নিজস্ব প্রতিবেদক:
দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে আলোর মুখ দেখছে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু রেলসেতু। আগামী মাসে এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর চাপ কমবে। ঝুঁকিও হ্রাস পাবে বঙ্গবন্ধু সেতুর। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে সমান্তরালভাবে গাড়ি ও রেল চলছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য খুবই ধীরগতিতে চলে রেল কোচ। শুধু তাই নয়, সেতুর ওপর চলাচলের আগে দুই প্রান্তেই বিরতি দিয়ে ইঞ্জিন চেক করতে হয় কোচগুলোর। বর্তমানে ওই সেতুতে অনুমোদিত গতিবেগ ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার। ফলে একটি ট্রেনের সেতুর পুব পাশের স্টেশন থেকে পশ্চিম পাশের স্টেশনে যেতে প্রায় আধা ঘণ্টা লাগে। কিন্তু যমুনা নদীর ওপর পৃথকভাবে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণ হলে সে ঝুঁকি আর থাকবে না। কমে আসবে ভ্রমণকালও। এতে যাত্রীদের সময়ের সাশ্রয় হবে। জ্বালানি খরচও কমবে রেল বিভাগের। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহনব্যবস্থা সহজ হবে, কমবে পণ্য পরিবহন খরচ; যা ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এটা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করে সরকার। সূত্র জানান, ডুয়েলগেজ ডাবল-ট্র্যাকের এ সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু। এটি রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত করবে। এ ছাড়া ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এ সেতু সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে এ সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতুটি নির্মাণ করবে জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। এটি অবশ্য গত মার্চের সংশোধিত প্রাক্কলিত ব্যয়; যা প্রথম ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজালে (ডিপিপি) ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সূত্র জানান, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৪৪টি ট্রেন চলাচল করে। নতুন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে রেললাইন তুলে নেওয়া হবে। নতুন সেতুতে ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল আরও সহজ হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সেতুর কাজ শুরুর যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিলে নভেম্বরেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। এ সেতু উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেল চলাচল ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তন আনবে বলে তিনি মনে করেন। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি বলেন, সময়ের কারণে সবকিছুর দাম বেড়েছে। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্প এলাকায় একটি জাদুঘর নির্মাণ করা হবে; যা ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। রেলমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে যমুনা নদীর পাড়ে গিয়ে এ রেলসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারেন অথবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও করতে পারেন। এদিকে রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, সরকার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ট্রেন পরিচালনার কথা ভাবছে। এজন্য চিলাহাটি-হলদিবাড়ী ৭ কিলোমিটার রেললাইন সংযোগ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে এ রেল চলাচল উদ্বোধন করবেন। এটি চালু হলে ঢাকা-শিলিগুড়ি রুটেও ট্রেন চালু করা সম্ভব হবে বলে সূত্র জানান।
বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর কাজ শুরু প্রসঙ্গে এ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী কামরুল আহসান জানান, মূল সেতুটি দুটি প্যাকেজের আওতায় নির্মাণ হবে। নির্মাণ ব্যয়ের সিংহভাগ (৭২ শতাংশ) ঋণ সহায়তা দেবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকা। এ সেতুর পূর্ব অংশ নির্মাণ করবে জাপানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওবায়শি করপোরেশন, টিওএ করপোরেশন এবং জেএফই। এ অংশের জন্য ব্যয় হবে ব্যয় ৬ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। অন্য জাপানি কোম্পানি আইএইচআই ও এসএমসিসির যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ হবে পশ্চিম অংশ। এ অংশের জন্য ব্যয় হবে ৬ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাইট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা আসতে শুরু করেছেন। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে বিস্তারিত নকশা ছাড়াই একনেক প্রকল্পটির অনুমোদন দিলেও নানা কারণে এর কাজ এখনো শুরু হয়নি। পরে ২০১৮ সালে বিস্তারিত নকশা তৈরি করা হয়। এরপর আবারও নকশায় কিছুটা পরিবর্তন এনে সম্ভাব্য ব্যয় সংশোধন করা হয় মার্চে। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, জমি অধিগ্রহণ, জমি লিজ ও জাদুঘর নির্মাণ।