নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ গত ৫০ বছরের পথ চলায় অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে-এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের অগ্রায়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। সরকারের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মহান জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আরও বলেন, ৫০ বছরের পথ পরিক্রমা অনেক ক্ষেত্রেই মসৃণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর, বারবার সামরিক ফরমান জারি করে সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। গণতন্ত্র ও জাতীয় সংসদের ওপর আঘাত হেনেছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল সামরিক ও স্বৈরশাসনের পালাবদলের মধ্য দিয়ে সংবিধানের চার মূলনীতিতে আঘাত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে কালো আইনে পরিণত করা ছিল সংসদীয় ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। পরে সপ্তম সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ সুগম করা হয়।
শুক্রবার জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ অধিবেশন উপলক্ষ্যে ১৪৭ বিধিতে দেওয়া প্রস্তাব উত্থাপনকালে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব তোলার পর এর ওপর সংসদে আলোচনা শুরু হয়। সরকারি দলের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম আলোচনায় অংশ নেন। সংসদ-সদস্যদের আলোচনা শেষে রোববার এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মহান জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে। সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে মন্ত্রীর পরিবর্তে সদস্যদের নির্বাচিত করা হচ্ছে। বিরোধী দলের সদস্যদের থেকে স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হচ্ছে। সিপিএ ও আইপিউতে সভাপতিত্ব ছিল বাংলাদেশের সংসদের প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আস্থার প্রতীক। নারীর ক্ষমতায় বাংলাদেশের সংসদ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বর্তমান সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধী দলের নেতা, একজন হুইপ, চারজন নারী স্থায়ী কমিটির সভাপতির ভূমিকা পালন করছেন। জাতীয় রাজনীতিকে নারীদের উৎসাহিত করতে সংসদে নারী আসন ৫০ এ উন্নীত করা হয়েছে।
সংসদ নেতা বলেন, গত তিন মেয়াদে জাতীয় সংসদের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা, সংসদীয় গণতন্ত্রের স্থায়িত্ব ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের ক্ষেত্র রচনা করেছে। জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময়। দারিদ্র্য বিমোচন, দুর্যোগ মেকাবিলা, নারী ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ রোলমডেল। শেখ হাসিনা বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের মঞ্চ, মহান জাতীয় সংসদ সরকারের সামগ্রিক উন্নয়নে অংশীদার এবং সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলো সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতির সামনে উপস্থাপিত হয়।
প্রস্তাব উত্থাপনকালে শেখ হাসিনা বলেন, ধারাবাহিকভাবে ২০০৮ সালের পরে এই দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত আছে। যার ফলে একটা স্থিতিশীলতা আছে। মাঝে মাঝে আমাদের প্রতিবন্ধকতা, অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়। তার পরও বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আশা করি, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ এবং জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি বিরল দৃষ্টান্ত জাতির সামনে রেখে গিয়েছিলেন জাতির পিতা। ইচ্ছা থাকলে যে, কত দ্রুত একটা দেশকে পুনর্গঠন, পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন করা যায়। আজকে তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে উঠত।
সংসদ নেতা বলেন, আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে পথ চলি। তাই ধারাবাহিকভাবে ২০০৮ সালের পরে এই দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত আছে। যার ফলে একটা স্থিতিশীলতা আছে। মাঝে মাঝে আমাদের প্রতিবন্ধকতা, অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়। তার পরও বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আশা করি, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ এবং জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উত্থাপিত প্রস্তাবটি হচ্ছে- বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫০ বছরপূর্তির এই মাহেন্দ্রক্ষণে সংসদের অভিমত এই যে, ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুরূপে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন এবং আশা আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে এবং এরমধ্য দিয়ে গণতন্ত্র হবে সুসংহত, শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, সবার জন্য সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে, সংবিধানের এ অঙ্গীকারগুলো পূরণে আমরা সবাই একযোগে কাজ করব, গড়ে তুলব আগামীর সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা- এই হোক আমাদের প্রত্যয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু বলেন, ষড়যন্ত্র নানা দিকে বিস্তৃত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দেশের উন্নয়ন ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তিনি সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। আমির হোসেন আমু বলেন, তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চান। কিন্তু সেখানে বাধা আছে। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিদেশে চাকরি দিয়েছিল-তারাই বাধা। সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে সরকারি দলের এই সিনিয়র সংসদ-সদস্য বলেন, গ্রামের মানুষ এখন একবেলাও অভুক্ত থাকে না। সংসদ সদস্যরা এর সাক্ষী।
গণপরিষদ এবং প্রথম জাতীয় সংসদের আরেক সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি লক্ষ্য নিয়েই রাজনীতি করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা এবং মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা আছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতে আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দেওয়া হয়। সে পতাকা হাতে নিয়ে তিনি যত্নসহকারে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন।
সরকারি দলের আরেক সিনিয়র সংসদ-সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আর যাতে কোনো সামরিক জান্তারা ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।