শনিবার , এপ্রিল ২০ ২০২৪
নীড় পাতা / সাহিত্য ও সংস্কৃতি / গল্পকথা / অনুগল্পঃ ‘হার না মানা যোদ্ধার গল্প’
গল্পকারঃ কাজী জুবেরী মোস্তাক

অনুগল্পঃ ‘হার না মানা যোদ্ধার গল্প’

কাজী জুবেরী মোস্তাক

নাম তার হাকিম মোল্লা। সেই যে গন্ডগোলের বছর, হেই সুম আমার ৯ কি ১০ বয়স৷ তহনো জীবনের মানে কি বুজি নাই, যহন শ্যাখের ভাষন হুতনাম ট্যানজিস্টারে তহন শইলের ব্যাবাক পশম খারায় যাইতো। হ্যারে দ্যাকনের লাইগা মনে আনচান করতো। হ্যার ভাষন হুইন্যা বুক বাইন্ধা গন্ডগোলে গেছিলাম৷ বাপে আমারে নিবোনা, হ্যার পরও গেছিলাম৷ গন্ডগোল হইতাচে, ঠুসঠাস আওয়াজ হইতাছে। আমি ছুডু বইল্যা আমার কাম আছিলো মিলিটারিগো ক্যাম্পে গিয়া হ্যাগো খবর আনা৷ আমি হ্যাগোরে মিলিটারিগো খবর আইন্যা দিতাম, হেইদিনও মিলিটারিরা কৈ আছে খবর নিয়া আইছি। আইয়া দেহি বাজানেরে কান্দে কইরা নিয়া যাইতাছে। বাজান কইয়া চিক্কুর দিয়া বাজানেরে জড়ায় ধইরা দেহি বাজানের বুকে একখান গুলি লাগছে। বাজান শুধু কইলো দ্যাশটারে মিলিটারিগো হাত থাইক্যা বাঁচা৷ বাজানের মেসিনটা খানিক দুরে দেহি পইরা রইছে। মেশিনটা কুড়ায় লইয়া আমিও হগলের লগে ঝাঁপাইয়া পড়লাম, বাজানের না শ্যাষ করা কামডা করমু জিদ করলাম৷ হেইসুম ছোড বইল্যা মিলিটারিরা আমারে দিশ করতোনা৷ একদিন আইৎকা আমারে হ্যাগো সন্দেহ অইলো, হ্যার পর ছুডু বইল্যা আমারে মাইরা না ফালায় আমার পায়ে একখান গুলি করলো। আমিতো ভাবছি আমি আর বাঁচুমনা। আল্লারে কইলাম, আল্লা আমার বাজানের কামডা আমারে করতে দাও। আল্লায় বুজি আমার কতাখান হুনছে। ক্যামনে যেনি বাইচ্যা গেলাম। যুদ্ধ শ্যাষে খুরাইয়া খুরাইয়া দ্যাশের ভিডার দিকে গেলাম। যাইয়া হুনি মারে আর আমার বড় বইনডারে ঐ শালা শুয়রের বাচ্চা মুন্সী মিলিটারিগো হাতে তুইল্যা দিছিলো। মা হেই লজ্জা সইয্য করবার না পাইরা গলায় ফাঁস দিয়া মরছে। অনেক খুইজ্জা হ্যারপর বোইনডারে পাইলাম, তয় বোইনডাও পাগল হইয়া গেছে৷ বোইনডারে লইয়া আইজকা আমার সংসার। আমি আর আমার বোইন। দ্যাশটাতো স্বাধীন হইলো কিন্তু আমাগো খবর কেউ রাখলোনা৷ আমগো গেরামের মুন্সী, হ্যায় আমার মা, বোইনেরে হ্যারপর গেরামের অনেক মাইয়ারে মিলিটারিগো ক্যাম্পে পাঠাইছে। আইজক্যা হ্যাই বড় মুক্তিযোদ্ধ হইছে৷ হ্যারে আইজকা টেলিভিশনে দেহায় আর আইজকা স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও আমাগো খবর কেউ লইলোনা৷ আইজও আমার পাগলী বোইনডারে লইয়া ভিক্ষা কইরা আমার সংসার চলে৷ যে দ্যাশের লাইগা যুদ্ধ কইরা মা, বাপেরে হারাইলাম, বোইনডা পাগল হইলো, নিজের ঠ্যাং খান হারাইলাম, হেই দ্যাশ আমাগো কি দিছে একটু কন হুনি। যারা হেইসুম মিলিটারিগো পক্ষের লোক আছিলো, হ্যারা আইজকা অনেক বড়লোক। আর আমি? মিলিটারি গো লগে যুদ্ধ কইরা যহন জিতছি, তহন জীবনের লগে যুদ্ধ কইরাও হারুম না৷ পরাণডা থাকতে কারো কাছে বিককিরি হমুনা৷

আরও দেখুন

কবি সৌভিক দে রায়ে’র লেখা গল্প ‘প্রথম দেখা’

গল্প : প্রথম দেখা (এক অতিনাটকিয় কাল্পনিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে। নিম্নলিখিত ঘটনার সাথে বাস্তবের কোনো মিল …