নিজস্ব প্রতিবেদক
আকাশে খন্ড খন্ড মেঘের ভেলা অন্যদিকে কাশ ফুলে ঝিরঝিরে বাতাসের দোলা। এতেই অনুমেয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা সমাগত।
শনিবার প্রাতঃকালে মহালয়া পর্ব শুরু হয়েছে। দেবী দুর্গা ঘোটকে (ঘোড়া) বাহন করে এসেছেন মর্ত্যলোকে। তাঁর আগমনকে ঘিরে তাই এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন পাল পাড়ার প্রতিমা শিল্পীরা এবং পূজা সংশ্লিষ্ট কর্মীরা। কঠোর শ্রম আর শৈল্পিক শ্রদ্ধায় তৈরি করেছেন একেকটি প্রতিমা। তবে উপকরণ মূল্য বৃদ্ধি অন্যদিকে ঐতিহ্যগত ভাবে পেশা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ভক্তি-ভালোবাসার কারণে ছাড়তে পারেননা এই পেশা। পূজা ঘনিয়ে আসায় শেষ মুহূ্র্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত নাটোরের প্রতিমাশিল্পীরা।
নাটোরের ৭ টি উপজেলায় এবার ৩৭৭টি মন্দির এবং মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
শ্রাবণে জগন্নাথ দেবের রথ উৎসববের দিন থেকেই প্রতিমা তৈরি শুরু করেছেন কারিগররা। কাদামাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরীর প্রাথমিক কাজ এখন শেষ হয়েছে। আজ মহালয়ার পর রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমা পাবে দৃষ্টিনন্দন রূপ। বছরের অন্য সময়ে ব্যস্ততা কম থাকলেও এখন দম ফেলার ফুরসত নাই শিল্পীদের।
বাড়ির মহিলা -পুরুষ,ছেলেরা সবাই হাত লাগান এই কাজে। দিন-রাত পরিশ্রম করে দেবী দুর্গার সাথে গড়ে তুলছেন কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মূর্তি। উপকরণের দাম বৃদ্ধির অনুপাতে বাড়েনি প্রতিমার মূল্য। আর্থিকভাবে তেমন একটা লাভবান না হওয়ায় নতুন প্রজম্মকে টানছে না এ পেশা। আর যারা এখনো টিকে আছেন তারা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থেকেই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে মন্দির-মন্ডপের সাজসজ্জাও চলছে জোরে সোরে। ডেকোরেটরের কর্মীরাও দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এই পরিশ্রম সার্থক হবে বা ক্লান্তি মুছে যাবে যখন দর্শনার্থীরা অপলক দৃষ্ঠিতে অবলোকন করবেন তাদের কাজ।
এ প্রসঙ্গে নাটোরের পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উমা চৌধুরী জলি জানিয়েছেন, নাটোর জুড়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের সকল ব্যবস্থাপনাগত প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আশা করছেন প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক মহা মিলনোৎসবের মধ্য দিয়ে নাটোর দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে।
আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সহ প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালীর প্রাণের উৎসব সার্বজনীনভাবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই উৎসবমুখর ভাবে পালন করার আশা ব্যক্ত করেন।
পঞ্জিকা মতে ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে মর্ত্যলোকে দেবীর আগমনী বার্তা বেজে উঠবে। আর ৮ অক্টোবর দশমী বিহীত পূজা ও বিষর্জনের মধ্যে দিয়ে ঘটবে এ পূজার সমাপ্তি।