নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগাতিপাড়া:
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অধিদপ্তরের আদেশ তোয়াক্কা না করে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ড্রাইভার দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানো হচ্ছে। অপরদিকে ওই হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের সরকারি নিয়োগকৃত ড্রাইভার থাকলেও তাকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে না বলে অভিয়োগ উঠেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আঃ রাজ্জাকের বিরুদ্ধে। এ দিকে ওই কর্মকর্তা সরকারি বিভিন্ন আদেশ না মেনে হাসপাতাল পরিচালনা করায় হাসাপাতালের স্টাফ এবং স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জনমনে প্রশ্ন উঠেছে এই কর্মকর্তার ক্ষমতার উৎস কোথায়। এর আগেও এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে রোগীর খাবার দেওয়া, সিনিয়র স্টাফ নার্সকে ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে বসানোসহ বিভিন্ন অনিয়মের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও তার কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
জানা যায়, ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করেন মাসুদুল হক। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে মাদকাসক্ত দেখিয়ে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। পরে সেই বদলি আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিটপিটিশন দায়ের করলে আদালত তার বদলি আদেশ স্থগিত করে । ফলে তিনি বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই কর্মরত থেকে যান। কিন্তু দীর্ঘ দেড় বছর পার হলেও তাকে তার গাড়ি চালানোর দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আঃ রাজ্জাক ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রেরিত এক চিঠি থেকে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের বরাদ্দকৃত জীপ গাড়ির জন্য আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত গাড়ি চালকদের দিয়ে অন্য গাড়ি চালানো সম্পূর্ণ বে-আইনি। তবে সে আদেশ না মেনে আউটসোর্সিংয়ের ড্রাইভার দিয়েই বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালানো হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স।
এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মাসুদুল হক বলেন, আমি এই হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে সঠিকভাবেই দায়িত্ব পালন করছিলাম। তবে হঠাৎ আমাকে মাদকাসক্ত সাজানো হয়। পরে অফিসের নির্দেশে ডোপ টেস্ট করা হলে টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তার কিছুদিন পর অহেতুক ও হয়রানিমূলক আমাকে বদলি করানো হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের মাধ্যমে আমার বদলি আদেশ স্থগিত হয়। পরে আমি এখানেই কর্মরত থাকলেও আমাকে আমার গাড়ি চালানোর দায়িত্ব দেয়া হচ্ছেনা। এমনকি আমার পূর্বের পাওনা তেলের চার লক্ষ টাকাও দেয়া হচ্ছেনা। নিয়মবহিঃর্ভুত ভাবে আউটসোর্সিংয়ের ড্রাইভার দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ওই ড্রাইভার একাধিকবার দূর্ঘটনাও ঘটিয়েছেন যাতে গাড়ির ক্ষতিও হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আর কয়েকবছর আমার চাকুরি রয়েছে। এই অল্প সময় আমি আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে অবসরে যেতে চাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বরাদ্দকৃত জীপ গাড়ির জন্য আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ড্রাইভার রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমাকে স্যার অ্যাম্বুলেন্স চালাতে বলেছেন, তাই চালাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আঃ রাজ্জাক বলেন, ওই ড্রাইভার মাদকাসক্ত হওয়াই তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। আর লোক না থাকায় আউটসোর্সিংয়ের ড্রাইভার দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে নাটোরের সিভিল সার্জন ডা: মুহাম্মদ মশিউর রহমানের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।