রবিবার , সেপ্টেম্বর ২৯ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / আজ প্রথম বারের মত পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস

আজ প্রথম বারের মত পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস

অহিদুল হক:
নাটোরের বড়াইগ্রামের কচুগাড়ি গ্রামের জিল্লুর রহমানের ছেলে জিসান আহমেদ (৩)। বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকা থেকে ঈদ করতে দাদাবাড়ি এসেছিল সে। ঈদের পরদিন গত ২২ জুলাই সমবয়সীদের সাথে বাড়ির আঙ্গিনায় খেলার ফাঁকে সবার অলক্ষ্যে পাশের তুলশী নদীতে পড়ে যায় সে। তাকে নদী থেকে তোলার পর দেহে প্রাণ আছে কি নেই বোঝা যাচ্ছিল না। স্বজনরা যখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, বাবা-মায়ের আদরের ধন জিসানের প্রাণপ্রদীপ ততক্ষণে নিভে গেছে।

একই ভাবে, গত দুই জুলাই উপজেলার কুমরুল গ্রামের শ্রী বিকাশ মন্ডলের ছেলে সীমান্ত কুমার (৪) খেলার সময় বাড়ি সংলগ্ন খালের পানিতে পড়ে যায়। এ সময় তার মা রান্না করছিলেন। কিছুক্ষণ পরে তাকে দেখতে না পেয়ে আশেপাশে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে খালে তার অচেতন দেহ ভাসতে দেখেন। পরে প্রতিবেশীরা দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি জানান, যে তাদের বুকের মানিক আর বেঁচে নেই।

জিসান বা সীমান্তের মত শুধু চলতি বছরের সাত মাসেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানিতে ডুবে কমপক্ষে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান কাজ না করায় এভাবে মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান জানা না গেলেও স্থানীয় তথ্যে জানা গেছে, উপজেলায় ২০২০ সালে ১৪ জন, ২০১৯ সালে ১৩ জন ও ২০১৮ সালে ১৬ জনের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে, যার অধিকাংশই শিশু। একইভাবে সারা দেশেই পানিতে মৃত্যুর হার অনেক। ২০১৬ সালের বাংলাদেশ হেল্থ এন্ড ইনজুরী সার্ভে অনুযায়ী প্রতি বছর দেশে প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজারই হচ্ছে পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশু। পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে আজ রোববার (২৫ জুলাই) প্রথম বারের মত ‘বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রস্তাবের ভিত্তিতেই এ দিবসটি পালন শুরু হয়েছে।

পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রসঙ্গে নারী ও শিশু কল্যান সোসাইটি’র (এনএসকেএস) পরিচালক ডিএম রনি পারভেজ আলম জানান, জরিপ অনুযায়ী সচরাচর সকাল ৯টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। কারণ এ সময়ে শিশুদের মায়েরাসহ পরিবারের অন্যরাও সাংসারিক কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে গ্রাম ভিত্তিক ডে কেয়ার সেন্টার চালুসহ শিশুর বাবা-মায়ের আরো বেশি সচেতন হওয়া দরকার। সব ঋতুতেই পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও সাধারণত বর্ষাকালে এ হার বেশি। এছাড়া খেলাধুলা শেষে সন্ধ্যার দিকে পুকুরে হাত-পা ধুতে গিয়েও অনেক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ ব্যাপারেও বাবা-মায়ের সচেতন হওয়া দরকার।

বড়াইগ্রাম সরকারী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আকরামুল হক জানান, এখনকার শহরের শিশুরাতো বটেই, গ্রামের অধিকাংশ শিশুরাই সাঁতার জানে না। অথচ সাঁতার শেখালে দেশে পানিতে ডুবে মৃত্যু শতকরা ৯৫ শতাংশ কমানো সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এ কারণে শিশুদেরকে পারিবারিকভাবে কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠণের উদ্যোগে সাঁতার শেখানো দরকার। তাছাড়া সরকারীভাবে সাঁতার শেখানোর প্রকল্প থাকলেও তার আকার খুবই সীমিত, এটি বাড়ানো দরকার। একই সঙ্গে পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে সরকারী-বেসরকারীভাবে সচেতনতামুলক প্রচারণা চালানো উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সী মেডিকেল অফিসার ডা. জাহেদুল ইসলাম জানান, শিশুরা পানিতে ডুবে গেলে আমরা সচরাচর তাদের মাথার উপরে নিয়ে ঘোরানো, জোর করে বমি করানোর চেষ্টা বা পেটে চাপ দেই-এটা ঠিক না। কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) পদ্ধতিতে মুখ থেকে মুখে শ্বাস দিতে হবে, বুকে চাপ দিতে হবে। এটা সময় মত করা গেলে হয়তো একটা শিশুর জীবন বেঁচে যাবে। এছাড়া যতদ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে।

আরও দেখুন

নাটোরে ধর্ষণ চেষ্টায় ১ জনের আটকাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোর সদর থানার লক্ষিপুর খোলাবাড়িয়া এলাকায় শিশু(০৭) কে ধর্ষন চেষ্টায় আব্দুর রহমান(১৭)কে ১০ …