নিজস্ব প্রতিবেদক,বড়াইগ্রাম:
অবশেষে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানাকে নাটোরের বড়াইগ্রামে বদলি করা হয়েছে। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়েই তাকে বদলি করায় দুর্গাপুরের বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, টাকার বিনিময়ে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করার লিখিত অনুমতি দিতেন ইউএনও সোহেল রানা। সরকার যেখানে ফসলি জমিতে পুকুর খননে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সেখানে তিনি বিঘাপ্রতি ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে পুকুর খননের অনুমতি দিতেন। এছাড়া অবৈধ পুকুর থেকে বিভিন্ন স্থানে মাটি বহনের জন্য লিখিত এবং মৌখিক অনুমতি দিতেন তিনি। আর এ কারণে নষ্ট হতো কোটি টাকার সরকারি গ্রামীণ রাস্তাগুলো। যার ফলে প্রায়ই ঘটতো দুর্ঘটনা। অবৈধ পুকুর খননের ফলে দুর্গাপুরে একদিকে যেমন কমে এসেছে ফসলি জমির পরিমাণ অন্যদিকে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
এছাড়া সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণেও করেছেন নানা অনিয়ম। আশ্রয়ণ প্রকল্পের সদ্য নির্মিত একাধিক ঘরে ফাটল ধরায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন বাসিন্দারা। তাছাড়া দুর্গাপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৩১২টি ঘর দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত অনেক ঘর নির্মাণও হয়নি এবং ঘরে উঠতে পারেনি ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারেরা। অথচ দুর্গাপুর উপজেলাকে ভূমিহীন দাবি করা হয়েছে, কিন্তু যাদের ঘর দেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশ ভূমিহীন নয়।
ঝালুকা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী সরবিনা বলেন, সরকারি ঘরের খোঁজখবর কেউ নেয় না। ঘর নির্মাণের আগে রাস্তা নির্মাণ করার কথা ছিল, তাও করা হয়নি। যাতায়াতের ব্যবস্থাও ভালো না। কয়মজামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী ছবেদা বেওয়া বলেন, সরকারি ঘর পেয়ে তারা খুশি কিন্তু ফাটল ধরা ঘরে বাস করতে ভয় করছে। জোড়াতালি দিয়ে ফাটল বন্ধ করা হলেও কোনো কাজ হয়নি। দেবীপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৭ ঘরের বেশি ভাগ ঘরেই একই অবস্থা বলে উপকারভোগীরা অভিযোগ করেন। নানা অনিয়মের কারণে প্রকল্প নির্মিত ঘরগুলোতে এখনো বসবাস করতে আসেনি অনেক উপকারভোগী।
স্থানীয়রা জানান, বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের যে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার সম্পূর্ণ তত্ত্বাবধান করেছে উপজেলা প্রশাসন। যে কারণে এসব ঘর নির্মাণে নানামুখী অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হলেও কোন তদারকি ছিল না। নিম্নমানের কাজে বাধা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
শুধু তাই নয় অনিয়ম রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ‘বীর নিবাস’ প্রকল্পেও। ‘অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ করার কথা থাকলেও সেই আবাসন প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা। বাছাই কমিটির সভাপতি ইউএনও সোহেল রানা নির্বাচিত অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে বিত্তবানদের নাম চূড়ান্ত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। মূলত লেখাপড়া না জানায় এবং তদবির করতে অক্ষম হওয়ায় তালিকায় নাম থাকার পরও বাদ পড়েছে ৩ জন অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম।
এর আগে রাজশাহী জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির পরপর দুটি মাসিক সভায় দুর্গাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার জন্য রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান দাবি জানালেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া সোহেল রানার বিরুদ্ধে রাজশাহীতে মানববন্ধনেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এসব দাবিকে উপেক্ষা করে তাকে বড়াইগ্রামে বদলি করা হলো। এজন্য দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, নিময় মেনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বীর নিবাস নিয়ে প্রকল্পের পিডি মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন পরবর্তীতে তারা বীর নিবাস পাবেন। অনেক সময় গোপনে পুকুর খনন করায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেছেন, এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।