মঙ্গলবার , ডিসেম্বর ২৪ ২০২৪
নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / আমিও তো পুরুষ মানুষ! আমার তো একটা চাহিদা রয়েছে, তাই দ্বিতীয় বিয়ে করেছি- স্বামী শফিকুল ইসলাম

আমিও তো পুরুষ মানুষ! আমার তো একটা চাহিদা রয়েছে, তাই দ্বিতীয় বিয়ে করেছি- স্বামী শফিকুল ইসলাম

বিশেষ প্রতিবেদক:
নাটোরের সিংড়ায় একাধিক বিয়ের প্রতিবাদ করা ও দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় মারপিটের পর এক কাপড়েই দুই কন্যা সন্তানসহ স্ত্রীকে বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দেন যৌতুকলোভী স্বামী শফিকুল ইসলাম লেবু। এরপর থেকে শফিকুল ইসলাম লেবু তার স্ত্রী সন্তানদের কোন খোজখরব নেন না। ভরণ পোষণ দেন না। এছাড়া ভুক্তভোগী গৃহবধূ শারমিন আক্তারকে আর স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে চান না স্বামী শফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি লেবু শারমিনকে ডিভোর্স লেটার পাঠালেও তাতে স্বাক্ষর করেননি শারমিন। এই অবস্থায় ২২ বছর পর কপাল পুড়ছে শারমিন আক্তার নামে (৩৬) নামের এক গৃহবধূর।

এই অবস্থায় স্ত্রী সন্তানদের নায্য অধিকার ফিরে পেতে আকুতি জানিয়েছে ওই গৃহবধূ ও তার দুই কন্যা সন্তান। ভুক্তভোগী শারমিন আক্তার নাটোরের সিংড়া উপজেলার হাতিয়ানদহ ইউনিয়নের আড়কান্দি গ্রামের মৃত কুরবান আলীর মেয়ে। এই ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হলে পিবিআইকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালের ২ নভেম্বর নাটোরের সিংড়া উপজেলার আরকান্দি গ্রামের মৃত জব্বার শেখের ছেলে শফিকুল ইসলাম লেবুর সাথে বিয়ে হয় শারমিন আক্তারের। দাম্পত্য জীবনে শায়লা শফিক স্বর্ণা (১৯) ও সানজিদা (১২) নামে তাদের রয়েছে দুই কন্যা সন্তান। ভুক্তভোগী অসহায় গৃহবধূ শারমিন আক্তারের অভিযোগ, শফিক স্ত্রী সন্তানদের নিজের কাছে রাখতেন না। স্ত্রী সন্তানরা গ্রামের বাড়ীতে থাকতেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২০০১ সালে দিকে শারমিন আক্তার সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় যান। সেখানে গিয়ে তারা পিংকি নামে দ্বিতীয় পক্ষের বউয়ের সাথে শফিককে অবস্থান করতে দেখেন। শারমিন দাবি করেন, শফিকের একাধিক বিয়ের প্রতিবাদ করা ও স্ত্রী-সন্তানদের অধিকার ফিরে পেতে চাইলে শারমিনের উপর নেমে আসে অকথ্য শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন।
পরবর্তীতে শফিক তার ভাই হাবিবুর রহমান, হাসেম আলী শেখ, সুজন আলী শেখ ও মা হালিমা বেওয়ার কুপ্ররোচনায় ও সহযোগীতায় শারমিন আক্তারের নিকট দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে। দাবিকৃত টাকা না পেয়ে তারা বিভিন্ন সময় শারমিন আক্তারের উপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে।

এরই এক পর্যায়ে ২০২৩ সালে ২০ এপ্রিল শফিকুল ইসলাম লেবু মারপিট করে এক কাপড়ে স্ত্রী সন্তানকে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেয়। এছাড়া ২৩ এপ্রিল একই দাবিতে শারমিনকে পুনরায় এলোপাতারি মারপিট, কিলঘুষি করে কালশিরা জখম করে। পরে শারমিন আদালতে অভিযোগ দায়ের করলে আদালত অভিযোগটি আমলে নেন।

পরে বিবাদী পক্ষ থেকে অপর একটি পাল্টা মামলা করে। আদালত পিবিআইকে তদন্তভার ন্যাস্ত করে। গত পহেলা জুন পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে প্রধান অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম লেবুর বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী শারমিন আক্তারকে একাধিক বিয়ে ও যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের সত্যতা প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের নির্ভরশীল তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়নি বলেও প্রতিবেদন বলা হয়।

ভুক্তভোগী শারমিন অভিযোগ করে জানান, ঘটনার পর শফিকুল আর তার সাথে ঘর সংসার করবে না বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এর কিছুদিন শফিকুল নাম মাত্র সন্তানদের নামে পাঠালেও এখন সেই টাকা পাঠানোও বন্ধ করে দিয়েছে শফিকুল। একাধিক বিয়ের প্রতিবাদ করাই আমার কপাল পুড়ছে। আমি ও আমার সন্তানদের ভবিষ্যত কি হবে? বাপের বাড়ী থেকে আমি তাদেরকে কিভাবে মানুষ করব। আমি নায্য অধিকার ও লেবুর শাস্তি দাবি করছি।

লেবু-শারিমন দম্পতির জেষ্ঠ্য কন্যা শায়লা শফিক স্বর্ণা জানান, আমার বাবা ও তার পরিবারের লোকজন অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির লোক। আমার বাবা এক কাপড়ে আমাদেরকে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে। আমি যোগাযোগের চেষ্টা করলে বাবা আমাকে তার মেয়ের পরিচয় দিতে ও যোগাযোগ করতে নিষেধ করেন। তাদের কারণে আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারিনি। আমাকে কোন প্রকার বই পত্র, পোষাক আশাক আনতে দেওয়া হয়নি। সার্বিক বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। একটা মানুষ কতটা অমানুষ হলে স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণ না দিয়ে একাধিক বিয়ে করতে পারে। আমি এর নায্য বিচার চাই।

ভুুক্তভোগীর চাচা অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ইসাহাক আলী জানান, আমার ভাতিজাকে যৌতুকের টাকার জন্য কয়েক দফায় নির্যাতন করা হয়েছে। পাল্টা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে বসেও বিবাদীদের অসহযোগীতার কারণে এর কোন সমাধান করা সম্ভব হয়নি। আমরা এর সুষ্ঠ সমাধান চাই।

ভুক্তভোগীর মা জুলেখা বেওয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, আমি গরীব মানুষ। মেয়ে-নাতনীর ভরণ পোষনের সামর্থ্য আমার নাই। আমার মেয়ের আর নাতনীর জীবন যাতে নষ্ট না হয়, তাদের আবার সুখে শান্তিতে থাকতে পারে এই প্রার্থনা। দয়া করে আপনারা আমার মেয়ে-নাতনীর একটা সদগতি করে দেন।

প্রতিবেশী রাবেয়া বেগম, হাজী সাহাবুল্লাহ, অর্চনা রানীসহ কয়েকজন জানান, শফিকুল ইসলাম লেবু ও তার পরিবারের লোকজন খুব বেপরোয়া। তারা যৌতুকের টাকার জন্য শারমিনকে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। লেবু তার স্ত্রী সন্তানদের কোন ভরণপোষণ দেয় না। শুনেছি লেবু একাধিক বিয়ে করেছেন। তার লোভের কারণে শারমিনের কপাল পুড়ছে। আমরা এর সুষ্ঠ সমাধান চাই।

প্রধান অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম লেবু জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পুন্ন মিথ্যা বানোয়াট। আমি কেবল দুটি বিয়ে করেছি। শারমিন আমার কোন কথা শুনতো না। আমি তো পুরুষ মানুষ। আমার তো একটা চাহিদা রয়েছে। তাই দ্বিতীয় বিয়ে করেছি। স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণ কেন বহন করেন না এমন প্রশ্নের জবাবে লেবু জানান, আমি সন্তানদের খরচ পাঠাই। আমি তাদের দায়িত্ব নিতে পারি কিন্তু শারমিনের না।

হাতিয়ানদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান জানান, স্থানীয় ভাবে শফিকুল ইসলাম লেবু ও শারমিন আক্তারের দাম্পত্য জীবনের সমস্যা সমাধানের জন্য বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু বাদী পক্ষ আমাদের উপর আস্থা না থাকায় তারা আদালতে মামলা দায়ের করেন। এছাড়া লেবুর একাধিক বিয়ের বিষয়টি জানেন না বলেও জানান তিনি।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবি আদিল খান জানান, পিবিআইয়ের দেওয়া প্রতিবেদন নিয়ে ভুক্তভোগী বাদী পক্ষের অসন্তোষ রয়েছে। আমরা আদালতে ‘না রাজি’ দিতে পারি। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিচারিক কার্যক্রম আরো সময় সাপেক্ষ হবে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নাটোরের এস আই উপ-পরিদর্শক সাইদুর রহমান জানান, আদালত কর্তৃক তদন্তভার পাওয়ার পরে এই ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন আদালতকে জমা দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে আদালতে মামলার বাদী পক্ষের ‘না রাজি’ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আরও দেখুন

নাটোরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বিষয়ক কর্মশালা

নিজস্ব প্রতিবেদক ,,,,,,,,,,,,,,,,,,বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ২০২৪-২০২৫ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ই- গভন্যাস ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ …