নিউজ ডেস্ক:
চীনকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিতে আরও উপায় খোঁজার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
গতকাল বিকালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-চীন কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিতে এবং শান্তি-নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে আরও বেশি উপায় বের করতে চাই। আগামী দিনগুলোতে দুই দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অংশীদারি মূল্যবোধ এবং মূল জাতীয় উদ্দেশ্যগুলোতে অভিন্নতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এবং চীন দুর্দান্ত সম্পর্ক উপভোগ করছে। বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নে চীনকে বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে।
কভিড-১৯ মহামারীর সময় সাম্প্রতিক ভ্যাকসিন উপহারসহ চীনের সহায়তা এবং চায়না কমিউনিস্ট পার্টি কর্তৃক আওয়ামী লীগকে চিকিৎসা সরঞ্জাম উপহারের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) মধ্যকার সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে যেসব সিপিসি নেতা অবদান রেখেছেন
তাদের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, সহস্রাব্দের বেশি আগে থেকে দুই দেশের মানুষের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ সিল্ক রুট দুই প্রাচীন জনপদের মধ্যে জ্ঞান, সংস্কৃতি ও বাণিজ্য প্রবাহের সুযোগ সম্পর্ককে বেগবান করেছে। ১৯৫২ এবং ১৯৫৭ সালে একজন তরুণ রাজনীতিক হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনের ঐতিহাসিক চীন সফরের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইয়ে সে সময় সিপিসির নেতৃত্বে উন্নত দেশ গঠনে চীনাদের উৎসাহ, প্রতিশ্রুতি ও গভীর বিশ্বাসের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার জন্য সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সুবিজ্ঞ নীতি এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে তার দেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। উচ্চমানের শিক্ষার মাধ্যমে মাত্র কয়েক দশকে চীন মহাকাশ থেকে ন্যানো প্রযুক্তি, রোবটিক্স থেকে অ্যাভিওনিক্স চীন বিস্ময়কর এবং অনুপ্রেরণামূলক অগ্রগতি লাভ করেছে। চীন বিশ্ব মানের পণ্য উৎপাদন ও সেবা প্রদান করছে। চীনের এই উন্নয়নের সুফল প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছেও পৌঁছেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, একই ভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মুক্ত ও স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়। বর্তমানে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার পথে এগিয়ে চলছে। আমরা আশা করছি, ২০৪১ সালের মধ্যে সব নাগরিকের জীবনে সমৃদ্ধি নিয়ে আসব। আমি বিশ্বাস করি দুটি দলের (সিপিসি এবং আওয়ামী লীগ) বড় ধরনের সহযোগিতা আমাদের নাগকিদের জন্য আরও উন্নতি নিয়ে আসবে।
লিঙ্গসমতার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : লিঙ্গসমতা অর্জনে বিশ্বনেতাদের সাহসী নীতিমালা ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জেনারেশন ইকুয়ালিটি ফোরাম, প্যারিস আয়োজিত ‘লিঙ্গসমতার জন্য প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন’ শীর্ষক অ্যাকশন কোয়ালিশন অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তায় এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে বিশ্বসম্প্রদায় নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সাহসী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে তার অনেকটিই পূরণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী রাজনীতি, অর্থনীতি এবং শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ উৎসাহজনক নয়। বর্তমানে সংসদ সদস্যের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ নারী। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় এখনো ৩১ শতাংশ কম। সাহসী নীতিমালা তৈরি ও সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের অবশ্যই এ পরিস্থিতি বদলাতে হবে।’ সাইবার প্ল্যাটফরমগুলোয় নারীদের নিরাপত্তা বাড়াতে গত তিন বছরে ৭১ হাজারের বেশি মেয়েকে সাইবার সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রযুক্তি স্টার্টআপ এবং ই-কমার্সসহ তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। নারীর ক্ষমতায়ন তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার জানিয়ে টানা তিনবারের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীদের তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে সংযুক্তির মাধ্যমে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন অর্থবহ হয়েছে। নারী আইটি প্রফেশনাল এবং দক্ষ নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকার বিভিন্ন বাস্তবভিত্তিক প্রকল্প চালু করেছে।