নিজস্ব প্রতিবেদক:
নতুন জনবল নিয়োগে প্রয়োজন ১ হাজার ৬৯ কোটি টাকা এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধনে কমিটি
আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সব মাধ্যমিক স্কুলে চালু হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা। চলতি বছর ৬৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে চলার পর এবার সারাদেশে একসঙ্গে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী, দক্ষ জনশক্তি রূপে গড়ে তুলতেই এই উদ্যোগ। প্রথমে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে যথাক্রমে প্রাক বৃত্তিমূলক ও বৃত্তিমূলক কোর্স চালু করা হবে। কোর্স চালু করতে সরকারি হাইস্কুলে পদ সৃষ্টি ও বেসরকারি হাইস্কুলে এমপিও নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব জানা গেছে।
জানা গেছে, এতে জনবল বাড়ার পাশাপাশি বাড়বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো। সেজন্য সরকারের কাছে ১ হাজার ৬৯ কোটি ৯৩ লাখ চাহিদা দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে একজন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে ১০টি নির্বাচিত ট্রেস কোর্স বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হবে, যা তার কর্মজীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
জানা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রাক বৃত্তিমূলক কোর্স এবং নবম ও দশম শ্রেণিতে বৃত্তিমূলক বিষয় চালু করতে গত ২৮ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) নাজমুল হক খানের সভাপতিত্বে একটি ভার্চুয়াল সভা হয়। সভায় গত ৯ মার্চ গঠিত এ সংক্রান্ত কমিটিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট সচিবের কাছে জমা দিতে বলা হয়।
এদিকে আগের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাউশি গত ১৯ আগস্ট পদ সৃষ্টি করতে আর্থিক সংশ্লিষ্টতার প্রস্তাব পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ে। তাতে বলা হয়েছে, ৬৮৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে (৩৭১টি স্কুল সরকারি হলেও জনবল বেসরকারি)। এর মধ্যে ১৫৫টি স্কুলে ডাবল শিফট রয়েছে। সরকারি এসব স্কুলে দুজন করে ইন্সট্রাক্টর পদ সৃষ্টি করলে ১ হাজার ৬৭৬টি পদের বিপরীতে ৫৪ কোটি ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৪০০ টাকা আর ল্যাব সহকারী পদের জন্য ৩৪ কোটি ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ১২০ টাকা দরকার হবে। সরকারি ছাড়াও সারাদেশে ১৩ হাজার ৫৫০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব স্কুলে
ইন্সট্রাক্টর পদের জন্য ৫৯৯ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার এবং ল্যাব সহকারী পদের জন্য ৩৮১ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা লাগবে। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৬৯ কোটি ৯৩ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা দরকার হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) অধীনে ৬৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রি-ভোকেশনাল ও ভোকেশনাল কোর্স চালুর সংস্থান রয়েছে। যা ২০১৭ সালে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। সেসিপ’র মাধ্যমে ৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে কোর্স চালু করতে নির্মাণ ও পূর্ত কাজের জন্য ৫৩১ কোটি ২০ লাখ, ১০টি ট্রেডের উপকরণ সরবরাহ করতে ২৬১ কোটি ৯৪ লাখ ২৪ হাজার, আসবাবপত্র সরবরাহে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৪০ হাজার ও শিক্ষক নিয়োগে ৪২ কোটি ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। ১০টি নির্বাচিত কোর্সের মধ্যে রয়েছে- ফুড প্রসেসিং এবং প্রিসারভেশন, সিভিল কন্সট্রাকশন, জেনারেল ইলেকট্রিক ওয়ার্কস, জেনারেল ইলেকট্রনিক্স, ড্রেস মেকিং এবং টেইলারিং, কম্পিউটার এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি, জেনারেল মেশিনারিজ, রেফ্রিজারেশন এবং এয়ার কন্ডিশনিং, ওয়েলডিং এবং ফেব্রিকেশন, পস্নামবিং এবং পাইপ ফিটিং। এর মধ্য থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা অনুযায়ী দুটি কোর্স চালু করবে।
প্রতিটি উপজেলা থেকে একটি করে কো-এডুকেশন স্কুল (৪৯০টি), প্রত্যেক জেলা হতে একটি কো-এডুকেশন মাদ্রাসা (৬৪টি), দুর্গম ও অবহেলিত (চর, হাওড় ও পাহাড়) এলাকা হতে ৫০টি স্কুল ও ৩৬টি মাদ্রাসা নির্বাচন করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুটি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের স্থান, বিদু্যৎ সংযোগ এবং প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত। নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ ও পূর্ত কাজ শেষপর্যায়ে। আর শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি করতে পদ সৃজনের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে ৬৭৬ জন ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ল্যাব সহকারী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) নাজমুল হক খান বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সবস্তরের হাইস্কুলে কারিগরি শিক্ষা চালু করতে জোর প্রচেষ্টা চলবে। বেশ কিছু কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে বাকি কাজ করতে গত মঙ্গলবার একটি সভা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি হাইস্কুলে পদ সৃষ্টি করতে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাব। অনুমোদন হলেই পিএসসির মাধ্যমে দ্রম্নত নিয়োগকার্যক্রম শুরু করা হবে। আর বেসরকারি স্কুলের কোর্স চালু করতে এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধনের কাজ করছে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি।
সভায় মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) বলেন, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে এবং সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়ে থাকে। সাধারণ শিক্ষা ধারায় বৃত্তিমূলক কোর্স চালু করতে প্রথমে ট্রেড ইন্সট্রাক্টর জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। তার প্রস্তাবের ভিত্তিতে সভায় নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুজন করে ইন্সট্রাক্টর ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কতজন ইন্টট্রাক্টর ও ল্যাব সহকারী প্রয়োজন হবে এবং তাদের বেতন ভাতা বাবদ কত টাকা প্রয়োজন হবে সে বিষয়ে মাউশিকে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়। এছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইন্সট্রাক্টর পদ সৃষ্টি করতে অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোর্স চালু করতে ইন্সট্রাক্টর ও ল্যাব সহকারী পদ সৃষ্টি করতে মাউশি প্রস্তাব পাঠাবে। পদ সৃষ্টি করতে মন্ত্রণালয়ের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শাখা পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেবে।