নিউজ ডেস্ক:
অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং জানমালের সুরক্ষা দিতে পুরো চট্টগ্রাম নগরীকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) আওতায় আনছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। সার্বক্ষণিক নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার আওতায় আনার জন্য ৭০০টি সিসি ক্যামেরা নির্বাচন করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪১১টির সংযোগ ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ক্যামেরাও শীঘ্রই সংযোগ দেয়া হবে। সিএমপির এ উদ্যোগের নাম ‘আইস অব সিএমপি’ অর্থাৎ পুলিশের চোখ। এই উদ্যোগের ফলে মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো এবং অলিগলিও পুলিশি নজরদারির আওতায় আসবে।
বর্তমানে ৭০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে এই ক্যামেরা। সিসি ক্যামেরার আওতায় সার্বক্ষণিক ভিডিও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকায় ধরা পড়ে যাবে আসামির ছবিসহ ভিডিও, যা অপরাধ দমন ছাড়াও অপরাধীদের গতিবিধিও নজরদারিতে রাখবে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো বন্দরনগরী সিসি ক্যামেরার আওতায় এসে গেলে অপরাধ প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা খুবই সহজ হবে। এমনকি দিনে-রাতে যে কোন সময় কোন অপরাধ সংঘটিত হলে তার রহস্য উদঘাটন দ্রুতই সম্ভব হবে। এর ফলে ভুক্তভোগীরা তাদের সমস্যার সমাধান পাবে। সন্ত্রাসী ও দুর্ধর্ষ অপরাধীদেরও বিচারের আওতায় আনতে সহজ হবে। সিএমপি’র একটি ডিজিটাল কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে এটি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এই কার্যক্রমটি বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। তিনি জানান, এই উদ্যোগের কারণে অপরাধীদের অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও আসামি শনাক্তকরণ সহজতর হবে। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রমের আওতায় সমগ্র মহানগরী এলাকাকে সিএমপির নিজস্ব ক্যামেরার অধীনে নিয়ে আসা হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে স্থাপন করা হবে ফেস ডিটেকশন ও নাম্বার রিডেবল ক্যামেরা। তৈরি করা হবে ভিডিওভিত্তিক ক্রাইম ম্যাপ। সম্ভাব্য অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে ঐ সকল এলাকায় বিশেষ আইপি ক্যামেরার সঙ্গে ডিউটিরত পেট্রোল গাড়ির সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ৭০০টি ক্যামেরার মধ্যে গুরুত্ব বিবেচনায় ৪১১টি ক্যামেরার সংযোগ দেয়া হয় সিএমপির কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে এবং অবশিষ্ট ক্যামেরা প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা অনস্ক্রিন সচল থাকে। এ সব ক্যামেরার ধারণকৃত ফুটেজ ১৫ দিন পর্যন্ত হার্ডডিস্কে সংরক্ষিত থাকবে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান অক্সিজেন, মুরাদপুর, জিইসি, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, পতেঙ্গাসহ প্রায় ৭০টি স্থানে এই ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) আরাফাতুল ইসলাম জানান, ভবিষ্যতে এই কার্যক্রম পুরো নগরীতে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এই লক্ষ্যে সিএমপি কমিশনার মহোদয়ের নির্দেশে কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে ৪১১টি ক্যামেরার সংযোগ দেয়া হলেও খুব শীঘ্রই অবশিষ্ট ক্যামেরাওগুলোও সিএমপির কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সংযোগ দেয়া হবে। এ ছাড়া বর্তমানে দুইজন অপারেটর এই সকল ক্যামেরার কার্যক্রম মনিটরিং করছে। ২৪ ঘণ্টা প্রতিদিনই এই সিসি ক্যামেরা মনিটরিং এর আওতায় থাকছে।
কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার মুজাহিদুল ইসলাম জানান, এ সব ক্যামেরা যদি অচল হয়ে যায় কিংবা ক্যামেরা ডাউন হয় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সচল করার জন্য মাঠ পর্যায়ে টিম আছে। একটি টেকনিক্যাল টিম মাঠপর্যায়ে থাকছে, যারা এ সকল ক্যামেরার কার্যক্রম সচল রাখার জন্য সব সময় সক্রিয় থাকবেন। এর ফলে কোন অপরাধী সিসি ক্যামেরার আওতার বাইরে যেতে পারবে না।
হ্যালো সিএমপি এ্যাপস ॥ এদিকে নগরবাসীর সুবিধার্থে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের উদ্যোগে চালু করা হয়েছে ‘বাসের ন্যায্য ভাড়া’ কার্যক্রম। এই উদ্যোগের আওতায় সিএমপির নিজস্ব ‘হ্যালো সিএমপি’ এ্যাপসে নগরীর সকল রুটের ভাড়ার তালিকা সংযোজন করা হয়েছে। নগরবাসী তাদের গন্তব্যের নির্ধারিত ভাড়া সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে। পাশাপাশি বাসের চালক ও সহকারী ভাড়া আদায়ে কোন ধরনের অনিয়ম কিংবা হয়রানি করলে তাৎক্ষণিক ৯৯৯ কিংবা সিএমপির কন্ট্রোল নম্বর ৩০৩৫২/৬৩৯০২২/ ৬৩০৩৭৫ এ অভিযোগ জানালে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।