নিউজ ডেস্ক:
দুই দশক আগে থেকেই সুতা থেকে ফেব্রিক এবং ফেব্রিক থেকে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও এসব পণ্যের রপ্তানিতে ১৬ শতাংশ অপচয় সুবিধা পেতেন দেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা। তবে এখন তা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বেসিক আইটেমের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ, স্পেশালাইজড আইটেমের ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ এবং সু্যয়েটার ও মোজা জাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে তা ৩ শতাংশ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই যা প্রজ্ঞাপন আকারে জানাবে বাণিজ্যি মন্ত্রণালয়।
তবে এই অপচয়ের হার কমপক্ষে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করা উচিত বলে মনে করছে রপ্তানিকারক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তারা বলছেন, কোনো কোম্পানির অপচয় নির্ধারিত হারের চেয়ে কম হলে, তা খোলা বাজারে বিক্রি করে আরএমজি কারখানা মালিক লাভবান হলেও দেশীয় সুতা ও ফেব্রিক উৎপাদক কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অন্যদিকে, প্রকৃত অপচয় হারের তুলনায় সরকার নির্ধারিত হার কম হলে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের বাড়তি যে পরিমাণ অপচয় হয়, তা খোলা বাজারে বিক্রি হয়েছে কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কাঁচামাল অপচয় হয়েছে বলে ধরে নেয় কাস্টমস অডিট ডিপার্টমেন্ট। তখন বাড়তি অপচয় হওয়া কাঁচামালের ওপর সরকার নির্ধারিত শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক এবং ভ্যাট আদায় করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এতে রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এদিকে গত জানুয়ারিতে এই অপচয় হার বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ নির্ধারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)।
পরে প্রকৃত অপচয় হার বের করার জন্য রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো ২০টি কোম্পানির কাছে অপচয় হার জানতে চেয়ে চিঠি দিলে দুটি কোম্পানি তার জবাব দেয়। ৪০ শতাংশের এর বেশি অপচয় হয় বলে তারা জানায়। পরে প্রকৃত অপচয় হার কত- তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি বেসিক নিটওয়্যার, স্পেশালাইজড আইটেম এবং সু্যয়েটার ও মোজা উৎপাদন করে- এমন দুটি করে মোট ছয়টি কারখানা সরেজমিন পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে।
সুতা থেকে তৈরি পোশাক উৎপাদন পর্যন্ত কারখানায় ব্যবহৃত প্রযুক্তির ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন হারে অপচয় হয়ে থাকে। একই ধরনের কারখানায় অপচয় হার গড় করে তারা সর্বোচ্চ অপচয় রেট নির্ধারণের সুপারিশ করেছে।
এর মধ্যে বেসিক নিট আইটেম যেমন- টি-শার্ট, পোলো শার্ট, ট্রাউজার, শর্টস, স্কার্টস ও পায়জামাসহ এ ধরনের পণ্যে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ, স্পেশালাইজড আইটেম যেমন- রোম্পার্স, ট্যাঙ্ক টপ, ড্রেস, গাউন, হুডিস ও অন্তর্বাসের মতো আইটেমে সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ এবং সু্যয়েটার, জাম্পার, পুলওভার, কার্ডিগান, ভেস্টস ও সক্সের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ অপচয় সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির এক সদস্য জানান, কারখানাগুলোর ব্যবহৃত মেশিনের ধরনভেদে অপচয় হারে তারতম্য থাকায় গড় হার নির্ধারণ করে অপচয় হার নির্ধারণে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়েছে। ফলে কোনো কারখানার অনেক বেশি লাভবান হওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে রপ্তানিকারকরা জানান, অতীতে দেশে মূলত গোলাকৃতির সাধারণ টি-শার্ট উৎপাদন করত, সে সময় অপচয় হার ছিল। কিন্তু এখন নানান ধরনের সুতা ও ফেব্রিক দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন ও মানের নিটওয়্যার পণ্য উৎপাদন করা হয়, যেখানে অপচয় হার ২০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত। কিছু কিছু পণ্যে অপচয় হার আরও বেশি।
এ বিষয়ে বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কারখানাগুলোর প্রকৃত অপচয়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। কমপক্ষে ৩৫ শতাংশ হারে অপচয় সুবিধা নির্ধারণ করা হলে মেনে নেওয়া সম্ভব হতো।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুতা দেওয়ার প্রস্তাব করে বলেছি, এই সুতা দিয়ে যেকোনো কারখানায় ফেব্রিক এবং ফেব্রিক থেকে টি-শার্ট উৎপাদন করে তার ওজন মেপে দেখতে। কী পরিমাণ সুতা থেকে কী পরিমাণ তৈরি পোশাক উৎপাদন হয় এবং অপচয়ের হার কত, তা মন্ত্রণালয়কে যাচাই করতে বলেছি’।
এদিকে অপচয় হার বাড়িয়ে নির্ধারণের পাশাপাশি তা ব্যাকডেটে কার্যকর করার দাবি করেছিল বিকেএমইএ। তবে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, নতুন রেট ব্যাকডেটে কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।