নিজস্ব প্রতিবেদক, সিংড়া:
নাটোরের সিংড়ায় এক সংখ্যালঘু বিধবাকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ করেছেন ওই বিধবা মহিলা। গত শনিবার উপজেলার চামারী ইউনিয়নের পাংগাশিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয়ভাবে আয়োজিত এক সালিশ-বৈঠকে অভিযুক্তকে চড় থাপ্পড় মেরে ১২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ওই ভুক্তভোগী নারীর পরিবার।
গত শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার পাংগাশিয়া গ্রামে ওই সংখ্যালঘু বিধবা নারীর (৫০) ঘরে প্রবেশ করে ধর্ষণ চেষ্টা চালায় শিবপুর এলাকার এবরার ছেলে মুক্তার হোসেন। ঘটনায় মহিলার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে মুক্তারকে ধরে ফেলে। পরের দিন এ বিষয়ে একটি সালিশ বৈঠক ডাকা হয়। সালিশে অভিযুক্ত মুক্তার কে ১২ টাকা জরিমানা করা হয় এবং সবার সামনে চড় থাপ্পড় মেরে বিদায় করা হয়। কিন্তু এমন একটি অপরাধে এভাবে প্রভাবশালীদের সালিশ বৈঠক করার এক্তিয়ার নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
এব্যাপারে সালিশকারীদের একজন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাজাহান মোল্লা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, সালিশ বৈঠক হয়েছে এটা আমি দেখেছি তবে আমি এর আয়োজক নই। বা এর কোনো সিদ্ধান্ত আমি দেইনি। টাকা দিয়ে চড় থাপ্পর দিয়ে মিমাংসা করার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, কেউ বলতে পারবেনা যে আমি তাকে চড়-থাপ্পড় দিয়েছি বা কোন মীমাংসা করে দিয়েছি।
ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিং এর সভাপতি ও সাবেক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বায়জীদ হোসেনকে টাকা দিয়ে চড় থাপ্পড় দিয়ে মীমাংসা করে দেয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, যে ঋষিপাড়ার সমাজের লোকজন এটা করেছে আমরা এর সাথে সম্পৃক্ত নই।
আরো একজন অভিযুক্ত সালিশকারী কমিউনিটি পুলিশিং এর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রতনকে এই শালিস বৈঠকের ব্যাপারে বা মীমাংসা করে দেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, ঋষি পাড়ার লোকজন আমাকে ডেকেছিল। আমি তাদের উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। অভিযুক্তের প্রতিনিধি এবং অভিযোগকারীর প্রতিনিধি এবং ওই ঋষিপাড়া সমাজের শীতল দাসসহ লোকজনের প্রতিনিধি তারাই এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে আমরা কোন সিদ্ধান্ত দিইনি। অভিযুক্ত সালিশ কারীরা সবাই বিষয়টি অস্বীকার করলেও ঋষি পাড়া সমাজের প্রতিনিধি শীতল দাস এর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন ঘটনার শিকার ওই বিধবা নারী এবং তার প্রতিবন্ধী বোন মিলে পাংগাশিয়া গ্রামে বসবাস করেন। তাদের ভাইয়েরা ঢাকায় থাকে। এখানে তাদের দেখার মত কেউ নেই। এই সুযোগে মোক্তার হোসেন তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। কেউ কেউ বলেছেন তাদের একা থাকার সুবাদে এর আগেও এইরকম একটি ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ ছিল।
চামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম মৃধা জানান, এইভাবে এমন একটি জঘন্য অপরাধের সালিশ বৈঠক করার এক্তিয়ার কারোরই নেই। এটি সম্পূর্ণ আইন-আদালত এক্তিয়ার। আমি চাই অভিযুক্ত মুক্তার এর কঠোর শাস্তি হোক।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, তিনি কিছুক্ষণ আগেই মোবাইল ফোনে এমন একটি অভিযোগ পেয়েছেন এবং অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য গত মাসে চামারী ইউনিয়ন এ এমনই একটি ধর্ষণচেষ্টার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সালিশ বৈঠক করে জরিমানা আদায় করে এবং চড় থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেয়ায় ওয়ার্ড সদস্য ফারুক হোসেন এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন কে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।