনবাড়ী অংশ। হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী সংযোগ সড়ক খুলে দেওয়ায় এবার প্রকল্পটির পাশের এলাকার বাসিন্দাদের যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। এর মাধ্যমে বেগুনবাড়ী ও তেজগাঁও শিল্প এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি শেষ হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, সড়কটি নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণেই বেশি বেগ পেতে হয়েছে। হাতিরঝিল প্রকল্পের বেগুনবাড়ীর বউবাজার দিয়ে আড়াই ফুট প্রশস্ত একটি গলি ছিল। সরকারের চেষ্টায় এখন দখলদারদের সরিয়ে সেই সরু গলিকে রূপ দেওয়া হয়েছে ৬০ ফুট প্রশস্ত সড়কে।
সড়কটি নির্মাণ শেষে উন্মুক্ত হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সফি উল্লা। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘তেজগাঁও এলাকায় শিল্প ও বাণিজ্য একসঙ্গে চলায় এখানে স্থানীয় অধিবাসীদের পাশাপাশি বাইরের মানুষের যাতায়াত রয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু রাস্তার উন্নয়নকাজ চলছে। এ জন্য সংলগ্ন সাতরাস্তা-মহাখালী সড়কে ব্যাপক যানজট লেগেই থাকত। হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী সংযোগ সড়ক উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এলাকাবাসী এর সুফল পাচ্ছে। এখন রামপুরা, বাড্ডা ও মালিবাগের দিকে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবেও এই সড়ক ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি।’
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজধানী ঢাকায় যেকোনো প্রকল্প বিশেষত সড়ক নির্মাণের মতো কোনো কাজ বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন। সবার সহযোগিতা ছাড়া তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। কারণ যেকোনো জায়গা থেকে মানুষকে সরানো কঠিন। বাস্তব পরিস্থিতি বুঝিয়ে পরে সরকারের পক্ষ থেকে টাকা মঞ্জুর করে তাদের দেওয়া পর্যন্ত অনেক বিষয় জড়িত থাকে। হাতিরঝিলের ক্ষেত্রে এই কথাটি বেশি প্রযোজ্য। বেগুনবাড়ীর ওই সড়কসংলগ্ন এলাকায় দখলদারদের জোর অবস্থান ছিল। এখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সবাইকে উৎসাহ দিয়েছে। আর প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী অনেক বড় অবদান রেখেছে।’
সরেজমিন দেখা যায়, বউবাজার, রানার গ্রুপ ও বেগুনবাড়ী এলাকায় ৬০ ফুট প্রশস্ত সড়কটিতে অনায়াসে চলছে যানবাহন। তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া, ১২ নম্বর বেগুনবাড়ী, উত্তর ও দক্ষিণ বেগুনবাড়ী, সিদ্দিক মাস্টার ঢাল ও দক্ষিণ বেগুনবাড়ী এলাকার মানুষ সড়কটি খুলে দেওয়ায় অনেক খুশি।
বউবাজার এলাকার বাসিন্দা এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘মাত্র ১০০ ফুট দীর্ঘ দূরত্বের জন্য এক কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব ঘুরে হাতিরঝিলে ঢুকতে হতো। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে এলাকাটিতে নতুন সংযোগ সড়ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত হলেও হবে-হচ্ছে করেই তা শুধু পিছিয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে সব প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে সড়কটি নির্মিত হয়েছে। নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও দুই পাশে সীমানাপ্রাচীরের সড়কটির মাঝখানে শোভাবর্ধনের জন্য গাছ লাগানো হয়েছে।’
সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী জানান, আগে এই সরু গলিপথ দিয়ে মোটরসাইকেলে যাতায়াতও সম্ভব ছিল না। হাতিরঝিল প্রকল্পের সুবাদে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় উত্তর বেগুনবাড়ী ও কুনিপাড়া এলাকার বাসিন্দারা খুশি। দক্ষিণ বেগুনবাড়ী এলাকার বাসিন্দা দেলু মিয়া বলেন, ‘এমন একটি রাস্তা হবে তা ছিল আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবে ধরা দিয়েছে। গোটা তেজগাঁও শিল্প এলাকার মানুষ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছে।’