নিয়ম অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তার সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষের ৷ তারা বলছে, তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনো অবনতি হয়নি৷ অথচ বেগম জিয়ার বিদেশ যাত্রা নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য৷ এতিমের টাকা আত্মসাৎ করার দায়ে সাজপ্রাপ্ত কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কি আসলেই অসুস্থ? কিংবা অসুস্থ হলে কতটা? এই প্রশ্নের নিশ্চিত কোনো উত্তর নেই রাজনৈতিক দল বিএনপির কাছে৷ যা আছে তা সবই তাদের নেতাদের মনগড়া বাগাড়ম্বর। তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার বিষয়ে চলছে জোর আলোচনা৷
বর্তমানে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান শুভ, সম্প্রতি তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বাড়িতে থাকা অবস্থায় তাঁর শারীরিক অবস্থা যেমন ছিল,তা থেকে একটুও অবনতি হয়নি৷
তিনি জানান, খালেদা জিয়ার কোনও অসুস্থতা নেই৷ তাঁর সবকিছুই স্বাভাবিক রয়েছে ‘‘আমরা নিয়মিত চেকআপ করে তাঁর কোনও অসুস্থতা পাইনি৷ তবে তাঁর বয়স ৭৪ বছর৷ পায়ে দুইটি অপারেশন আগে করা হয়েছে৷ তাই হাঁটতে একটু সমস্যা হয়৷ এর বাইরে কিছু নয়৷”
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ব বিদ্যালয়ে ২৪ ঘণ্টা একজন চিকিৎসক থাকেন৷ রাতে কেবল তাঁর জন্যই একজন চিকিৎসক প্রিজন সেলের একটি কক্ষে ঘুমান৷ তাঁর পাশে সর্বদা থাকেন একজন নার্স৷ নিয়মিত তিনি হাঁটাচলাও করছেন এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী৷
বিএনপির তরফ থেকে চেয়ারপার্সনকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবি করা হলেও ডয়চে ভেলের কাছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন যে, বিদেশে নেয়া নয়, বরং তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা যেন বেগম জিয়াকে দেখতে পান সেটিই তাঁদের মূল দাবি৷
উল্লেখ্য একজন বাঙ্গালী নারী হিসেবে ৭৫ বছর বয়সে বেগম খালেদা জিয়া গড়পড়তা অন্যদের চাইতে যথেষ্ট, সক্ষম, আর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর আর্থাইটিসের সমস্যা বহু পুরাণো , এই অসুখের জন্যে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা নিয়েছেন, দুর্নীতির দায়ে কারাগারে যাবার কিছুদিন আগেও তিনি হাঁটুর চিকিৎসা ও চোখের অপারেশন করিয়েছেন লন্ডনে। আর বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ হাসপাতালে দেশ সেরা চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে আছেন তিনি।
এর আগেও দুইবার তিনি হাটুর অপারেশন করিয়েছেন সৌদি আরব ও
নিউইয়র্কে। বিএনপির অভিযোগ যে কারাগারে থাকার জন্য তিনি অসুস্থ হচ্ছেন এটা
সত্য নয়। তার এই অসুস্থতা আগের। যার চিকিৎসা তিনি পাচ্ছেন। উল্টো তিনি তার
সুস্থতা লাভের জন্য চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছেন না। এটা কি তাদের
কোন দুরভিসন্ধি?
এই বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক বলেন,”একটি কথা উল্লেখ করতে চাই যা আগে বলতে চাইনি। কিন্তু প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে বিষয়টি পরিস্কার করা দরকার। আমাদের হাসপাতালের অফিস সময় দু’টা পর্যন্ত। প্রায় সময়ই তিনি (খালেদা জিয়া) অনুমতি দেন দেড়টার পর। নির্ধারিত সময়ে তাঁর দেখা পাওয়া যায় না। এমনকি অনেকবার চিকিৎসক সাড়ে চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফিরে এসেছেন।”
ব্রিগ্রেডিয়ার হক আরও অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার আর্থরাইটিসের চিকিৎসায় ভ্যাকসিন দেয়াসহ কিছু ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে রোগীর অনুমতি মিলছে না এবং সেকারণে চিকিৎসকরা এগুতে পারছেন না।
এছাড়া ও বিএনপি নেত্রী অন্যান্য যে কোন বন্দীদের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা লাভ করছেন। বেগম জিয়ার ইচ্ছা অনুযায়ী একজন গৃহপরিচারিকা কারাগারে তার সঙ্গে রাখা হয়েছে। তার মানে বেগম জিয়াকে কারাগারে সে সেবা করছে। বিশ্বের ইতিহাসে কোন সাজাপ্রাপ্ত বন্দীর এতো সুবিধা প্রাপ্তি একটি নজির বিহীন ঘটনা। ।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি তাদের চেয়ারপার্সন এর অসুস্থতার নাম করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে । কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের এই যুগে ষড়যন্ত্রের রাজনীতির পালে আর হাওয়া লাগেনা , বাঙ্গালী ভুল করে না।