নিজস্ব প্রতিবেদক:
- বর্তমানে চাহিদা দৈনিক দুইশ’ টন
- আবুল খায়ের স্টিলেরই উৎপাদন ক্ষমতা ২৬০ টন
- আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন তৈরি করছে
দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে ভারতের অভিজ্ঞতা সামনে রেখে অক্সিজেন সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। ভারতে শুধু অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুবরণ করেছে অনেক করোনা রোগী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সরকার ও বেসরকারী পর্যায়ের প্রস্তুতিতে অক্সিজেন সঙ্কটের তেমন কোন আশঙ্কা নেই।
সামাজিক সংক্রমণে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে রোগীর অক্সিজেন সাপোর্ট তুলনামূলক বেশি লাগছে। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পরিশ্রম ও আন্তরিকতায় বড় ধরনের সঙ্কটের সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশীয় কোম্পানিগুলো হাসপাতাল ও বাসা বাড়িতে বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করছে।
আগামীতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়লে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অস্থায়ী ভিত্তিতে নির্মিত হাসপাতাল, স্কুল কলেজ ও মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতেও অক্সিজেন সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিয়েছে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সিলিন্ডার সরবরাহ ও তা রিফিল করে দেয়ার প্রতিশ্রæতিও কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, এবার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের রোগী বাড়লেও অক্সিজেন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দেশের মানুষের চিকিৎসাসেবা দেয়ার মতো অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহের সক্ষমতা দেশে রয়েছে।
স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, করোনার সংক্রমণের আগে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অক্সিজেনের চাহিদা ছিল দিনে ১০০-১২০ টন। করোনার সংক্রমণের পর থেকে চাহিদা দাঁড়িয়েছে ২০০-২২০ টনের মতো। দেশের শীর্ষ অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের স্টিলের অক্সিজেন প্লান্টেই ২৬০ টন অক্সিজেন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন অক্সিজেন, এ কে অক্সিজেন মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদন করছে। ইসলাম অক্সিজেন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানও অক্সিজেন উৎপাদন করে থাকে। তিনটি প্রতিষ্ঠানের দুইশ’ টনের বেশি উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসায় অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে এখন পর্যন্ত বেগ পেতে হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকলে পার্শ্ববর্তী দেশের মতো বাংলাদেশে সঙ্কট হবে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশে শিল্প কারখানার জন্য অক্সিজেন উৎপাদন এখন বন্ধ রয়েছে।
[RTF bookmark start: }_GoBack[RTF bookmark end: }_GoBackRvbv গেছে, দেশের সব সরকারী হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করে বহুজাতিক কোম্পানি লিন্ডে ও দেশীয় কোম্পানি স্পেকট্রা। লিন্ডে ও স্পেকট্রা কোম্পানি দুটি ভারত থেকে আমদানি করা অক্সিজেন সরবরাহ করত।চটগ্রামের শিল্প প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রæপ স্টিল মিলস অক্সিজেন সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে স্টিল প্লান্টকে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গত বছর করোনার সংক্রমণ বাড়ার সময়ও প্রতিষ্ঠানটি বিনামূল্যে হাসপাতাল ও রোগীকে সিলিন্ডার সরবরাহ ও পূরণ করে দিয়েছিল। আবুল খায়ের স্টিলের মতো দেশে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করছে। এছাড়া শিল্প কারখানার অক্সিজেন উৎপাদন বন্ধ রেখে শুধু মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদন করছে।
আবুল খায়ের স্টিল মিলস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, গত বছরে করোনা সংক্রমণের সময় দিনে ২৬০ টন উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন স্টিল প্লান্টটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ১৮ হাজারের বেশি সিলিন্ডার হাসপাতাল ও রোগীকে বিনামূল্যে রিফিল করে দেয়া হয়েছে। হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা নির্মাণ করে দিয়েছে তারা। কোম্পানিটির কাছেই ১৯০ টনের মতো তরল অক্সিজেন মজুদ রয়েছে। যা দিয়ে দেশের প্রায় এক মাস চলে যাবেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ থাকার কারণে লিন্ডে ও স্পেক্টাকে এখান থেকে তরল অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। কোম্পানি থেকে ৭ লাখ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছে। শিল্প গ্যাস বন্ধ রেখে সারাদেশে করোনা রোগীকে সহায়তা দিতে এই অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আগামীতে করোনা সংক্রমণ বাড়লে দেশে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বাসা বাড়িতে চিকিৎসাধীন রোগীর জন্য অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়বে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো শিল্প অক্সিজেন বন্ধ রেখে মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় আগামীতে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হবে না কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। ভারতের করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বাংলাদেশে মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহকারী সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বিডির মাধ্যমে বাংলাদেশে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ রয়েছে। ২১ এপ্রিলের পর থেকে আমদানি বন্ধ রয়েছে। ভারত থেকে ১০০ টন অক্সিজেন আমদানি করা হতো। ঘাটতি পূরণে এই অক্সিজেনের পুরোটা এখন বাংলাদেশেই উৎপাদিত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, দেশে তরল অক্সিজেন উৎপাদনের ঘাটতি থাকলেও গ্যাসীয় অক্সিজেনের ঘাটতি নেই। ভারত থেকে তরল অক্সিজেন আমদানি করা হতো। এটি হাসপাতালের বড় ট্যাংক থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। আর গ্যাসীয় অক্সিজেন সিলিন্ডারে সরবরাহ করা হয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে সিলিন্ডারে করে সঙ্কট মেটানো যাবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ফরিদ হোসেন মিয়া বলেছেন, অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠান মূলত আমদানি নির্ভর। এখন আমদানি বন্ধ রয়েছে। এর বাইরেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন উৎপাদন করে। আবুল খায়ের স্টিল মিলস ও ইসলাম অক্সিজেন নামের একটি প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন সরবরাহ করছে। এখন পর্যন্ত পরস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে রোগী বাড়লে আগামীতে চাপ আরও বাড়বে।