মানুষ সামাজিক জীব। জন্মের পর অন্য যে কোনো জীবের চেয়েও তারা অসহায়। কিন্তু এই মানুষই সেই প্রাণি যার চেতনা রয়েছে। আর ক্রমশ শিক্ষা-দীক্ষা, চেতনা ও অধিকারবোধ তাকে তৈরি করে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মুক্ত মানুষে।
তবে একটা সময় যখন দাস প্রথা চালু ছিলো যখন কিছু মানুষের ইচ্ছার কোনো মূল্য ছিল না। সে সব নিপীড়িত মানুষের কাছ থেকে জোর করে শ্রম দিতে বাধ্য করা হত। এছাড়াও পণ্য হিসেবে এখন যেমন বিভিন্ন পন্য কিনি তখন মানুষ কেনাবেচা করা হত। এইসব অধিকারহীন মানুষ ছিল ক্রীতদাস।
ইতিহাসে দাস ব্যবসার ইতিহাস অনেক পুরনো। মানব সভ্যতার প্রস্তর যুগ থেকেই দাস প্রথার প্রচলন। ১৬০০ থেকে ১৯০০ শতাব্দীতে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। এবং এই সময় ‘ট্রান্স-আটলান্টিক’-এর দাস ব্যবসা গড়ে ওঠে। এই প্রথার প্রচলন ছিল ৪০০ বছর পর্যন্ত। এ সময়ে কোটি কোটি মানুষ এর শিকার হয়েছিল।
এই দাসদের দ্বারা কৃষিকাজ, ঘরের কাজ, পাথর ভাঙা, চাষ-বাসসহ এমন কোনো কাজ ছিল না যেগুলো তাদের করতে হতো না। তার সাথে ছিল, নির্মম শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। এমন কি মালিক তার দাসকে খুন করেও ফেলতে পারত। দাসের পরিবারের সবাইকে মালিক তার ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারত।
মূলত, অর্থ-বিত্ত, বর্ণবাদ, জাতিগত বৈষম্যের ফসল এই দাস প্রথা। এরকম অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত কাজের বিরুদ্ধে ১৭৯১ সালের ২২ ও ২৩ অগাস্ট বর্তমান হাইতি ও ডমিনিকান রিপাবলিক অঞ্চলে এ প্রথার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। এবং এর প্রেক্ষিতে ১৮০৭ সালে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র, ১৮০৮ সালে তাদের আফ্রিকান দাসদের মুক্তি দেয়।
১৮৩৩, ১৮৪৮ ও ১৮৬৫ সালে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র আইন করে দাসপ্রথা লোপ করে। পাশাপাশি ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশ একাত্মতা ঘোষণা করে।
দাসপ্রথা বিলুপ্তির ঐতিহাসিক বিপ্লব স্মরণে ২০০৭ সালের ২৩ অগাস্ট লিভারপুলে, আন্তর্জাতিক দাস জাদুঘরের কাজ শুরু করে। আর এ ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে ইউনেস্কো-র উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী ২৩ অগাস্ট দাস ব্যবসা ও প্রথা বিলুপ্তির আন্তর্জাতিক স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।