কোন অপশক্তিকে আদিবাসীদের প্রাণের সংগঠন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ক্ষতি করতে দেওয়া হবে না। এদের শক্তহাতে প্রতিহত করতে হবে।
কালিদাস রায়
দুষ্ট লোক কখনও অপরের ভাল সহ্য করতে পারে না। নিজরে ব্যক্তি স্বার্থের কারনে সবর্দা অপরের ক্ষতির কারণ হয়। স্বার্থ বহু প্রকারের হয়। কারো স্বার্থ অর্থকড়িতে, কারো স্বার্থ মানবিকতায়। কেউ নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে। কেউ বা জাতীয় স্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেয়। তবে ব্যক্তিস্বার্থে গলদঘর্ম হওয়ার সংখ্যাই এখন বেশি দেখা যায়। ব্যক্তি স্বার্থে কাজ করা ব্যক্তি কখনই মহান হতে পারেন না। বা তারা সে চেষ্টা টাও করেন না। তারা সব সময় বৃহৎ, জাতীয় স্বার্থে কাজ করা লোকদের বিরোধীতা করেন। এজন্যই তো সমাজের পরতে পরতে এত যন্ত্রণা। এই স্বার্থবাজ লোকদের কারনে গোটা সমাজ, দেশ, জাতি ক্ষত বিক্ষত হয়।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সমতলের নিপীড়িত, নির্যাতিত, অবহেলিত, শোষিত, নিষ্পেষিত, বঞ্চিত আদিবাসীদের কথা বলে। এই সংগঠনটি আদিবাসীদের নানাভাবে জাগিয়েছে, শিখিয়েছে। এই সংগঠনটির জন্ম না হলে আদিবাসীরা এখনও নানা ভাবে পিছিয়ে থাকতো। অন্ধকারে ডুবে থাকত। মোট কথা, এই সংগঠনটির জন্ম না হলে আদিবাসীরা তাদের অধিকার আদায়ে পিছিয়ে থাকত। আবিাসীরা যতটুকু অধিকার আদায় করতে পেরেছে শুধুমাত্র এই সংগঠনটির জন্য। এই সংগঠনটি আদিবাসীদের মানুষের মত বাচতে শিখিয়েছে। অনেকের মত আমিও এই সংগঠনটির আদর্শকে সমর্থন করি, ধারণ করি।
বর্তমানে আমি জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নাটোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। এর আগে যেদিন থেকে এই সংগঠনের এসেছি, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা শুরু করেছি, সেদিন থেকে একটি লুটতরাজ মহলের হিংসার পাত্র বনে গেছি। এই লুটতরাজ, প্রতারক, স্বার্থান্ধ মহলটি নাটোরের ভিতরেই বর্তমানে ঘাপটি মেরে সংগঠনের ক্ষতি করার আপ্রাণ চেষ্টায় লিপ্ত। নিজের স্বার্থে ঘা লাগার কারনে এই মহলের প্রধান মাতব্বর জ্ঞানশূণ্য হয়ে হায়েনার মত ছোবল দিয়ে আদিবাসী সমাজ, জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আদিবাসীদেরকে তাদের হক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। গোপনে গভীর ষড়যন্ত্রেও জাল বুনে চলেছে ওই মাতব্বর। শুধু মাত্র হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আদিবাসীদের ভুলভাল মন্ত্র শুনিয়ে বিপদে চালিত করে নিজের আখের গোছানোর চেষ্টা করছে। এদের থেকে সাবধানে, সতর্ক থেকে এদের প্রতিহত করতে হবে। নইলে জেলায় বসবাসরত আদিবাসী আবারো অনেক পিছিয়ে যাবে। বঞ্চিত হবে তাদের নায্য প্রাপ্য অধিকার থেকে।
নব্বইয়ের দশকে সমতলের আদিবাসীদের শক্তিশালী সংগঠন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জন্ম। নাটোর জেলাতেও সেসময় এই সংগঠনের ব্যানারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২০১০ সালে তারই অংঙ্গ সংগঠন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ নাটোর জেলা শাখার সভাপতি যখন হই তখন নাটোরে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের অবস্থা খুব নাজুক। এখন যেমন অন্যান্য মূল স্রোতধারার রাজনৈতিক সংগঠনের যে হাল, ঠিক তেমনি অবস্থা ছিল সংগঠনটির। হাল ধরার মত কেউ ছিলো না। এক সময়কার সংগ্রামী, কর্মঠ, পরিশ্রমী, নিবেদিত প্রাণ পরীক্ষিত আদিবাসী নেতা রমানাথ মাহাতোসহ অন্যান্যরা যারা ছিলেন তারা এই সময়টায় খুব একটা সংগঠনটিকে পুনরায় চাঙ্গা করতে ব্যর্থ হন। এর একটা উল্লেখ্যযোগ্য কারণ ছিল, ততদিনে সংগঠনটি থেকে বহিষ্কার হওয়া ওই মাতব্বর একটা এনজিও খুলে ব্যবসা শুরু করেন। আদিবাসী লোকজনদের ঠকিয়ে ঠকিয়ে নিজের একটা শক্তপোক্ত জায়গা তৈরী করে ফেলেন। কিন্তু নিজের আখের গোছাতে গিয়ে সংগঠনের আদর্শকে পুরোপুরি শক্তি দিয়ে আঘাত করে লোকজনের ভিতরে বিতৃষ্ণা সঞ্চয় করেন। এই আঘাতটা জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নের্তৃবৃন্দকে দীর্ঘদিন ভোগায়। হয়তো ওই এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মাতব্বর ভেবেছিলেন, তিনি যেভাবে অশিক্ষিত, বোকাসোকা আদিবাসী মানুষদের ভুলভাল বুঝিয়ে রক্ত চুষে চুষে খাবেন, তার কেউ প্রতিবাদ করবে না। যাইহোক নাটোর জেলায় যখন পরিষদের ক্রান্তিকাল, তখন আমিই হাল ধরেছিলাম। অনেক ধাপ, অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে তিলে তিলে জেলার প্রত্যেক উপজেলায় পরিষদের কমিটি করে দিতে অগ্রণী ভ’মিকা পালন করি। জনগণের আস্থা অর্জন করে পরিষদ। পরে সবার সম্মতিক্রমে গতবছর আমাকে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার পর পরিষদ কে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে অনেকটাই সফল হয়েছি। সবসময় চেয়েছি ওই দূর্নীতিবাজ এনজিও কর্মকর্তার মত ক্ষমতাকে কুক্ষিগত না করে একটা দূর্নীতিমুক্ত নের্তৃত্বের বিকাশ ঘটাতে।
আদিবাসী সমাজের সত্যিকারের উন্নয়ন করতে। পরিষদ পুরোদমে আদিবাসীদের সেবায় নিয়োজিত থাকায় ওই এনজিও কর্মকর্তার হয়তো ব্যক্তিস্বার্থে ঘা লেগেছে। নিজের আখের গোছানো বন্ধ হয়ে গেছে। তাই প্রতিশোধ আর নতুন করে আখের গোছানোর চেষ্টায় এখন তিনি ও তার কতিপয় লোকজন জ্ঞানশূণ্য হয়ে পরিকল্পিতভাবে আদিবাসী সমাজের গোপনে ক্ষতি করার নানামুখী চেষ্টায় লিপ্ত আছেন। বলে রাখা ভাল, বিগত দিন গুলোতে নিজের লুটতরাজ, প্রতারক, আদর্শহীন চরিত্রের কারণে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় নিজের অবস্থান হারিয়েছেন। উনার বিরুদ্ধে শক্তিশালী টিভি ও পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত প্রচার হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল পর্যন্ত তার আদিবাসীদের সাথে প্রতারণা করার জন্য ওই এনজিও কর্মকর্তাকে অপমান করেছেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন, আদিবাসী গ্রাম গুলোতে লোকজনরা ওই এনজিও কর্মকর্তার নামে থুথু ফেলে। প্রশ্ন করতে চাই, আপনার বিরুদ্ধে জনগনের এত বিদ্বেষ কেন?
পরিষদের কাছে তথ্য আছে, বর্তমানে তিনি পরিষদকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। লোকজনদের পুনরায় নেশার বাজার চালু করে দেওয়াসহ সমাজের ক্ষতিকর কাজে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এতে করে আদিবাসী সমাজ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সকল নেতাকর্মীসহ জেলায় বসবাসরত সকল আদিবাসীদের অবগতির জন্য জানাতে চাই, আপনারা সজাগ থাকুন, সতর্ক থাকুন। কোন অবস্থাতেই কোন অপশক্তিকে আদিবাসীদের ক্ষতি করতে দেওয়া হবে না। এদের শক্ত হাতে প্রতিরোধ করা হবে। পরিষদ থাকতে কেউ আদিবাসীদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, আদর্শহীন অপশক্তির বিরুদ্ধে হোক আমাদের যুদ্ধ।
কালিদাস রায়: উন্নয়নকর্মী ও সংবাদকর্মী