নিউজ ডেস্ক:
করোনাভাইরাস সংক্রমণে তৈরি হওয়া বিরূপ পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল লক্ষ্য থাকবে জীবন ও জীবিকা রক্ষা। এ কারণে গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাত বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
রোববার জুম প্ল্যাটফর্মে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে ধরনের উদ্যোগ দরকার, বাজেটে তা নেওয়া হবে।
মুস্তফা কামাল জানান, করোনার প্রভাব মোকাবিলায় যারা সরকারের প্রণোদনার আওতায় আসেনি, তাদের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। একই সঙ্গে প্রণোদনার বরাদ্দ যথাযথভাবে দ্রুত বিতরণেরও পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া অর্থনীতিবিদরা সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতির পরামর্শ দিয়েছেন।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা কী মতামত দিয়েছেন জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এ সুযোগ থাকলে যারা ন্যায়সংগতভাবে কর দেন, তারা নিরুৎসাহিত হন। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কালো টাকা বলে কোনো টাকা নেই। এটি অপ্রদর্শিত টাকা। অন্যায় দুই ধরনের। এর মধ্যে একটা হচ্ছে আইনের মধ্যে থেকে সুযোগ নেওয়া। দেশে জমিজমা বিক্রি ও নিবন্ধন হয়। কে কত দামে কিনছে, কত দামে নিবন্ধন করছে, সে বিষয়ে কেউ কখনও চ্যালেঞ্জ করেনি। আইনের সুযোগ নিয়েই অনেকে এ কাজ করেছে। ফলে অনেকের সম্পদ অপ্রদর্শিত হয়ে পড়েছে। এমন আরও উপায়ে অর্থ অপ্রদর্শিত হয়ে যায়। সরকার চায় অপ্রদর্শিত অর্থের উৎস বন্ধ করতে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা মাথায় রেখেই বাজেট সাজানো হবে। বৈশ্বিক সব সমস্যার সমাধান বাংলাদেশের নেই। তবে বৈশ্বিক সমস্যার কারণে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির সমস্যা মোকাবিলার পদক্ষেপ থাকবে দেশের ভেতরের সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে বাজেট করা হবে। এ সমস্যা কতদিনে শেষ হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এ জন্য যেসব খাত জীবন ও জীবিকার সঙ্গে জড়িত, সেগুলোই হবে আগামী বাজেটের মূল বিষয়। গ্রামীণ অবকাঠামো, গ্রামের মানুষ, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাত অগ্রাধিকার পাবে। এসব খাতে অনেক ব্যয় করতে হবে।
কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে অর্থনীতিবিদদের কোনো পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে কর আদায় করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে অনেক কর ছাড় দেওয়া হয়ে থাকে। এসব কর নিলে সরকারের এক পকেট থেকে অর্থ অন্য পকেটে যাবে মাত্র। অন্যদিকে প্রকল্প ব্যয় বাড়বে।
সর্বাত্মক লকডাউনের সময় দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীলসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারের কোনো সহায়তা পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার জনগণের সুবিধার জন্য কাজ করে। এর আগে যত ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা করেছেন। বর্তমান প্রেক্ষিতে যদি কোনো প্রণোদনা দরকার হয়, প্রধানমন্ত্রীই তার ঘোষণা দেবেন।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পিকেএসএফ চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার, নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, সাবেক অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, আতিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদ, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
১৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট চায় অর্থনীতি সমিতি : করোনাভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে মুক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ নির্মাণে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। অর্থনীতি সমিতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেড়েছে। আয় বৈষম্যও বেড়েছে। এ পরিস্থিতি উত্তরণে আয়, সম্পদ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে।