নিউজ ডেস্ক:
প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পরে অত্যাধুনিক করে গড়ে তোলা হচ্ছে কক্সবাজারে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটিকে। মহাসড়ক থেকে পার্কে প্রবেশের মূল গেট পর্যন্ত এলাকার আশপাশে বেদখল বনভূমি উদ্ধার করে তৈরি হচ্ছে বাস-মাইক্রোবাস এবং মোটরসাইকেলের আলাদা পার্কিং। পার্কিংয়ের লাগোয়া পূর্বপাশেই গড়া সাদা উড়ন্ত পায়রা হাতে বঙ্গবন্ধুর মুরাল এলাকাটি সম্প্রসারণ করে গড়া হচ্ছে সবুজের আবরণ, ফুল বাগান। পার্কের দক্ষিণে পিকনিক স্পটের লাগোয়া পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম লেক।
পার্কের বাঘ-সিংহ ও তৃণভোজী প্রাণীদের জন্য তৈরি হচ্ছে সাফারি। বাঘ-সিংহের জন্য শত একর জমির আলাদা সাফারি ও জেব্রা, গয়াল, হরিণসহ অন্যপ্রাণীদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে কয়েক শ একর এলাকা। বেষ্টনী অনুসারে সাফারির চারপাশে তৈরি হচ্ছে নিরাপদ পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ পথ। গড়া হচ্ছে প্রবেশ-বাহিরের জন্য স্বয়ংক্রিয় ফটক, যান চলাচলে উপযুক্ত পাকা সড়কও। বাঘ-সিংহসহ হিংস্র প্রাণী বনে মুক্ত করে দেওয়া হলে খাঁচাযুক্ত গাড়িতে দর্শনাথীর্রা সংশ্লিষ্ট বেষ্টনীতে ঢুকে বিচরণরত বাঘ-সিংহ অবলোকন করবেন।
আবদ্ধ এবং উন্মুক্ত প্রাণিকূলের এক বেষ্টনী হতে অন্য বেষ্টনী পর্যন্ত সহজে যেতে তৈরি হচ্ছে সংযোগ সড়ক। অতিরোদ পড়া বেষ্টনীগুলো ছায়া ঘেরা পরিবেশে স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে। চলছে অবকাঠামো তৈরির কর্মযজ্ঞ।
তথ্যমতে, পার্কে ১৯টি বেষ্টনীতে সংরক্ষিত আছে নানারকম প্রাণী। কঠোর নিরাপত্তায় পালিত হচ্ছে হাতি, বাঘ, সিংহ, জলহস্তি, গয়াল, আফ্রিকান জেব্রা, ওয়াইল্ডবিস্ট, ভাল্লুক, বন্য শূকর, হনুমান, ময়ূর, স্বাদু ও নোনা পানির কুমির, সাপ, বনগরুসহ দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির প্রাণী। পার্ক জুড়ে রয়েছে চিত্রা, মায়া, সম্বর ও প্যারা হরিণ। রয়েছে জানা-অজানা বিচিত্র ধরনের কয়েক শ ধরনের পাখি। পার্কে দেখা মেলে কালের সাক্ষী বিশালাকার দুর্লভ ও মূল্যবান বৃক্ষরাজির। সে সব গাছে বানরের লাফালাফি নজর কাড়ে দর্শনাথীর্দের। এসব দৃশ্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দর্শনার্থীরা। পার্কের প্রাণিকূলের চিকিত্সার জন্য রয়েছে হাসপাতাল। সেখানে সার্বক্ষণিক থাকছেন প্রাণী চিকিৎসক।
সাফারি পার্কের ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রথম সাফারি পার্ক ডুলাহাজারা। মূলত সাফারি পার্ক শিক্ষাথীর্ ও প্রকৃতি গবেষকদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সহায়ক। সাফারি বলতে, পার্কে থাকা প্রাণীগুলো উন্মুক্ত থাকবে, আর দর্শনাথীর্রা থাকবে খাঁচায় আবদ্ধ। চলন্ত গাড়িতে ঘুরে তারা বন্যপ্রাণী দেখে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ করবেন। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো সেভাবে সাফারি পার্ক গড়ে তোলা যায়নি। তিনি বলেন, আমরা দক্ষিণ এশীয় পদ্ধতিতে পার্ক চালাচ্ছি। পার্কে থাকা প্রতিটি প্রাণীর জন্য আলাদা বেষ্টনী রয়েছে। রয়েছে আলাদা খাবার সংরক্ষণ ও প্রাণীদের পরিচর্যার ব্যবস্থা। রয়েছে নিরাপত্তাকর্মী। প্রতিষ্ঠার দুই যুগে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কটি এ অঞ্চলের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার বেড়ানো এবং বিনোদনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে বার্ষিক পিকনিক করতে আসছে অনেক শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তাই পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হচ্ছে নতুন করে।
মাজহার আরো বলেন, অনেক বছর বাঘ-সিংহকে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমরা সত্যিকারের সাফারি পার্ক করার উদ্যোগ নিয়েছি। বাঘ-সিংহ ও অন্য প্রাণীগুলো সম্পূর্ণ মুক্ত করে বিচরণের ব্যবস্হা করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব কাজ দ্রুতগতিতে এগুচ্ছে। আগামী বছরের শেষের দিকে আমরা সে লক্ষ্য ছুঁতে পারব বলে আশা করছি।