নিউজ ডেস্ক:
ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের আড়তের এ দোকানি শনিবার দুপুরে রসিদ দেখাতে না পারলে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানকালে হ্যান্ড মাইকে ১১০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রির ঘোষণা দেয়। এ খবরে তার দোকানে ভিড় লেগে যায়
রাতারাতি পেঁয়াজের দাম তরতরিয়ে বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে অভিযানে নেমে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
শনিবার অভিযানকালে ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি বাজারে ন্যায্য দামে পেঁয়াজ বিক্রিতে বাধ্য করা হয় বিক্রেতাদের। হঠাৎ এ অভিযানে অনেক বিক্রেতা দোকান ফেলে পালিয়েও যান।
এক লাফে এক দিনের মধ্যে শনিবার পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণের মতো বেড়ে যাওয়ার পর অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযানে নামে ভোক্তা অধিকার।
ঢাকা মহানগরীতে চারটি এবং কয়েকটি বিভাগীয় শহরসহ ৫৪টি জেলায় একযোগে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
মোট ৫৭টি দলের বাজার অভিযানকালে ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এসব অভিযান চালানো হয়।
দুপুরে কারওয়ান বাজারে অভিযান শুরুর খবরে পাইকারি অনেক ব্যবসায়ী জরিমানাসহ শাস্তির ভয়ে ত্রিপল দিয়ে দোকান ঢেকে পালিয়ে যান।
অভিযানকালে রশিদে আগের কেনা দাম দেখে ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ টাকায় এবং দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়।
ঢাকার প্রধান এ পাইকারি বাজারে অভিযান চালান ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জাব্বার।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অধিদপ্তরের অভিযান দল দেখে কারওয়ান বাজারের অধিকাংশ পেঁয়াজ ব্যবসায়ী পালিয়ে যান। অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও তাদের আর দেখা পাননি।
যে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে পাওয়া গেছে তাদের অনেকে পাকা রশিদ দেখাতে না পারায় তাদের তুলনামুলক কম দামে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায়।
ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের আড়তে শনিবার দুপুরে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযানের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার মণ্ডল।
এ সময়ে মেসার্স মাতৃভান্ডার নামের এক পাইকারি দোকানে পাকা রশিদের সঙ্গে মূল্যের সামঞ্জস্য না দেখে এটির বিক্রেতাকে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়।
অধিদপ্তরের হ্যান্ড মাইকে এ দরে পেঁয়াজ বিক্রির ঘোষণা দেওয়া হয়। এ খবরে ওই দোকানে ভিড় লেগে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সব পেঁয়াজ বিক্রি শেষ হয়ে যায়।
এরপর বিভিন্ন দোকানে অভিযান পরিচালনাকালে কম দামে কেনা পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি করায় বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়।
এদিন ঢাকার মিরপুর-১ পাইকারি বাজারেও অভিযান পরিচালনা করে অধিদপ্তর। এ বাজারে অভিযানকালে মেসার্স জুনায়েদ ট্রেডার্সের পাকা রশিদ চেক করে কম দামে কেনা পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ মেলে। পরে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়।
চট্টগ্রামেও জরিমানা
ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর আসার পর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দর দ্বিগুণ করে দেওয়ার পর চট্টগ্রামের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে মোট দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা হয়েছে আগের দরে বিক্রিতে।
এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয় ৫০ হাজার টাকা করে, দুটির কাছ থেকে আদায় করা হয় ২০ হাজার টাকা করে এবং একটিকে জরিমানা করা হয় ১০ হাজার টাকা।
২৪ ঘণ্টায় পেঁয়াজের দর দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযোগ।
আড়তদার ও পাইকাররা ‘পেঁয়াজ নেই’ দাবি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করলেও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কয়েকটি আড়তে গিয়ে পেঁয়াজের অস্তিত্বও খুঁজে পেয়েছে।
শুক্রবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার খবর জানার পর দেশজুড়েই শুরু হয় হুলুস্থুল। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জেও দেখা যোয় অস্বাভাবিক চিত্র।