শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / অটিজমের বিরুদ্ধে লড়াকু একজন পুতুল

অটিজমের বিরুদ্ধে লড়াকু একজন পুতুল

নিউজ ডেস্ক:
আজকের এই দিনেই জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত একজন অটিজম বিশেষজ্ঞ, তার নাম সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। আমাদের দেশে অনেক পরিবারই আছে যারা অটিজম সঠিকভাবে বুঝতে বা শনাক্ত করতে পারেন না। সেসব পরিবারে জন্ম নেওয়া বিশেষ শিশুটিকে বছরের পর বছর সমাজ থেকে আলাদা করে রাখা হয়। সামাজিক সব ধরনের আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, সমাজ থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রাখা হয় অনেক ক্ষেত্রে। একধরনের কুসংস্কার থেকে বিশেষ শিশুদের সব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। বাংলাদেশে বহু পরিবার আছে, যেখানে অটিজম আক্রান্ত মানুষের চিকিত্সার ব্যাপারে পুরোনো মানসিকতা আজও বদলায়নি। আর এ সমস্ত কুসংস্কারের খোলস ভেঙে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। তিনিই প্রথম অবহেলিত অটিস্টিক শিশুদের চিকিত্সার অধিকারের ব্যাপারে সমগ্র দেশবাসীকে সচেতন করেন।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বাংলাদেশের অটিজমবিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সুযোগ্য কন্যা এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী তিনি। আর তাই তো এই কন্যা যে আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিবেদন করবেন তা কারোরই অজানা ছিল না।

সারা বিশ্বেই তিনি অটিস্টিক শিশুদের অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য। সায়মা ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

পুতুল ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতাসংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তার কাজ বিশ্ব জুড়ে প্রশংসা পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুতুলকে হু অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকস-এর পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি ২০১৩ সালের জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের উদ্যোগে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সৃষ্টিশীল নারী নেতৃত্বের ১০০ জনের তালিকায় স্থান করে নেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। বাংলাদেশে অটিজমবিষয়ক বিভিন্ন নীতিনির্ধারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে অটিজমবিষয়ক ‘শুভেচ্ছাদূত’ হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ কাজ করছেন।

বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব দেশ প্রবল ঝুঁকির মুখে রয়েছে, সেসব দেশের জোট সিভিএফ। বিশ্বের ৪৮টি দেশ সিভিএফের সদস্য। বাংলাদেশ চলতি বছর থেকে সিভিএফের চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। সিভিএফের চার জন দূত মনোনীত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। অন্য তিন জন হলেন মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদ কামাল, ফিলিপাইনের ডেপুটি স্পিকার লরেন লেগ্রেডা এবং কঙ্গোর জলবায়ু বিশেষজ্ঞ তোসি মাপ্নু। সিভিএফের পক্ষে চার দূত জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বিকাশে প্রচারণা চালাবেন।

তার কর্মময় জীবন, মানবিক গুণাবলি ও তার মহত্ জীবনাদর্শ তরুণ প্রজন্মের কাছে এক অনুপম দৃষ্টান্ত। তিনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য দৌহিত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কন্যা। কিন্তু তার পোশাক-পরিচ্ছদ, চলাফেরা একদম সাদাসিধে এবং আড়ম্বরহীন। তিনি তার মা এবং পিতামহের জীবনের আদর্শ ধারণ করে বিশাল ও কর্মমুখী কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন আর্তমানবসেবায়।

অটিজম নিয়ে কুসংস্কার দূরীকরণ, অটিস্টিক শিশুদের অধিকার সচেতনতার যে আলোর মশাল তিনি জ্বেলেছেন তা মানসিক চিকিত্সাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত। তার কাজের পরিধি শুধু দেশের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং বিশ্বব্যাপী অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। তার সব কাজকর্ম শুধু বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। নিষ্ঠা, একাগ্রতা আর মানবসেবার মহান মন্ত্রে দীক্ষিত পুতুল আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিবেদন করেছেন। দেশের অগণিত মেধাবী তরুণদের কাছে তিনি আদর্শ হয়ে থাকবেন সব সময়। শুভ জন্মদিন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বর্তমান বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের আইকন। দীর্ঘায়ু কামনা করি। শুভ কামনা নিরন্তর।

ব্যারিস্টার মিতি সানজানা

লেখক :সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

আরও দেখুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *