নিউজ ডেস্ক:
দেশের বাজারে আলু এখন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এরই মধ্যে সরকারের অনুমতিতে আলু আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, আমদানি করা আলু ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। এদিকে রাজধানীতে সবজির দাম কিছুদিন ধরে বাড়তি থাকলেও এখন কমতে শুরু করেছে।
তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চাল কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে যে সবজি ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল তা এখন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মিনিকেট ও মোটা চালের দাম কেজিতে দুই থেকে চার টাকা বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯০ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে দেশে প্রথমবারের মতো দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আলু দেশে ঢুকতে শুরু করেছে।
গতকাল দুপুর ২টার দিকে আলুবোঝাই সাতটি ট্রাক দেশে প্রবেশ করে। প্রতি মেট্রিক টন আলু আমদানিতে খরচ হচ্ছে সাড়ে ১৪ হাজার থেকে সাড়ে ১৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে প্রতি কেজি আলুতে যুক্ত হবে ৩৩ শতাংশ শুল্ক।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক মাহাবুব হোসেন জানিয়েছেন, ভারত থেকে আমদানি করা আলু বাংলাদেশে সব খরচসহ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা সম্ভব হবে।
হিলি পোর্ট উপসহকারী কর্মকর্তা ইউসুফ আলী জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৩৫ জন আমদানিকারক প্রায় ২৭ হাজার মেট্রিক টন আলু আমদানির অনুমতি পেয়েছেন।
সবজির বাজারের উত্তাপ কমছে
গত সপ্তাহের তুলনায় গতকাল সবজির দাম কিছুটা কমতির দিকে ছিল। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি সবজির দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ছিল। এখন কমে বেশির ভাগ সবজিই ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খুচরায় প্রতি কেজি কালো বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা। সাদা বেগুন ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ টাকা কেজি। একইভাবে দাম কিছুটা কমে পটোল ৬০ টাকা কেজি, পেঁপে ৩০ টাকা কেজি, ঝিঙা ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
হাঁসের ডিম ডজনে বাড়ল ৩০ টাকা
কারওয়ান বাজারের প্রায় সব দোকানেই ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। লাল কক জাতের মুরগি ৩২০ টাকা কেজি, লাল লেয়ার ৩৫০ টাকা কেজি, দেশি মুরগি ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে মুরগির লাল ডিম ডজনে পাঁচ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা ডজন, সাদা ডিমও ৫ টাকা কমে ১৪০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় এদিন হাঁসের ডিমের দাম ডজনে ৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ২৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাঝারি আকারের রুই মাছ ৩৬০ টাকা কেজি, পাবদা ৪৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, মাঝারি আকারের চিংড়ি ৭০০ টাকা কেজি, কাচকি ৪৫০ টাকা কেজি, সরপুঁটি ২২০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া আকারভেদে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
অবরোধে চালের দাম বাড়তি
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিনিকেট ও মোটা চালের দাম প্রতি কেজিতে দুই থেকে চার টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, গত সপ্তাহে বিআর আটাশ চাল ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে ৫০ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল ছিল ৪৬ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে তা বেড়ে ৬২ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে আসা শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘চালের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। বাড়ি থেকে যে টাকা নিয়ে আসি সেটা দিয়ে খাবার খরচ, বাসাভাড়া ও হাত খরচ চালানো খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চাল ব্যবসায়ী মো. আবদুল আওয়াল তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হরতাল আর অবরোধের কারণে মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছেন। এখন চালের গাড়ি কম আসতেছে। সামনে অবরোধ হলে দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা আছে।’
সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রিতে তৎপরতা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি শুরু করেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন। গতকাল দুপুরে ট্রাকসেলে ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন। একইভাবে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী ট্রাকের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রির ব্যবস্থা নিয়েছেন। একই সঙ্গে অন্য কর্মকর্তাদের জেলার হিমাগারগুলোতে থাকা আলু সরকার নির্ধারিত পাইকারি ২৬-২৭ টাকা এবং খুচরা ৩৫-৩৬ টাকা দরে বিক্রির জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম কেউ যদি সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না করে তাহলে হিমাগার সিলগালা করে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাফর আরিফ চৌধুরী।