নিউজ ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শিথিল করতে প্রথম পর্যায়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন আন্তর্জাতিক আর্থিক তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। এই চুক্তির ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল তা কমবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত শুক্রবার ওয়াশিংটনভিত্তিক পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ক্রিস্টালিনা বলেন, ‘এটা একটি ভালো লক্ষণ যে এখন প্রথম পর্যায়ের চুক্তি হয়েছে। এটা কিছুটা হলেও অনিশ্চয়তা কমার লক্ষণ।’
চীনা বার্তাসংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছে, আইএমএফ আরও নিশ্চয়তার প্রভাবের বিষয়ে কিছু প্রেজেন্টেশন তৈরি করেছে, যা আগামী সোমবার প্রকাশ করা হবে। সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অংশ হিসেবে এটি প্রকাশ করা হবে।
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা আশা প্রকাশ করেছেন যে, নতুন চুক্তি চীনের মোট দেশীয় পণ্যের উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। তিনি বলেন, ‘এটা ২০২০ সালের মধ্যে চীনের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬ শতাংশ বৃদ্ধি করবে।’
এর আগেও আইএমএফ প্রধান সতর্ক করেছিলেন, বিশ্বের দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থার মতে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক জিডিপি শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ কমে যেতে পারে বা ২০২০ সালেই প্রায় ৭০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হতে পারে।
ক্রিস্টিলিনা বলেন, ‘এখন যা দেখা যাচ্ছে, এই অনিশ্চয়তা কিছুটা কমেছে; কিন্তু পুরোপুরি দূর হয়নি। আমরা এর নেতিবাচক প্রভাবের কিছুটা কমতি দেখতে পাবো, তবে তা সম্পূর্ণ নির্মূল হচ্ছে না।’
প্রায় দুই বছর ধরে চলতে থাকা বাণিজ্যযুদ্ধ শিথিল করতে গত বুধবার প্রথম পর্যায়ের চুক্তি স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এই চুক্তি মার্কিন অর্থনীতির জন্য ‘রূপান্তরকারী’ হবে। আর চীনা নেতারাও এটিকে ‘উইন-উইন’ চুক্তি হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরও উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করবে।
এই চুক্তিতে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত নতুন শুল্ক অর্ধেক করবে।
ওয়াশিংটন ও বেইজিং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম পর্যায়ের হলেও এই চুক্তির আওতায় দু’পক্ষই কৃষিপণ্য, জ্বালানি, শিল্পপণ্যসহ বিপুল পরিমাণ পণ্য কিনতে সম্মত হয়েছে। প্রযুক্তি স্থানান্তর, মেধাস্বত্ব, কৃষি, আর্থিক সেবা, মুদ্রা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা বিনিময়সহ অনেক বিষয় থাকছে এ চুক্তিতে।
চীনের সঙ্গে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ২০১৮ সাল থেকে দেশটির রফতানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর পাল্টা জবাবে মার্কিন পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসায় চীনও। তবে দু’পক্ষের কূটনৈতিক পর্যায়ে বৈঠক ও সংলাপের মাধ্যমে পরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটে।