নিজস্ব প্রতিবেদক:
আন্তর্জাতিক মানের দুই লাখ গাড়ি চালক তৈরি করার জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইআইপি) আওতায় বিএমইটি দেশের ৬১টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারসহ (টিটিসি) ৬৪ জেলায় ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেবে। পর্যায়ক্রমে দুই লাখ গাড়ি চালক তৈরি করা হবে। চলতি বছর ৫২ হাজার চালক তৈরির টার্গেট ছিল। কিন্তু করোনার কারণে এদের প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হয়নি। ড্রাইভিং শিখতে আগ্রহীদের কাছ থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ৬৪ জেলায় প্রথম পর্যায়ে কর্মী নিবন্ধন কাজ শেষ করেছে বিএমইটি। তবে নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। তিন বছর মেয়াদে প্রকল্পে ব্যয় হবে ২শ’ ৬৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এ তথ্য জানিয়েছেন বিএমইটির ডিজি মোঃ শামছুলআলম। বিএমইটি ডিজি শামছুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, করোনার কারণে প্রকল্পটিকে সি ক্যাটাগরিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কিছু অর্থ ছাড় করেছে। যে টাকা দিয়ে এখন আমরা প্রশিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। প্রগতির কাছ থেকে ট্রেনিং গাড়ির জন্য আমরা চিঠি লিখেছি। অদক্ষ কর্মী পাঠানোর চেয়ে দক্ষ কর্মী পাঠানো হলে বিদেশে চাকরির নিশ্চয়তা বেশি। তারা অদক্ষ কর্মীর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকায় চাকরি পবেন।
বিএমইটি জানিয়েছে, দেশে ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে ৪৩ ধরনের কাজের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ড্রাইভিং ট্রেনিংয়ের বিষয়ে এবারই প্রথম। কারণ বিদেশে গাড়িচালকদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ বছর যারা ড্রাইভিং শিখে বের হবেন তার একটি বড় অংশ বিদেশে কর্মসংস্থান হবে মনে করেন স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের কর্মকর্তারা। বিএমইটি প্রতিটি টিসিসিতে ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং গাড়ি দেয়ার জন্য সরকারী কোম্পানি প্রগতির কাছে চিঠি লিখেছে। যারা প্রশিক্ষণ নেবেন তাদের দক্ষ চালক হিসেবে তৈরির পাশাপাশি গাড়িগুলো যাতে কমপক্ষে পাঁচ বছর সচল থাকে তা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। বিএমইটির কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ চালক হিসেবে যাতে বিদেশে গিয়ে তারা ভাল বেতনে চাকরি পেতে পারবেন। ফলে তারা দেশে রেমিটেন্স বেশি পাঠাতে পারেন সে দিকে নজর দিতে হবে। এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ড্রাইভারের বেশি চাহিদা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ‘লেফট হ্যান্ডেড ড্রাইভিং’। বিষয়টি মাথায় রেখে ড্রাইভিং শেখাতে হবে। তাই যারা প্রশিক্ষণ নেবে তাদের ওই দেশের জন্য উপযোগী (লেফট হ্যান্ডেড ড্রাইভিং) হিসেবেই গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশে ‘রাইট হ্যান্ডেড ড্রাইভিং’ এখানকার ট্রেনিং নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে যাওয়ার পর যেন তাদের ফের প্রশিক্ষণের জন্য আরও ছয় মাস নষ্ট না হয়। এ বিষয়টি খেয়াল রেখেই লেফট হ্যান্ডেড ড্রাইভিং শেখানো হবে। টিটিসিগুলোতে বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতা ও চাহিদার আলোকে নতুন নতুন ট্রেড যুক্ত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে পৃথিবীতে দক্ষ কর্মীর বিকল্প নেই। অদক্ষ কর্মী কয়েক লাখ পাঠিয়ে যে রেমিটেন্স আসবে দক্ষ কর্মী ৫০ হাজার পাঠিয়ে সেই রেমিটেন্স আসবে। তাই মন্ত্রণালয় দক্ষ কর্মী তৈরিতে টিটিসিগুলোতে এই গাড়ি সরবরাহ করেছে। টিটিসির অধ্যক্ষদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আপনারা দক্ষ চালক তৈরিতে সচেষ্ট থাকবেন। মান নিয়ে যেন কোন কথা না হয়। শুধু চালক নয়, অন্যান্য ট্রেড বা কাজের জন্যও দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি ইংরেজী ও আরবি ভাষা প্রশিক্ষণকেও গুরত্ব দিতে হবে। কারণ ভাষাটা এখন গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সরকারীভাবে বিদেশ যেতে আগ্রহী কর্মীদের দেশব্যাপী নিবন্ধন শুরু কাজ হয়েছিল। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। সারাদেশ থেকে নিবন্ধনকৃতদের তথ্য কেন্দ্রীয় ডাটা ব্যাংকে জমা করেছে। দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক দক্ষ, স্বল্প দক্ষ, অদক্ষ ও পেশাজীবী নারী-পুরুষ অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারছেন। আগ্রহীরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে (বিকাশ/নগদ/শিওরক্যাশ/রকেট) ২০০ টাকা পাঠিয়ে নিবন্ধিত হতে পারবেন। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বছরে প্রতি উপজেলা থেকে এক হাজার কর্মীকে বিদেশে পাঠানোর কথা রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সরকারীভাবে বিদেশে কর্মী পাঠাতে গত বছরের ১ আগস্ট ঢাকা জেলায় নিবন্ধন কাজ শুরু হয়। পরে ২৭ অক্টোবর শুরু হয় নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার। চলতি বছর ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের ৬৪ জেলার নিবন্ধন শেষ করে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য প্রথম ধাপে ৫২ হাজার নিবন্ধনকারীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে এটা করা সম্ভব হয়নি। তবে ডিসেম্বর থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হবে। নিবন্ধনকারীর যোগ্যতা হিসেবে কর্মীর বয়স অবশ্যই ১৮ বছরের ওপরে হতে হবে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে নারী গৃহকর্মী হিসেবে যেতে ইচ্ছুকদের বয়স ২৫-৪৫ বছরের মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। নিবন্ধনকারীর অন্তত ছয় মাসের বৈধ পাসপোর্ট এবং নিজস্ব মোবাইল ফোন থাকতে হবে। নিবন্ধনের আপডেট তথ্য মাঝে মাঝে তাকে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে কর্তৃপক্ষ। যাতে ওই কর্মীর কোন সন্দেহ সৃষ্টি না হয়।