নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধ মিথ্যা তথ্য দিয়ে নালিশ করেছেন। গত ১৮ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তিনি বাংলাদেশের ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ থাকার মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রিয়া সাহাকে দেশদ্রোহী বলেও মত দিচ্ছেন অনেকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্মীয় সম্প্রতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে প্রিয়া সাহা কোনো বিশেষ মহলের ইন্ধনে এমন মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা উচিৎ।
প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি ফান্ড গঠনে এমন মিথ্যাচার ছড়িয়ে থাকেন। জানা গেছে, প্রিয়া সাহা মহিলা ঐক্য পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, রোকেয়া হলে থাকতেন। তিনি একটি এনজিও চালান। বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার নাটক করে প্রচুর বিদেশি ফান্ড কালেক্ট করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার চরবানিরীর মাটিভাঙ্গা, নাজিরপুর।
এদিকে প্রিয়া সাহার এমন কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নানা কমেন্টে বেরিয়ে আসছে প্রিয়া সাহার নানা কর্মকাণ্ড। এতে তার আসল রূপ বেরিয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, প্রিয়ার স্বামী মলয় সাহা সহকারী পরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের দুই মেয়ে কয়েক বছর ধরে মলয় সাহার দুর্নীতির টাকায় আমেরিকায় বসবাস করছেন, কিছুদিন পূর্বে প্রিয়া সাহাকে দুদকের অফিসিয়াল গাড়ি ব্যবহার করে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেন তার স্বামী মলয় সাহা। সকালে এয়ারপোর্ট পৌঁছে ফ্লাইট মিস করেন প্রিয়া, তারপর সেদিন রাতেই আরেকটি ফ্লাইটে তিনি আমেরিকায় রওনা হন। তার বিদায় মুহূর্তে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আকবর কবিরের কন্যা তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির।
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলা প্রিয়া সাহার দেয়া বক্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলছেন, প্রিয়া সাহার দেয়া সমস্ত বক্তব্য মিথ্যা ও বানোয়াট। বিষয়টি অসাম্প্রদায়িকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপস্থাপনকারী বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে বলে মত দিয়েছেন অনেকেই। এ প্রসঙ্গে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির বহু উদাহরণ তুলে ধরছেন নেটিজেনরা।
৭১ এর চেতনায় গঠিত যে দেশে সব ধর্মের নাগরিক সমান অধিকারে সহাবস্থান করে বিশ্বে অসাম্প্রদায়িকতার মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে সেই দেশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে প্রিয়া সাহার এমন বক্তব্য কখনই মেনে নেয়ার মতো নয় বলেও অভিমত দিচ্ছেন সচেতনরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল একটি বেসরকারি টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিপক্ষে নালিশ চক্রান্ত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
প্রিয়া সাহার বক্তব্য দেশদ্রোহিতার শামিল বলে উল্লেখ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক একজন অধ্যাপক বলেন, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টায় প্রিয়া সাহার দেয়া বক্তব্য দেশদ্রোহিতার শামিল। তিনি যেহেতু এনজিও কর্মী ফলে তিনি বিশেষ কোনোভাবে লাভবান হতে বা আর্থিক সহায়তা পেতে দেশকে সহিংসরূপে উপস্থাপন করেছেন। তিনি যে তথ্য দিয়েছেন তা আমি নিজেও বাংলাদেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মেনে নেব না। সরকার প্রিয়া সাহাকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন করবে বলেই আমি আশাবাদী।
অপর দিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশি নারী সংখ্যালঘুদের নিয়ে যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন তা সঠিক নয় । শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশি নারী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়ানোর কথা জানিয়ে মিলার বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
এদিকে প্রিয়া সাহার বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আগামী ২০ জুলাই দুপুর ১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য এর সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ এর ডাক দিয়েছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ।