রবিবার , নভেম্বর ১৭ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / অর্থনৈতিক সুবাতাস বয়ে আনবে আইএমএফের ঋণ!

অর্থনৈতিক সুবাতাস বয়ে আনবে আইএমএফের ঋণ!

নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস বইবার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কিছুটা পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশে চাপে থাকা অর্থনীতি ডিসেম্বরে কিছুটা স্বস্তিতে ফিরবে। বৈদেশিক মুদ্রা সংকট, মূল্যস্ফীতি, তেল, গ্যাস, রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স কমায় তৈরি হওয়া উদ্বেগজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আইএমএফের কাছে তিন কিস্তিতে মোট ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সে ঋণের বিষয়ে কথা বলতে আজ বুধবার ঢাকায় আসছে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়া গেলে অর্থনীতিতে যে সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে তা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এ পরিস্থিতিতে কিছু শর্ত মেনে হলেও আইএমএফের ঋণ নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস ফিরিয়ে আনতে হলে ঋণ নেওয়া যেতে পারে। এই ঋণ পাওয়া গেলে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, জাইকা, চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে ঋণ নেওয়া সহজ হবে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল ১৪ দিনের সফরে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে। এই সফরে আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি বা এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির আওতায় ঋণ চুক্তিতে পৌঁছানো নিয়ে আলোচনা হবে। সেই সঙ্গে আইএমএফের নতুন উদ্যোগ রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ)

আওতায় বাংলাদেশ ঋণ সহায়তা পাবে কিনা, সে বিষয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, ‘ঋণ পাওয়া যাবে কি না এটা এখনো বলা মুশকিল, আইএমএফের শর্তগুলো বাংলাদেশ পরিপালন করতে পারবে কিনা এখন সেটা দেখার বিষয়। তবে আইএমএফের এ ঋণ বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে রিজার্ভ এখন অনেক কমে গেছে। এক বছর আগে এ রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এখন তা কমে প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। তার মনে এক বছরের ব্যবধানে ১২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ কমেছে। যার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর পড়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সংকটের মুখে রয়েছে, মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী।

ঋণ পরিশোধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ঋণখেলাপি হয়নি। আগামীতেও হবে না। এটা আমার বিশ্বাস রয়েছে। তবে বর্তমানে আইএমএফের ঋণ দেশের জন্য জরুরি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ডক্টর সালেহ উদ্দিন আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আইএমএফের ঋণটা যত দ্রম্নত পাওয়া যাবে, দেশের জন্য ততই মঙ্গল। ঋণটা পেলে সরকার একটু স্বস্তি পাবে। অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে পারবে। আইএমএফ যেসব শর্ত দিচ্ছে তা বাংলাদেশের নিজেদেরই করতে হবে। সেটা করলে বাংলাদেশের সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি ফিরে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। সরকারকে মূল সমস্যাগুলোকে বের করতে হবে। তার সঙ্গে সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। আমলারা এককভাবে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এ সংকট মোকাবিলা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ কোনো ব্যতিক্রম দেশ নয়। সারা পৃথিবীতে সংকট চলছে। এর মধ্যে কিছু দেশ কম খারাপ। আর কিছু দেশ বেশি খারাপ অবস্থায় আছে। কেউ স্বস্তিতে নেই। কাউকে দোষারোপ করব না। নিজের ঘর গোছাতে হবে। অন্যের ঘর দেখে লাভ নেই। বিশেষ করে এই আপৎকালীন আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। আর এই কাজের একটি হচ্ছে- যত দ্রম্নত সম্ভব আইএমএফের ঋণটা আমাদের পেতেই হবে। এজন্য যদি সংস্থাটির কিছু শর্ত মানতে হয়, সেটা মেনেই ঋণটা নিতে হবে।’

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ডক্টর আহসান এইচ মনসুর যায়যায়দিনকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক চাপ সারা বিশ্বে রয়েছে। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম নয়। এ চাপ সামাল দিতে হলে আইএমএফের ঋণ সরকারের প্রয়োজন রয়েছে। শুধু তাই নয়, যত দ্রম্নত সম্ভব ঋণটা সরকারকে পেতে হবে। কারণ, আইএমএফ ঋণ দিলে বিশ্বব্যাংক তখন আমাদের পাশে থাকবে। তারাও ঋণ দেবে। তখন সব কিছু আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। তখন আর সংকট শব্দটি উলেস্নখ করবে না।’

তিনি বলেন, ‘আইএমএফ কখনো কোনো দেশকে সংকটে ফেলতে চায় না। তাদের মূল কাজ হচ্ছে সংকট মোকাবিলায় সেই দেশকে সহযোগিতা করা। আইএমএফের ঋণ যে কোনো দেশের জন্য আস্থার সৃষ্টি করে। এই সময়ে আইএমএফ আমাদের ঋণটা যদি দিয়ে দেয় তাহলে বিশ্বব্যাংক তখন পাশে থাকবে। তারাও ঋণ দেবে। এডিবি এগিয়ে আসবে। জাইকা আসবে। সবাই এগিয়ে আসবে। তখন তারা সবাই তাদের সাপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসবে।’

সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ প্রতিনিধিদল মূলত ১০টি শর্তের বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। শর্তগুলো হতে পারে- ১. বাংলাদেশের রাজস্ব ও কর নীতির সংস্কার করা। বিশেষ করে রাজস্ব বাড়াতে হবে। সেজন্য ব্যয়ভার সীমিত করা এবং ব্যয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। ২. আর্থিক ব্যবস্থায় আমানত ও ঋণের যে সীমা বেঁধে দেওয়া আছে, সেটা তুলে দেওয়া। ৩. মুদ্রানীতির আধুনিকায়ন করা। মুদ্রাবাজারের ওপর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া। ৪. রিজার্ভ যথেষ্ট থাকলেও সেটা সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। ৫. দেশের বিভিন্ন খাতের ভর্তুকি কমিয়ে আনা। ৬. ব্যাংকিং খাতে বিধিমালার কঠোর বাস্তবায়ন ও নজরদারি জোরদার করা। বিশেষ করে আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা। ৭. আর্থিক খাতের দুর্বলতা দূর করা এবং পুঁজিবাজার শক্তিশালী করে তোলা। ৮. করোনার সময় সম্পন্ন করা খরচের নিরীক্ষা প্রকাশ করা। ৯. রপ্তানির বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পদক্ষেপ নেওয়া, উৎপাদন বাড়ানো, মানবসম্পদের উন্নয়ন ও দুর্নীতি বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ। ১০. জলবায়ু পরিবর্তনে পদক্ষেপ ও তহবিল বরাদ্দে সংস্কার কার্যক্রমের পরামর্শ গ্রহণ করা।

গত জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ। গত ২৪ জুলাই আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে লেখা এক চিঠিতে ঋণের অনুরোধ জানানো হয়। জানা গেছে, মোট সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছে, যার মধ্যে দেড় বিলিয়ন সুদমুক্ত হবে এবং বাকি ঋণ ২ শতাংশের কম সুদে আসবে।

জানা গেছে, ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে লেনদেনের ভারসাম্য বাবদ ১৫০ কোটি ডলার ও বাজেট-সহায়তা বাবদ ১৫০ কোটি ডলার পাওয়া যেতে পারে। বাকি ১৫০ কোটি ডলার আইএমএফের নতুন উদ্যোগ, সহনশীলতা ও টেকসই সহায়তা তহবিল থেকে পাওয়া যেতে পারে। তুলনামূলক সহজ শর্তে এই ঋণ পাওয়া যাবে। তবে লেনদেন ভারসাম্য ঠিক রাখতে দেওয়া ঋণের শর্ত তুলনামূলক কঠিন হতে পারে।

ম পবন আহমেদ

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস বইবার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কিছুটা পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশে চাপে থাকা অর্থনীতি ডিসেম্বরে কিছুটা স্বস্তিতে ফিরবে। বৈদেশিক মুদ্রা সংকট, মূল্যস্ফীতি, তেল, গ্যাস, রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স কমায় তৈরি হওয়া উদ্বেগজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আইএমএফের কাছে তিন কিস্তিতে মোট ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সে ঋণের বিষয়ে কথা বলতে আজ বুধবার ঢাকায় আসছে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়া গেলে অর্থনীতিতে যে সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে তা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এ পরিস্থিতিতে কিছু শর্ত মেনে হলেও আইএমএফের ঋণ নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস ফিরিয়ে আনতে হলে ঋণ নেওয়া যেতে পারে। এই ঋণ পাওয়া গেলে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, জাইকা, চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে ঋণ নেওয়া সহজ হবে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল ১৪ দিনের সফরে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে। এই সফরে আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি বা এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির আওতায় ঋণ চুক্তিতে পৌঁছানো নিয়ে আলোচনা হবে। সেই সঙ্গে আইএমএফের নতুন উদ্যোগ রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ)

আওতায় বাংলাদেশ ঋণ সহায়তা পাবে কিনা, সে বিষয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, ‘ঋণ পাওয়া যাবে কি না এটা এখনো বলা মুশকিল, আইএমএফের শর্তগুলো বাংলাদেশ পরিপালন করতে পারবে কিনা এখন সেটা দেখার বিষয়। তবে আইএমএফের এ ঋণ বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে রিজার্ভ এখন অনেক কমে গেছে। এক বছর আগে এ রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এখন তা কমে প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। তার মনে এক বছরের ব্যবধানে ১২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ কমেছে। যার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর পড়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সংকটের মুখে রয়েছে, মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী।

ঋণ পরিশোধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ঋণখেলাপি হয়নি। আগামীতেও হবে না। এটা আমার বিশ্বাস রয়েছে। তবে বর্তমানে আইএমএফের ঋণ দেশের জন্য জরুরি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ডক্টর সালেহ উদ্দিন আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আইএমএফের ঋণটা যত দ্রম্নত পাওয়া যাবে, দেশের জন্য ততই মঙ্গল। ঋণটা পেলে সরকার একটু স্বস্তি পাবে। অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে পারবে। আইএমএফ যেসব শর্ত দিচ্ছে তা বাংলাদেশের নিজেদেরই করতে হবে। সেটা করলে বাংলাদেশের সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি ফিরে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। সরকারকে মূল সমস্যাগুলোকে বের করতে হবে। তার সঙ্গে সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। আমলারা এককভাবে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এ সংকট মোকাবিলা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ কোনো ব্যতিক্রম দেশ নয়। সারা পৃথিবীতে সংকট চলছে। এর মধ্যে কিছু দেশ কম খারাপ। আর কিছু দেশ বেশি খারাপ অবস্থায় আছে। কেউ স্বস্তিতে নেই। কাউকে দোষারোপ করব না। নিজের ঘর গোছাতে হবে। অন্যের ঘর দেখে লাভ নেই। বিশেষ করে এই আপৎকালীন আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। আর এই কাজের একটি হচ্ছে- যত দ্রম্নত সম্ভব আইএমএফের ঋণটা আমাদের পেতেই হবে। এজন্য যদি সংস্থাটির কিছু শর্ত মানতে হয়, সেটা মেনেই ঋণটা নিতে হবে।’

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ডক্টর আহসান এইচ মনসুর যায়যায়দিনকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক চাপ সারা বিশ্বে রয়েছে। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম নয়। এ চাপ সামাল দিতে হলে আইএমএফের ঋণ সরকারের প্রয়োজন রয়েছে। শুধু তাই নয়, যত দ্রম্নত সম্ভব ঋণটা সরকারকে পেতে হবে। কারণ, আইএমএফ ঋণ দিলে বিশ্বব্যাংক তখন আমাদের পাশে থাকবে। তারাও ঋণ দেবে। তখন সব কিছু আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। তখন আর সংকট শব্দটি উলেস্নখ করবে না।’

তিনি বলেন, ‘আইএমএফ কখনো কোনো দেশকে সংকটে ফেলতে চায় না। তাদের মূল কাজ হচ্ছে সংকট মোকাবিলায় সেই দেশকে সহযোগিতা করা। আইএমএফের ঋণ যে কোনো দেশের জন্য আস্থার সৃষ্টি করে। এই সময়ে আইএমএফ আমাদের ঋণটা যদি দিয়ে দেয় তাহলে বিশ্বব্যাংক তখন পাশে থাকবে। তারাও ঋণ দেবে। এডিবি এগিয়ে আসবে। জাইকা আসবে। সবাই এগিয়ে আসবে। তখন তারা সবাই তাদের সাপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসবে।’

সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ প্রতিনিধিদল মূলত ১০টি শর্তের বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। শর্তগুলো হতে পারে- ১. বাংলাদেশের রাজস্ব ও কর নীতির সংস্কার করা। বিশেষ করে রাজস্ব বাড়াতে হবে। সেজন্য ব্যয়ভার সীমিত করা এবং ব্যয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। ২. আর্থিক ব্যবস্থায় আমানত ও ঋণের যে সীমা বেঁধে দেওয়া আছে, সেটা তুলে দেওয়া। ৩. মুদ্রানীতির আধুনিকায়ন করা। মুদ্রাবাজারের ওপর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া। ৪. রিজার্ভ যথেষ্ট থাকলেও সেটা সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। ৫. দেশের বিভিন্ন খাতের ভর্তুকি কমিয়ে আনা। ৬. ব্যাংকিং খাতে বিধিমালার কঠোর বাস্তবায়ন ও নজরদারি জোরদার করা। বিশেষ করে আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা। ৭. আর্থিক খাতের দুর্বলতা দূর করা এবং পুঁজিবাজার শক্তিশালী করে তোলা। ৮. করোনার সময় সম্পন্ন করা খরচের নিরীক্ষা প্রকাশ করা। ৯. রপ্তানির বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পদক্ষেপ নেওয়া, উৎপাদন বাড়ানো, মানবসম্পদের উন্নয়ন ও দুর্নীতি বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ। ১০. জলবায়ু পরিবর্তনে পদক্ষেপ ও তহবিল বরাদ্দে সংস্কার কার্যক্রমের পরামর্শ গ্রহণ করা।

গত জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ। গত ২৪ জুলাই আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে লেখা এক চিঠিতে ঋণের অনুরোধ জানানো হয়। জানা গেছে, মোট সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছে, যার মধ্যে দেড় বিলিয়ন সুদমুক্ত হবে এবং বাকি ঋণ ২ শতাংশের কম সুদে আসবে।

জানা গেছে, ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে লেনদেনের ভারসাম্য বাবদ ১৫০ কোটি ডলার ও বাজেট-সহায়তা বাবদ ১৫০ কোটি ডলার পাওয়া যেতে পারে। বাকি ১৫০ কোটি ডলার আইএমএফের নতুন উদ্যোগ, সহনশীলতা ও টেকসই সহায়তা তহবিল থেকে পাওয়া যেতে পারে। তুলনামূলক সহজ শর্তে এই ঋণ পাওয়া যাবে। তবে লেনদেন ভারসাম্য ঠিক রাখতে দেওয়া ঋণের শর্ত তুলনামূলক কঠিন হতে পারে।

আরও দেখুন

তারেক রহমানের ইতিবাচক রাজনীতি আশার সঞ্চার করছে:দুলু

নিজস্ব প্রতিবেদক,,,,,,,বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন,গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে তারেক …