নিউজ ডেস্ক:
সরকারি-বেসরকারি ৪৩ ধরনের সেবা পেতে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা আয়কর দেওয়ার বিধান বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া ভ্রমণ কর ও পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্যের শুল্ক কাঠামোয় পরিবর্তন এনে জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাশ হয়েছে। রোববার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এ সময় অর্থবিলের ওপর কয়েকজন সদস্য সংশোধনী প্রস্তাব দেন, যা অর্থমন্ত্রী গ্রহণ করেন। বাকিগুলো কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়।
পরে তিনি অর্থবিল পাশের অনুরোধ জানালে স্পিকার তা ভোটে দেন। এ সময় উপস্থিত সদস্যদের কণ্ঠভোটে পাশ হয় অর্থবিল।
অর্থবিল সংশোধনের প্রস্তাব দেন সংসদ-সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ফখরুল ইমাম, মুজিবুল হক, রুস্তুম আলী ফরাজী, রওশন আরা মান্নান, কাজী ফিরোজ রশীদ, রেজাউল করিম, শহীদুজ্জামান সরকার, মোকাব্বির হোসেন।
সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমরা অনেক উন্নত দেশের তুলনায় ভালো আছি। আমাদের বর্তমান বৈদেশিক ঋণ-জিডিপির অনুপাত ৩৪ শতাংশ। জাপানের মতো উন্নত দেশে সেটা ২৬১ শতাংশ। ফলে বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে ঝুঁকি দেখছি না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্থনীতির কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে মাত্র ১৪ বছরে বিশ্বের ৬০তম অর্থনীতির দেশ থেকে ৩৫তম অর্থনীতির দেশে পরিণত করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের ২০টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।
ন্যূনতম আয়কর ২ হাজার টাকা বাতিলের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্যরা।
ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, শামীম হায়দার পাটোয়ারি ন্যূনতম ২ হাজার টাকা আয়করের বিধান বাতিলের প্রস্তাব দেন। অর্থবিলের ওপর আলোচনায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও ২ হাজার টাকা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাতের ইশারা দিয়ে বিধানটি বাতিলের কথা জানান।
১ জুন বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।
এ ধরনের অংশীদারিমূলক অংশগ্রহণ দেশের সক্ষম জনসাধারণের মাঝে সঞ্চারণের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে। অথচ সরকার থেকে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের বাধ্যবাধকতা আছে, এমন করদাতাদের কাছ থেকে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর আদায়ের প্রস্তাব করেন তিনি।
প্রস্তাবিত বাজেটে ৪৩টি সরকারি-বেসরকারি সেবা পেতে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে, কোম্পানি পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হলে, আমদানি-রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি-ইআরসি) নিতে, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে, সমবায় সমিতি নিবন্ধন নিতে, বিমা কোম্পানির সার্ভেয়ার হতে, ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের জমি-ফ্ল্যাটের দলিল করতে, ক্রেডিট কার্ড নিতে, পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ নিতে, ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র পেতে; গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বাচ্চা ভর্তি করতে, কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নিতে, অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে, ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে, ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে, নির্বাচনে অংশ নিতে, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ১৬ হাজার টাকা হলে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ১৬ হাজার টাকার বেশি বেতন গ্রহণ করলে, পণ্য আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক।