নিউজ ডেস্ক:
শোকাবহ ১৫ই আগস্ট আজ। ৭৫ এর এই দিনে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ঘাতকরা চেয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলতে। তবে তারা জানতো না, ব্যক্তিকে হত্যা করা গেলেও মহানায়কেরা ইতিহাসে থাকে চির সমুজ্জল।
দীর্ঘদিন ধরেই চলছিলো ষড়যন্ত্র। চূড়ান্ত আঘাতের দিনক্ষণ আগেই ঠিক করা। ১৫ আগস্ট ভোরই হবে বাঙ্গালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয়ী মহানায়ক হত্যার ক্ষণ। প্রস্তুতি দৃশ্যমান হতে শুরু করে ৭৫ এর ১৪ আগষ্ট বিকেল থেকে।রাত আনুমানিক ১০টা।
বেঙ্গল ল্যান্সারের টি ফিফটি ফোর ট্যাংকগুলো বেরিয়ে পড়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে। তেজগাঁও বিমানবন্দরের কাছে জড়ো হয় খুনিরা। পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন খুনি মেজর ফারুক। মূল টার্গেট বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। আক্রমণের নেতৃত্বে খুনি মেজর মহিউদ্দিন।
ভোর ৫টা ১০ মিনিট। ঘাতক দল পৌঁছে যায় ধানমন্ডির শেখ ফজলুল হক মনির বাসায়। স্টেনগান আর ব্রাশফায়ার মুহুর্তেই কেড়ে নেয় শেখ মনি ও তার স্ত্রীর প্রাণ।
ভোর ৫টা ১৫ মিনিট। ধানমণ্ডির আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় খুনিরা এক একে খুন করে ১৩ জনকে।
ভোর ৫.৩০ মিনিট। শেখ মনি আর সেরনিয়াবাতের বাড়িতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ঘাতকদের দল তখন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর ৬৭৭ নম্বর বাড়ির গেটে। প্রথমেই তারা হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালকে।
ভোর ৫.৫০ মিনিট। গুলির শব্দে দোতলার দরজা খুলে নিচে নেমে আসার সময় খুনিদের ধমকাতে থাকেন বঙ্গবন্ধু। সিঁড়ির মাঝামাঝি এসে দাঁড়াতেই, ঘাতকদের গুলি। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি পড়ে আছেন সিঁড়িতে। নিথর।
তখনও শেষ হয়নি হত্যাকাণ্ড। খুনিরা একে একে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, ছেলে শেখ জামাল, দুই পূত্রবধূ রোজী জামাল, সুলতানা কামালকে হত্যা করে, রেহাই দেয়নি ছোট্ট রাসেলকেও।
এত বিশ্বাসঘাতকদের ভিড়েও, অসম সাহসে বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন সামরিক সচিব কর্নেল জামিল। খুন হতে হয় তাকেও।
ইতিহাসের এমন করুণ মৃত্যুতে সেদিন কাঁদতে পারেনি বাঙালী। তবে চাপা কষ্টে সেদিন কেঁদেছিল প্রকৃতি। ঘাতক বুলেট সেদিন জাতির পিতার প্রাণ কেড়ে নিলেও মুছে দিতে পারেনি সেই অবিনাশী নাম।
ইতিহাস বলে, বীরের মৃত্যু নেই। যদিও যুগে যুগে অনেক বীরকেই হত্যার শিকার হতে হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে। পার্থক্য হচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারীরা ইতিহাসে কাপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত। আর বীরেরা বেঁচে থাকেন মহাকালে, মহানায়ক রূপে।