নিউজ ডেস্ক:
দেশের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গিবাদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত, যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মামলা রয়েছে; এমন ব্যক্তিদের ‘ডি রেডিক্যালাইজেশন’-এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে আত্মসমর্পণ করাতে পেরেছে পুলিশের বিশেষ বাহিনী এলিট ফোর্স র্যাব। ২০১৬ সাল থেকে আট বছরে ৩১ জনের মধ্যে জঙ্গি সম্পৃক্ততায় আত্মসমর্পণের তালিকায় নারী সদস্যও রয়েছে। আত্মসমর্পণের পর তাদের অপরাধ অনুযায়ী আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আবার কাউকে পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে র্যাব।
সংস্থাটি বলছে, আত্মসমর্পণের পরও যারা বাইরে রয়েছে জঙ্গিবাদের সঙ্গে আবারও জড়িয়ে পড়া ঠেকাতে নজরদারি রাখা হয়েছে। এছাড়া কেউ যদি জঙ্গি কার্যক্রম থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য যাচাই-বাছাই করে ডি রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ চলমান রয়েছে। একাধিক র্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
র্যাব বলছে, জঙ্গিবাদ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য ২০১৬ সালে প্রথম বগুড়ায় দুই জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পথ সৃষ্টি করে র্যাব। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর বগুড়ায় দুই জঙ্গি আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ওই বছরেরই ২৩ নভেম্বর রংপুরে তিন জন ও ১৫ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় একজন, ২০১৭ সালের ৫ মার্চ সিরাজগঞ্জে একজন এবং ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি উত্তরা র্যাব সদর দফতরে ৯ জন জঙ্গি সদস্য আত্মসমর্পণ করে।
এছাড়া, ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে চার জঙ্গি সদস্য আত্মসমর্পণ করে। একই বছরের ৫ অক্টোবর উত্তরা র্যাব সদর দফতরে একজন, ৮ নভেম্বর উত্তরা র্যাব সদর দফতরে একজন এবং সব শেষ ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি র্যাব সদর দফতরে ৯ জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, সরাসরি জঙ্গি সম্পৃক্ততায় যুক্ত হয়ে পরবর্তী সময়ে যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়, তারা র্যাব সদর দফতরে ই-মেইলের মাধ্যমে আত্মসমর্পণের বিষয়টি অবহিত করতে পারছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা করে তাদের ডি রেডিকালাইজেশন প্রোগ্রামের আওতায় এনে, তার সব বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। জঙ্গিবাদের সঙ্গে কতটুকু সম্পৃক্ত, পরবর্তী সময়ে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হয়। আবার র্যাবের কার্যক্রম কী ধরনের এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাওয়াদের পাঠানো হয় কিনা; এসব বিষয়ও কঠোরভাবে মনিটরিং করা হয়। যদিও শুরুর দিকে এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, একদিকে কাউন্সিলিং অন্যদিকে সরকারের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিদের সমাজে পুনর্বাসিত করার জন্য তাদের ডিরাইজেলাইজেশন করা হচ্ছে। এই উদ্দেশ্যে শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা এবং র্যাব সদস্যদের নিয়ে একটি টিমও গঠন করা হয়েছে। পুনর্বাসনের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৫ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদানের পাশাপাশি ট্রাক্টর, গরুর খামার ও বাই-সাইকেল সহায়তা দেয় র্যাব।
র্যাবের গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বয়স বিবেচনায় কম বয়সে যারা জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের বিষয়গুলোও কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। বিশেষ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নিখোঁজ ৫৫ কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ৪৫ জনের মত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে এ ঘটনার যখন সূত্রপাত ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ ৮ শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের ডিরেটিক্যালাইজেশন করে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে যারা আত্মসমর্পণ করতে চায় তাদের সব ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা হয় না গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যারাই জঙ্গি সংগঠন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায় র্যাবের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়। এমনকি পুনর্বাসনও করা হচ্ছে, আর্থিকভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। জঙ্গিবাদের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত তার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে পরবর্তী সময়ে আত্মসমর্পণ করতে চাওয়া সদস্যদের ডিরেটিক্যালাইজেশনের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশ্বাস পেলেও পরে যেন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে না পারে, সে বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখা হয়।
তিনি বলেন, ‘ডিরেডিকালাইজেশন শেষে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নারী সদস্যও রয়েছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার সদস্য এবং হোহলি আর্টিজোন হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ২ হাজার জঙ্গিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।’
যে মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করতে পারছে জঙ্গিরা
জঙ্গিবাদের পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য জঙ্গি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিংবা তার পরিবারের সদস্যরা র্যাবের সহায়তা নিতে চাইলে [email protected]এই ইমেইল অ্যাড্রেসে যাবতীয় তথ্য দিয়ে মেইল করার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য খতিয়ে দেখে র্যাব কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এছাড়াও এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ জনের মত জঙ্গি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য র্যাবের সহায়তা কামনা করেছে এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে খতিয়ে দেখছে কর্মকর্তারা।
২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১২৪টি অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ১৮৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। যার মধ্যে সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়তুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৬৮ জন, কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)১৭ জন ও জেএমবি ২৯ জন রয়েছে।