নিউজ ডেস্ক:
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে দিন দিনই বাড়ছে তেল-আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। দেশে দেখা দিয়েছে ডলার সংকট। ডলারের সংকট মোকাবিলা, অতিরিক্ত মূল্য ইস্যু ও বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে জরুরি সমন্বয় বৈঠক করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা ও টাকার বিপরীতে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে অর্থনৈতিক কৃচ্ছ্র সাধনের নতুন নীতি আসছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমকে গঠনমূলক সংবাদ পরিবেশনের অনুরোধ জানিয়ে সচিব বলেন, ‘আপনাদের কাছেও আমাদের একটি আবেদন যে গঠনমূলক জিনিসগুলো আলোচনা করতে হবে। কভিড তো রিকভার করা গেল, কিন্তু ইউরোপের যে যুদ্ধটা, এতে ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইকোনমিক ক্রাইসিস শুধু নয়, সাপ্লাইয়েরও একটি ক্রাইসিস হচ্ছে। কারণ রাশান দেশগুলো হলো ফুড ও এনার্জি সাপ্লাইয়ে সারপ্লাস।’ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এখন এখান থেকে যদি না বের হতে পারে ফুড ও এনার্জি, তাহলে সারা বিশ্বই কিন্তু ভুগবে। কালই দেখলাম ৯ পারসেন্ট ইনফ্লেশন হয়েছে গ্রেট ব্রিটেনে। যুক্তরাষ্ট্রেও ৮ পারসেন্টের বেশি। আমরা তো ওয়ার্ল্ডের বাইরে না, আমরা তো ওয়ার্ল্ডের অংশ। সে ক্ষেত্রে আমাদেরও হয়তো কিছু ক্ষেত্রে আরও রেশনাল বিহেভ করতে হবে। সে জন্য আমরা মিডিয়াকে অনুরোধ করব এটাই একটু পজিটিভ ওয়েতে প্রচার করার জন্য। আমরা সবাই যেন একটু সাশ্রয়ী থাকি বা রেশনাল থাকি।’ সচিব বলেন, ‘দ্রব্যের দাম কেন বেড়ে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে কী করতে হবে, কীভাবে দাম কমানো যাবে- এসব বিষয় নিয়ে পুরোপুরি একটা সামারি করে বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় কী করণীয় সেটার বিষয় নিয়েও কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’ আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে দুই মন্ত্রীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দ্রব্যের দামের সার্বিক বিষয় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে একটা পরিকল্পনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। লাক্সারি পণ্য আমদানি না করার বিষয়ে পরিকল্পনা করারও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ডলারের দাম বাড়ার বিষয়ে কী করা যায়, সেটা নিয়েও কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।’ তিনি জানান, বাংলাদেশের ভ্যাকসিন কার্যক্রমের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রশংসা করেছে। আগামী বছর স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের জন্য বাংলাদেশকে ৯৪৫ মিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নিজেই আগামী পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে বিষয়টি ক্লিয়ার করবেন। পদ্মা সেতু জুন মাসের শেষে উদ্বোধন হচ্ছে, এটা তো তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেই দিয়েছেন। আমরাও রেডি আছি ইনশা আল্লাহ। আশা করি, জুনের শেষ সপ্তাহের আগেই ব্রিজ রেডি হয়ে যাবে। উদ্বোধনের তারিখটা এখনো নির্ধারিত হয়নি। ডেটটা ধরে রাখেন জুনের শেষ দিকের কোনো এক দিন, যেদিন তিনি কমফোর্ট ফিল করবেন। অনেক জিনিস দেখতে হয়, সেগুলো দেখে আমরা আশা করি শেষ সপ্তাহের আগেই সেতু রেডি করে দিতে পারব।’ পদ্মা সেতুর নাম কী হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন পদ্মা সেতু ‘পদ্মা সেতু’ই হবে। প্রধানমন্ত্রী হয়তো আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে যে কোনো সময় ক্লিয়ার করবেন। পদ্মা সেতুর টোল প্রসঙ্গে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘যখনই যেখানে ব্রিজ নির্মাণ হয়, সেখানে ফেরির ১ দশমিক ৫ শতাংশ টোল ধরা হয় (যেমন ফেরিতে ১০০ টাকা হলে ব্রিজে ১৫০ টাকা)। এখানেও সেটা ধরেই করা হয়েছে। এর পরও সরকার যদি মনে করে এটা বেশি হয়েছে, তাহলে…। অনেকে পদ্মা সেতুকে বঙ্গবন্ধু সেতুর সঙ্গে তুলনা করেন। বঙ্গবন্ধু সেতু হলো ৫ কিলোমিটার, আর পদ্মা সেতু হলো ৯ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার। প্রায় দ্বিগুণ। পদ্মা সেতুর টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ১ শতাংশ হারে সুদে সরকারকে ফেরত দিতে হবে। সুতরাং সেতু কর্তৃপক্ষকে ওই জায়গা থেকে টাকা উপার্জন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ফিজিবিলিটি স্টাডিতে যেমন ছিল যে, ২৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে টাকাটা (পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়) উঠে আসবে। এখন মনে হচ্ছে ১৬-১৭ বছরের মধ্যেই টাকাটা উঠে আসবে। ওই পাড়ের যেসব কাজকর্ম এবং যেগুলো আছে সেগুলো ফিজিবিলিটি স্টাডিতে আসেনি। ধারণা ছিল পদ্মা সেতু ১ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি আনবে। এটা ২-এর কাছাকাছি চলে যাবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে। এদিকে গতকালের মন্ত্রিসভায় ‘ভূমি উন্নয়ন কর আইন, ২০২২’-এর খসড়া, ‘হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০২২’-এর খসড়া এবং ‘ভূমি সংস্কার আইন, ২০২২’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য নীতি, বাংলাদেশ, ২০২২’-এর খসড়াও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।