বৃহস্পতিবার , জুলাই ২৫ ২০২৪
নীড় পাতা / অর্থনীতি / সুদের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত সমাজ!

সুদের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত সমাজ!

আমিরুল ইসলামঃ
সুদ কিংবা মহাজনী ব্যবসা সামাজিক নিপীড়নমূলক একটি অনৈতিক পন্থা। বহু পূর্ব হতে বিষবৃক্ষের ন্যায় এই ব্যবস্থা শোষণের একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত। আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে বর্তমান সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে এই কারবার। এর সাথে জড়িয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে অসংখ্য নিরীহ মানুষ। মহাজনদের কঠিন শর্তের বেড়াজালে আটকে সর্বস্ব খোয়াচ্ছে তারা।

পক্ষান্তরে টাকা দিয়ে টাকা বানিয়ে পুঁজিপতি শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হয়েও কৌশলে আয়কর বিভাগের নজরদারি এড়িয়ে দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছে এসব সুদখোররা। আইন সম্মত বা বৈধ না হওয়া সত্ত্বেও এই ব্যবসার সাথে জড়িতদেরও নানা কুট কৌশলের কারণে সমাজের কোন পর্যায় থেকে এর বিরুদ্ধে “টু” শব্দটি পর্যন্ত করা হচ্ছে না। কিন্তু দিনে দিনে এর ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সাধারন মানুষ যারপর নাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যুগপোযোগী আইন করে এই প্রবনতা বন্ধ করা না গেলে নিকট ভবিষ্যতে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নৈরাজ্য দেখা দেবে যা শ্রেণী বৈষম্যকে প্রকট করে তুলে চরম সামাজিক অস্থিতরতা সৃষ্টি করতে পারে। সুদের ব্যবসাতো কমছেই না বরং দিনে দিনে সুদখোর শ্রেণীর কাছে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে প্রতিটি মানুষ, পরিবার তথা সমাজ। যেখানে বর্তমানে ব্যাংক এ সুদের হার ৫%-৭% করে সেখানে এই সব সুদের ব্যবসাকারীরা ১২০%, বা কোন কোন ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশী হারে সুদ নিচ্ছে। তাদের এই অতি সুদের লোভের কারনে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে বহু লোক। কেউ সুদ না দিতে পেরে পালিয়ে বেরাচ্ছে। কেউ বা হয়ে যাচ্ছে মাদকাসক্ত।

অন্যদিকে কেউ জড়িয়ে পড়ছে নানান অপরাধমূলক কাজে। এক সময় সুদের এই ব্যাপকতা কিছু গ্রামাঞ্চলে দেখা গেলেও এখন তা পুরো শহরের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। নাটোর জেলার এমনই এক এলাকা হালসা। যেখানে কতিপয় অতি মুনাফালোভী সুদখোরের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে বহু মানুষ। ভুক্তভোগী কয়েকজন জানিয়েছেন, এই সব সুদখোর লোকেরা প্রতি লাখে প্রায় দশ থেকে কুড়ি হাজার টাকা প্রতি মাসে সুদ নেয় এবং তাদের এই অতি সুদের টাকা শোধ করতে করতেই তারা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। যেখানে আসলের পরিমাণ থেকেই যাচ্ছে। ফলে অনেকে এইসব সুদখোর লোকের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এইসব সুদ ব্যবসার সাথে হালসা ও আসে পাশের গ্রামের অনেকেই জড়িত। তাদের মধ্যে অন্যতম হালসা বাজার এলাকার মাফিয়া গ্রুপের সদস্যরা, এছাড়াও এই এলাকার এবং আশেপাশের কিছু এনজিও টাইপের অর্গানাইজেশন ও ব্যক্তি নিয়ে অন্তত প্রায় শতাধিক মানুষ এই অবৈধ সুদের ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত। এলাকার অনেক বাসাবাড়ির গৃহিনীরাও অধিক লোভের আশায় এই ব্যবসায় যুক্ত। তাদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদেরকে পাওয়া যায়না। হালসাতে যারা সুদের ব্যবসা করছেন তারা এলাকার কিছু বখাটে লোকদেরকে সবসময় নিজেদের সাথে রাখছেন। যাদের মাধ্যমে সুদের টাকা পরিশোধ না করতে পারলে মোবাইলে হুমকিসহ নানা ভয়-ভিতি দেখায়। ফলে বাধ্য হয়ে কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেউ বা তার আত্মীয়-স্বজন বা অন্য লোকদের কাছ থেকে আরো চড়া সুদে টাকা এনে ঋণ পরিশোধ করছেন। কেউ বা বিক্রী করছেন স্ত্রীর গহনা। ফলে এই সকল ঋণগ্রস্থ লোকেরা আর কখনো ঋণমুক্ত হতে পারছেনা। তাদের এই অনৈতিক ব্যবসার কারণে এলাকার বহুলোকের সর্বনাশ হলেও এই ব্যাপারে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। কারণ যারা ভুক্তভোগী তারা এলাকায় দুর্বল শ্রেণীর লোক এবং সুদখোর মহাজনদের হুমকি-ধামকি, মামলা-মোকদ্দমা করার ভয়ে তারা থানা-পুলিশ বা এলাকার গণ্যমান্য লোকদেরও শরণাপন্ন হতে পারছেন না।

এলাকার কতিপয় লোকের সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সুদের ব্যবসা এই এলাকায় ভয়াবহ বিষের ন্যায় ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যদি এখনই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন তবে ভবিষ্যতে এই অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। তারা জানান, মানুষের প্রয়োজনে তার হয়তো অন্যের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে পারে। কিন্তু তার হার কোন অবস্থাতেই ১০% -১৫% বেশী হওয়া উচিত না। ন্যূনতম ৬০% – ১২০% সুদ নিলে কারও পক্ষেই সেই টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবেনা। এলাকার লোকেরা মনে করেন এই ব্যাপারে থানা-পুলিশেরও এগিয়ে আসা উচিত। মধ্যযুগ কিংবা সামন্তযুগ, সব সময়েই মহাজনী ব্যবসা বেশ জোরেশোরে চলছিল। কিন্তু সভ্যতার ক্রমবিকাশের যুগে এসে ঐ প্রবণতার পথ রুদ্ধ হলেও অতি সম্প্রতি মহাজনী ব্যবসা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আর মহাজনদের চড়া সুদের গ্যাঁড়াকলে পড়ে সাধারণ মানুষ থেকে উচ্চবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত সকলেই জেরবার হয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এভাবে লাখ লাখ টাকা নিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রমের আদলে ব্যবসা পরিচালনা করার বিধান রাষ্ট্রীয় আইনে রয়েছে কিনা সে বিষয়ে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা হয়ত নেই। কিন্তু ভোক্তা অধিকার রক্ষার বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে গেলে সুদের কারবার নিয়েও সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ থাকা উচিত বলে অনেকেরই মন্তব্য। কেননা এই পদ্ধতি সমাজে শ্রেণী ও আয় বৈষম্যের সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে পুঁজিপতিরা সরকারের চোখ এড়িয়ে গিয়ে রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ পাচ্ছে। আবার প্রদত্ত ঋণের টাকার জন্য শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পথ তৈরী হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায়।

আরও দেখুন

নগরীর পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের জনপ্রতিনিধি ও  আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের সাথে রাসিক মেয়রের মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রেস বিজ্ঞপ্তি, ২৪ জুন ২০২৪ দেশের চলমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে  রাজশাহী মহানগরীর পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল …