শিগগিরই দেশে কয়েকটি ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম চালাবে এ ব্যাংকগুলো। গ্রাহক ও ব্যাংকারের মধ্যে সরাসরি দেখা হবে না। এই লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল ব্যাংকিং নীতিমালা’ আসছে।
প্রযুক্তির উন্নয়নকে কাজে লাগিয়ে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে ব্যাংকিং সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে আগামী ১৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ড সভায় অনুমোদনের জন্য ডিজিটাল ব্যাংক নীতিমালা উপস্থাপন করা হবে। এজন্য সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে প্রচলিত ব্যাংক লাইসেন্স পেতে নূ্যনতম মূলধনের প্রয়োজন ৫০০ কোটি টাকা। ডিজিটাল ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ, ঋণের আবেদন এবং ঋণ অনুমোদন অনলাইন ভিত্তিক হবে এবং এতে ভুয়া ঋণগ্রহীতা ও প্রকৃত ঋণগ্রহীতা শনাক্ত করা সহজ হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকের রূপরেখা ও নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এটি ১৪ জুন বোর্ড সভায় পাঠানো হবে। বোর্ড সভায় অনুমোদনের পর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ডিজিটাল ব্যাংক কার্যক্রমের রূপরেখা ও নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ১৪ জুন অনুষ্ঠেয় পরবর্তী পর্ষদ সভায় ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হবে। সারা দেশে শাখা ছাড়াই চলবে ডিজিটাল ব্যাংক।
সূত্র জানায়, প্রযুক্তিনির্ভর এই আধুনিক ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে নূ্যনতম ১৫০ কোটি টাকা মূলধন প্রয়োজন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি প্রচেষ্টাকে সম্প্রসারণ ও ত্বরান্বিত করতে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের কথা বলেছেন। এতে বাজেটে ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের প্রক্রিয়া আরও একধাপ এগোবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। এই নীতিমালা এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালিত হবে। ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন পেলেই স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে ব্যাংকটির যাত্রা আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।
এদিকে গত মাসে ‘ব্যাংকিং অন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ সম্মেলন হয়ে গেল। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, শিগগিরই দেশে একটি ডিজিটাল ব্যাংক চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি একই বক্তব্য দিয়েছেন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনেও। মূলত ক্যাশলেস বা কাগজের টাকার লেনদেন কমাতে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘আমরা সফলভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প অর্জনে পদক্ষেপ নিচ্ছি। তাই শতভাগ ডিজিটাল লেনদেন কার্যক্রমের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’
জানা গেছে, ডিজিটাল ব্যাংকিং সিস্টেমে ব্যাংকের কোনো শাখা থাকবে না। ব্যাংকের কেন্দ্রীয় অফিস থেকে অনলাইনে গ্রাহকদের হিসাব বা অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। সেখানেই গ্রাহকরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা জমা ও তুলতে পারবেন। এমনকি কোনো গ্রাহক যদি ঋণ নিতে চান তাকেও সরাসরি আসতে হবে না। অনলাইনে আবেদনের পর সেখানেই তার প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে হবে। সেই ঋণ অনুমোদনের পর তার অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৩৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সম্প্রতি নগদ ফাইনান্স পিএলসি নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটিসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৮টি।
আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, জাতীয় ডেবিট কার্ড প্রদানের খুব কাছাকাছি। শিগগিরই স্থানীয়ভাবে এ ডেবিট কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য কর্মী বাহিনীকে পরিকল্পনামাফিক সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সংস্কৃতিগত পরিবর্তন আনতে হবে।