নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের চার শিক্ষার্থীর আন্তর্জাতিক সাফল্য: মাহসা বিশ্ববিদ্যালয় ও আইওয়াইএসএ আয়োজিত প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জয় বাংলাদেশের চারজন প্রতিভাবান শিক্ষার্থী। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যের নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। মালয়েশিয়ার মাহসা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্দোনেশিয়ান ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইওয়াইএসএ) যৌথভাবে আয়োজিত ৬ষ্ঠ ওয়ার্ল্ড ইনভেনশন কম্পিটিশন অ্যান্ড এক্সিবিশনে তারা স্বর্ণপদক এবং একটি বিশেষ পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ১৫টি দেশের প্রায় ৩০০ উদ্ভাবক দল অংশ নেয়।
প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন মো: ত্ব-সীন ইলাহি(হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়), এল.এম. মাহির লাবিব (ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ), এম ডি আব্দুস সিয়াম (হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) এবং আহনাফ শাহরিয়ার (হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়)। দলের পরামর্শক হিসেবে ছিলেন ইয়াহইয়া আহমেদ শরীফ (মেন্টর ও লেকচারার, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ) তারা ‘Safe Driving System 2.0’ নামের একটি প্রজেক্ট উপস্থাপন করে সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণ করেন। তাদের উদ্ভাবনী প্রকল্পটি পরিবহন খাতে নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস এবং নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
প্রতিযোগিতার আইটি এবং রোবটিক্স বিভাগের এই প্রজেক্টের জন্য দলটি স্বর্ণপদক অর্জন করে। এছাড়া, তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাধারা এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের জন্য বিশেষ পুরস্কার হিসেবে ‘Malaysia Innovation Invention Creativity Association (MIICA)’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
Safe Driving System 2.0 Project
Safe Driving System 2.0 প্রজেক্টটি মূলত চালকদের জন্য একটি উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যা সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। প্রজেক্টটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো চালকদের সতর্ক করা এবং যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া প্রদান। উদ্ভাবনটির পেছনে থাকা দলটি এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য উদ্ভাবনী চিন্তা ও দক্ষতা প্রয়োগ করেছে।
প্রজেক্টটির মাধ্যমে তারা দেখিয়েছেন কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানবজীবনের সুরক্ষা বৃদ্ধি করা সম্ভব। প্রজেক্টটি বিশেষত বাংলাদেশের মতো দেশে সড়ক দুর্ঘটনার উচ্চ হার কমানোর লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
প্রতিযোগিতার গুরুত্ব ও প্রভাব
ওয়ার্ল্ড ইনভেনশন কম্পিটিশন অ্যান্ড এক্সিবিশন একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চ, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদ্ভাবকরা তাদের সেরা উদ্ভাবনী ধারণা এবং প্রযুক্তি প্রদর্শন করেন। প্রতিযোগিতাটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে উদ্বুদ্ধ করা। বাংলাদেশি দলের এই অর্জন প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে সক্ষম।
এই প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জয় বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের বিষয় এবং দেশের শিক্ষা এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী উদ্যোগকে আরো শক্তিশালী করবে। এটি দেশের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী মনোভাবকে আরও উৎসাহিত করবে এবং ভবিষ্যতে আরও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পথ খুলে দেবে।
বাংলাদেশি দলের সাফল্য
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এই সাফল্য দেশের প্রযুক্তি খাত এবং শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দলের মেন্টর ইয়াহইয়া আহমেদ শরীফ বলেন, “এই ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা ও দক্ষতা প্রমাণ করার সুযোগ পায়। এটি তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।”
এই সাফল্য তরুণ উদ্ভাবকদের বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আরও অনুপ্রাণিত করবে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।
সার্বিক সহযোগিতা করেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী আনোয়ার শাহাদাত।