প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফরে আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন
একটি ধারা উন্মোচিত হয়েছে। এটি হচ্ছে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের
উত্থান। এই তো গত বছরই দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির দেশ
হিসেবে ভারতকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার ভারতের জনপ্রিয় সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট রেডিফ ডটকমে প্রকাশিত ‘দ্য
রাইজ অ্যান্ড রাইজ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়। ভারতের
সাবেক কূটনীতিক এম কে ভদ্রকুমারের লেখা নিবন্ধে বলা হয়, শেখ হাসিনা
বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’ বানানোর লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে চান।
ভদ্রকুমার লিখেছেন, শেখ হাসিনার চীন সফরের উল্লেখযোগ্য তিনটি দিক হলো:
প্রথমত, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এবং
বাংলাদেশ-চীন-ইন্ডিয়া-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডরে (বিসিআইএম) ঢাকার জোরালো
অংশগ্রহণ। দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের আলোকে ডিজিটাল
অর্থনীতিতে বাংলাদেশের সহযোগিতা বৃদ্ধি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একে
‘ডিজিটাল সিল্ক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তৃতীয়ত, রাখাইন থেকে বাংলাদেশে আশ্রয়
নেওয়া জনগোষ্ঠীকে (রোহিঙ্গাদের) দ্রুত, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরত
পাঠাতে চীনের প্রতিশ্রুতি।
নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতিতে চীন
সন্তুষ্ট বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিতেও চীন
আশ্বস্ত। ভারতীয় বলয়ের বাইরে অবস্থান এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক
রক্ষায় শেখ হাসিনার বাস্তববাদিতায় চীন স্বস্তিতে। বাংলাদেশ এই দুটি দেশের
কারও পক্ষই নেয় না। এখানে কোনো বৈপরীত্য নেই। কারণ শেখ হাসিনার লক্ষ্য শুধু
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা। ভদ্রকুমার লিখেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায়
শীতলযুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে ভারত
মহাসাগর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ খেলায় শেখ হাসিনা আগ্রহ না দেখানোয় চীন
খুশি। মৌলিকভাবে চীনের বিশ্বাস সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সত্যি হতে
পারে। ১৭ কোটি মানুষের দেশটি চীনের অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ ও
বাণিজ্যের জন্য একটি বিশাল সম্ভাবনার ক্ষেত্র। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত
বাড়লে উন্নততর অবকাঠামো, অধিক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন হবে।
এসব ক্ষেত্রে ঋণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে পারে চীন। চীনের আঞ্চলিক কৌশলের
অংশ হচ্ছে ভারতের বাজারে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশকে প্রবেশপথ হিসেবে
ব্যবহার। এর বিপরীতে ভারতের উচিত দক্ষিণ এশীয় কৌশল নিয়ে পুনরায় চিন্তা করা।
এটা স্পষ্ট যে, দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীতল
যুদ্ধের খেলায় ভারতের কোনো স্বার্থ নেই।
নিবন্ধে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় চীন একটি
গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বিসিআইএম হতে পারে চীন ও ভারতের সহযোগিতার একটি
পরীক্ষাক্ষেত্র। চীন ও ভারত একজোট হলে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা জোরদার হতে
পারে। এর অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট। চীন ও ভারত এক্ষেত্রে কেন যৌথ
উদ্যোগ নিতে পারে না?
ভদ্রকুমার লিখেছেন, বস্তুত রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সন্দেহজনক ভূমিকা
পালন করছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের একজন আইনপ্রণেতা রাখাইনকে বাংলাদেশের সঙ্গে
যুক্ত করার প্রস্তাব করলে শেখ হাসিনা তা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
এই প্রস্তাব অন্যায় এবং অগ্রহণযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে হাত দিয়েছে
সেখানেই আগুন জ্বলেছে। আমরা চাই এ অঞ্চল শান্তিপূর্ণ রাখতে আর যুক্তরাষ্ট্র
চায় আগুন জ্বালাতে। শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট নিরসন ও এই
জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে দেশটির
নেতারা তাকে আশ্বস্ত করেছেন।
আরও দেখুন
পিরোজপুরে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে দিনব্যাপীপ্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবার, ঢাকা: মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে পিরোজপুরের …