কক্সবাজারের অসহনীয় শরণার্থী শিবির ছেড়ে রোহিঙ্গারা যখন স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছে, তখন কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করছে।
আরাকান রাজ্য নামে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ ছিল। এ রাজ্যেই ছিল রোহিঙ্গাদের বাস। স্বাধীন রাজ্য আরাকানে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে ১৬৩৫ খ্রিষ্টাব্দে। সেখান থেকেই শুরু আরাকানি মুসলমান তথা রোহিঙ্গাদের ভাগ্য বিপর্যয়ের। এরপর ১৭৮৪ সালে আরাকান স্বাধীনতা হারায়। বর্মি রাজা বোধাপোয়া আরাকান দখল করে নেন। আরাকানে বার্মার জাতিসত্তার শাসন শুরু হয়।
আরাকান রাষ্ট্রের মালিক রোহিঙ্গারা কেবল তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রই হারায়নি, বরং ঘোর মুসলিমবিরোধী রাজা বোধাপোয়া অসংখ্য রোহিঙ্গা মুসলমানকে হত্যা করেন এ সময়। বোধাপোয়ার নৃশংসতাকে ছাড়িয়ে গত ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গারা নজিরবিহীন গণহত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের জীবিকার শেষ সম্বলটুকুও আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে বা জোর করে কেড়ে নিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা। রোহিঙ্গাদের শত শত গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে বুলডোজার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের বর্ণনা অনুযায়ী রোহিঙ্গারা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে অবহেলিত ও নির্যাতিত জনগোষ্ঠী। মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে চিৎকার করে কেঁদেছে দশকের পর দশক। আর মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছে’।
তবে মাঝেমধ্যে আড়মোড়া ভেঙে মিয়ানমার অসন্তুষ্ট না হয় এমন লোকদেখানো তদন্তদল গঠন কিংবা ‘করে নাকো ফোঁসফাঁস, মারে নাকো ঢুঁশঢাশ’ গোছের কিছু নির্বিষ বিবৃতি দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মিয়ানমার আদালত অবমাননা করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বসে বসে মজা দেখছে। ওপরে ওপরে নিষেধাজ্ঞার কথা বললেও তলে তলে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়িয়েছে, অস্ত্র বিক্রি করে চলেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই।
ব্যতিক্রম কেবল বাংলাদেশ। বরাবরই মানবিক হাত বাড়িয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। জীবন বাঁচাতে কিংবা আরেকবার সংঘবদ্ধ ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্টে যখন রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হয় বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তে, তখনো মানবতার মন্ত্রে দীক্ষিত বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সাত লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে কক্সবাজারের শরণার্থীশিবিরগুলোতে। সব মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাস ছোট পর্যটন শহর কক্সবাজার।
কক্সবাজারের বুকে চেপে বসা অতিরিক্ত ১১ লাখ মানুষের ভারে নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম পর্যটন নগরীর। অতিরিক্ত জনবসতির অসহনীয় চাপে পর্যটন নগরী পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হওয়ার হুমকিতে। পাহাড় ও গাছ কেটে বাড়িঘর বানানোর কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে কর্মসংস্থান ও জীবিকা হারিয়ে ক্রমশই ফুঁসে উঠছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে যেকোনো সময়।
পাহাড়ের ঢালুতে রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয়শিবির তৈরি করায় ভূমিধসের শঙ্কা ও নিরাপত্তাঝুঁকি রয়েছে। ঘুপচি ঘরগুলো বসবাসের জন্য অসহনীয়। রোহিঙ্গা শিবিরগুলো হত্যা, ধর্ষণ, মানব পাচার, অস্ত্র পাচার ও ইয়াবা পাচারের ভয়ংকর আখড়ায় পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা এদেশের মানুষদেরও হত্যা করছে। আনসার ক্যাম্পে আক্রমণ করে ক্যাম্প প্রধানকে হত্যা করেছে। ১১টি অস্ত্র লুট করে নিয়েছে। রোহিঙ্গা শিবির ঘিরে উগ্রবাদের শঙ্কার বিষয়ে এবং তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অপব্যবহারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হচ্ছে বারবার। পাসপোর্ট, এনআইডি জালিয়াতি করে এমনকি বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে রোহিঙ্গারা।
১৯৭৭ সালে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ঘোষণা দিলে অনেক রোহিঙ্গা সৌদি আরবে যায়। তারা ৩০ বা ৪০ বছর ধরে ওই দেশে আছে। তাদের ছেলেমেয়ের জন্ম হয়েছে সেখানে। কিন্তু ওদের পাসপোর্ট নাই। সৌদি আরবে অবস্থানরত অন্তত ৫৪ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিতে চাপ দিচ্ছে দেশটি। এমনকি তাদের পাসপোর্ট দেওয়া না হলে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার এদেশের গৃহহীন মানুষদের জন্য ভাসানচরে তৈরি আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩-এ সাময়িকভাবে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। ভাসানচর রোহিঙ্গাদের স্থায়ী নিবাস নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পর এখানে লাখ লাখ গৃহহীন, ছিন্নমূল বাংলাদেশির ঠাঁই হবে।
ব্রিটিশ পরামর্শক সংস্থার নির্মাণসংক্রান্ত পরামর্শ ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তিন হাজার ৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে বসতি নির্মাণ করা হয়েছে। পরিকল্পিত এই আবাসনে উন্নত মানের রাস্তাঘাট, স্কুল, মসজিদ, সাইক্লোন শেল্টার, অগ্নি প্রতিরোধব্যবস্থা, নিরবচ্ছিন্ন নিজস্ব বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, চিকিৎসাসেবা, বাজার ও বিপণনের ব্যবস্থা, ফোরজি নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি স্থাপনের ফলে পাল্টে গেছে চরটির সামগ্রিক চিত্র।
পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, পরিবেশসম্মত স্যানিটেশন সুবিধা, খাদ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহব্যবস্থা এবং জীবিকা নির্বাহের সুযোগ-সব মিলিয়ে ভাসানচর এখন যেন আধুনিক এক শহর। বেসামরিক প্রশাসনের জন্য প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভবন, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসিক ভবন, নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্য বাংলো, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগসুবিধা-সংবলিত বাংলো নির্মাণ করা হয়েছে ভাসানচরে।
প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত জাতিসংঘ প্রতিনিধি, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) প্রতিনিধি, রেডক্রস ও আন্তর্জাতিক এনজিওর প্রতিনিধি, এতিমখানা, ডে কেয়ার সেন্টার ও সুপারশপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অসহায় রোহিঙ্গারা যাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারে এবং তারা যাতে দক্ষ কর্মী হয়ে মিয়ানমার ফিরে যেতে পারে সে জন্য ভাসানচরে প্রশিক্ষণের উদ্যোগও গ্রহণ করেছে সরকার।
কক্সবাজারের অসহনীয় শরণার্থীশিবির ছেড়ে রোহিঙ্গারা যখন স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছে, তখন কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করছে।
এদের মধ্যে অন্যতম হলো দ্যা গার্ডিয়ান ও আল-জাজিরা। তবে সবাইকে ছাপিয়ে এ দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আমাদের প্রতিবেশী ভারতের গণমাধ্যমসমূহ।
আল-জাজিরার সংবাদ শিরোনাম- ‘Bangladesh moves nearly 2,000 Rohingya refugees to remote island’ Second group of 1,800 Rohingya refugees sent to Bhasan Char island amid concerns many of them have been coerced.
আর দ্যা গার্ডিয়ানের শিরোনাম- ‘Bangladesh moves more Rohingyas to remote island despite rights concerns’ Activists say the island of Bhasan Char is not safe and that the refugees are being moved against their will.
আল-জাজিরার এমন সংবাদ শিরোনামে আহত হলেও বিস্মিত হইনি। আল-জাজিরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ও স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি পক্ষপাতমূলক অনেক বানোয়াট সংবাদও অতীতে প্রকাশ করেছে।
সম্প্রতি ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১’ নামের রিপোর্টে এই পূর্বাভাস দিয়েছে যে, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি।
যেসব দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ২৫তম অর্থনীতি হবে, তার মধ্যে আছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, নরওয়ে, আর্জেন্টিনা, ইসরায়েল, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নাইজেরিয়া, বেলজিয়াম, সুইডেন, ইরান এবং তাইওয়ান।
আল-জাজিরার জ্বলুনিটা অনুমেয়। বাংলাদেশকে বৃহৎ অর্থনীতির দেশ নয়, মিসকিনের দেশ হিসেবে দেখতে চায়।
দ্যা গার্ডিয়ান আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও তার নানা সমীকরণের পক্ষে বলতে গিয়ে এমন সংবাদ শিরোনাম করাই স্বাভাবিক।
কিন্তু ভারত তো বন্ধু দেশ, তাদের সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম কেন বাংলাদেশের বৈরী হবে? ভারতের জি-নিউজ-এর শিরোনাম ‘১৮০০ রোহিঙ্গাকে নির্জন দ্বীপে পাঠাল Bangladesh, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ’।
আর আনন্দবাজারের শিরোনাম ‘সমুদ্রের মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে ফের একদল রোহিঙ্গাকে পাঠাল বাংলাদেশ সরকার’।
প্রায় একই রকম শিরোনাম করেছে ভারতের আরও বেশ কয়েকটি পত্রিকা- Heritage Bangla News, বাংলা খবর, আগাম বার্তা, সংবাদ.ইন, রাজ্য সংবাদ।
বাংলাদেশ লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে তাদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করেছে। বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র শরণার্থীদের তাদের দেশে প্রবেশে যে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশও যদি ওই সব রাষ্ট্রের মতো সীমান্ত উন্মুক্ত না করত তাহলে রোহিঙ্গাদের পরিণতি কী হতো?
মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা হত্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেত না কি? রোহিঙ্গা নারীরা আরও কয়েক দফা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হতো না কি? তাহলে এখন কেন রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন আসছে?
ভাসানচরকে বাংলাদেশ সরকার থানা ঘোষণা করে এটি বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইউনিটে পরিণত করেছেন। ভাসানচরে কেবল রোহিঙ্গারাই নয়, রোহিঙ্গাদের দেখভাল করার জন্য পুলিশ, ডাক্তার, প্রকৌশলী, স্বাস্থ্যকর্মীসহ বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নৌবাহিনীর সদস্য ও এনজিও কর্মীরা ভাসানচরে থাকবেন। শত শত বাংলাদেশি নাগরিক ভাসানচরে থাকতে পারলে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে কেন এমন কৃত্রিম দরদ?
আন্তর্জাতিক আইনের একটি প্রতিষ্ঠিত রীতি হলো, কোনো দেশ তার নাগরিকদের প্রতি যে মানদণ্ডের সুরক্ষা দেবে কূটনীতিক ও বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া বিদেশি সাধারণ নাগরিকদের এর চেয়ে বেশি সুরক্ষা দিতে দায়বদ্ধ নয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শরণার্থী চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় বিধায় এ-সংক্রান্ত কোনো দায়দায়িত্বও বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়।
১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ভূমি একটি বড় সমস্যা। এরপরও স্থানান্তর নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের শামিল। এরপরও রোহিঙ্গাদের প্রতি আপনাদের দরদ আমাদের চেয়ে বেশি হলে ওদের নিয়ে যান।
অন্য দেশের সংবাদপত্র রোহিঙ্গা স্থানান্তর নিয়ে অসত্য ও বিষোদগারমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও ভারতীয় সংবাদপত্রের কাছ থেকে এমন সংবাদ পরিবেশন দুঃখজনক। এমন সংবাদ বন্ধুত্বের পরিচয় বহন করে না। ভারতীয় সংবাদপত্রগুলোর বরং সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বের বিপরীতে ভারতের অবস্থানের জন্য।
রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের একাধিক প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে চীন আর ভোটদানে নীরব থেকেছে ভারত। এ ক্ষেত্রে চীন আর ভারতের অবস্থানের মধ্যে খুব বেশি ফারাক? কথায় বলে নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। ভারত নীরব থেকে রোহিঙ্গা গণহত্যা, ধর্ষণ তথা ঘৃণ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনকে সমর্থন করেছে।
মিয়ানমারের অব্যাহত দুর্বৃত্তপনা ও চলমান রোহিঙ্গা-সংকটের মধ্যেই মিয়ানমারের কাছে সাবমেরিন ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে ভারত। এটি মিয়ানমারের গণহত্যার বিরুদ্ধে কিংবা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে ভারতের অবস্থানের ইঙ্গিত দেয় কি?
বাংলাদেশ ২৫তম অর্থনীতির দেশ হলে ভারতের সংবাদপত্রের অখুশি নয়, বরং খুশি হওয়া উচিত। বাংলাদেশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মধ্যম আয়ের দেশ হয়নি, তাতেই বাংলাদেশিরা কেবল ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজম খাতেই কয়েক বিলিয়ন রুপি ব্যয় করে। পর্যটনের কথা বাদ দিলেও বিয়ে, ঈদ, পূজা-পার্বণ তো বটেই এমনকি জন্মদিন, গায়েহলুদের অনুষ্ঠানেও সকাল-বিকেল ভারতে সওদা করতে যায় বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে লাভের গুড়ের অংশীদার ভারতও হবে। তদুপরি, ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা কেবল বাংলাদেশের বিষয়েই পূর্বাভাস দেয়নি, ভারতের জন্যও অত্যন্ত খুশির খবর দিয়েছে। গবেষণা সংস্থাটি বলেছে ২০৩৫ সালে ভারত হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।
ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের কৃত্রিম দরদ বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমের এমন পক্ষপাতমূলক ভূমিকা কাক্ষ্তি নয়। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে কোনোরূপ আশা না জাগিয়েই আরেকটি বছর চলে গেল।
রোহিঙ্গারা মুসলমান এটা মুখ্য নয়, রোহিঙ্গারা মানুষ সবার ওপরে এটা সত্য। বাংলাদেশ নয়, মিয়ানমারের দুর্বৃত্তপনা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর তাদের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ধারাবাহিক প্রতারণার কথা লিখুন।
আন্তর্জাতিক আদালতের আদেশের প্রতি মিয়ানমারের অবজ্ঞার কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরুন। রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে নিরাপদ আশ্রয় তৈরিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। মিয়ানমারের ওপর দৃশ্যমান চাপ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখুন।
ভুলে গেলে চলবে না বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত হলে তার প্রভাব এই অঞ্চলে পড়তে বাধ্য। প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে আমারটাও নিরাপদ থাকবে?আল জাজিরার জ্বলুনি কোথায় ?