নিউজ ডেস্ক:
অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের আবাসন নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) চার হাজার ১২২ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ প্রকল্পের অনুমোদন করেছে। প্রকল্পের আওতায় ৬৪ জেলার সব উপজেলা ও মহানগরে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করা হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় অংশগ্রহণ করেন। একনেকে মোট ৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে তিনটি নতুন প্রকল্প ও তিনটি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।
সভাশেষে পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, ৬টি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬১৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে পাঁচ হাজার ৫১৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণসহায়তা পাওয়া যাবে ৫৭ কোটি ৫২ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪২ কোটি ৭ লাখ টাকা।
‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশীদ এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আগে আমাদের পরিকল্পনা ছিল ১৪ হাজার ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করা। কিন্তু এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে ৩০ হাজার ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করার। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (মহানগর সংশ্লিষ্ট) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২১ থেকে জুন ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে।
পরিকল্পনা সচিব জয়নুল বারী জানান, কাজের মান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আবারো নির্দেশ দিয়েছেন।
একনেক অনুমোদিত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্পটি ৪৪৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা খরচে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘পিরোজপুর জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প ৬০০ কোটি টাকা খরচে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।
সংশোধিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘রাজশাহী কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পটি প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ১৬৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং আজকে সংশোধনের পর হলো ১২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘শরীয়তপুর জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশোধনীতে প্রকল্পের খরচ ৩১৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪১৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগের ‘কনস্ট্রাকশন অব নিউ ১৩২/৩৩ কেভি অ্যান্ড ৩৩/১ কেভি সাবস্টেশন আন্ডার ডিপিডিসি’ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পে খরচ ৯২ কোটি ২৫ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় সংশোধনীর ফলে প্রকল্পের এখন ব্যয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৭৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।