নীড় পাতা / জাতীয় / রোহিঙ্গা ব্যয় নিয়ে গুজবঃ যে পথে ব্যয় ৭২ হাজার কোটি টাকা

রোহিঙ্গা ব্যয় নিয়ে গুজবঃ যে পথে ব্যয় ৭২ হাজার কোটি টাকা

বিশ্বের ছোট একটি দেশ হলো বাংলাদেশ। ছোট্ট এই দেশটিতে বসবাস করছে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ। প্রায় দেড় লাখ বর্গ কিলোমিটারের এই দেশটিতে এতো মানুষ থাকার কারণে সবারই নাভিশ্বাস অবস্থা। এরই মধ্যে নতুন করে এই দেশে যোগ হয়েছে মিয়ানমার থেকে জাতিগত নিধনের শিকার পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। কক্সবাজারে অবস্থান নেওয়া দুই বছরে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ লাখ। গত দুইবছরে এই রোহিঙ্গাদের পেছনে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকা। যা একটি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। এছাড়াও প্রতিমাসে তাদের পেছনে আরো ব্যয় হচ্ছে আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি।

তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একটি বিশেষ মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকারের ৭২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়কে অযৌক্তিক প্রমাণ করার চেষ্টায় লিপ্ত। তবে প্রত্যেকেরেই জানা উচিৎ সকল ক্ষতির হিসাব টাকা দিয়ে করা যায় না। ১১‘ লাখ রোহিঙ্গা এই দেশে আসার পর তারা পাহাড় কেটে ঘর বানিয়েছে, হাজার হাজার গাছপালা কেটে সাবার করেছে। এই সমস্ত ক্ষতির হিসাব যোগ করলে ক্ষতির পরিমাণ লাখখানেক টাকাও ছেড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, তাদের একটি অংশ কক্সবাজার আসার পর জড়িয়ে পড়েছে খারাপ কাজে। এই রোহিঙ্গা শিবিরে গত দুইবছরে খুন হয়েছে শতাধিক।

সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সূত্রের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ৭ লাখ ৪৫ হাজার। এর আগে একই কারণে ১৯৭৮-৭৯, ১৯৯১-৯২ ও ১৯৯৬ সালেও মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় শিবিরে জন্ম নিয়েছে আরো ৬০ থেকে ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু। সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ১৮ হাজারের কিছু বেশি। এদিকে ২০১৮ সালের জুন মাসে জাতিসংঘের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গার পেছনে সরকারের বছরে ব্যয় হতে পারে কমপক্ষে ৬০ কোটি ডলার। দুই বছরে এর পরিমাণ ১২০ কোটি ডলার। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা।

এই ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ খাদ্য, আবাসন, স্বাস্থ্য ও অন্য জরুরি সেবাসহ আনুষঙ্গিক ভৌত সেবা সুবিধা দিয়ে আসছে। রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী আবাসন গড়তে নোয়াখালীর ভাসানচরে আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১২০টি গুচ্ছগ্রামে এক হাজার ৪৪০টি ব্যারাক ও ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। যা পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র।

সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক বৈচিত্রে। রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার আশ্রয় ক্যাম্প। পাহাড় ও বন কেটে স্থাপন করা হয়েছে এসব আশ্রয় ক্যাম্পের অবকাঠামো। এ কারণে উজাড় হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি। এতে ৩৯৭ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯৩ টাকার সমপরিমাণ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়েছে। 

এদিকে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর ৪/১৪ (ক)-অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রকার অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণ করার ক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাংলাদেশ বন বিভাগের এই আইন উপেক্ষা করে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের ৪০১ দশমিক ৪০ একর, জামতলী ও বাঘঘোনার ৫১৬ একর, বালুখালীর ৮৩৯ একর, তাজনিমা খোলার ৪৫১ একর, উখিয়ার বালুখালী ঢালা ও ময়নারঘোনার ৩১০ একর, শফিউল্লাহ কাটা এলাকার ২০১ দশমিক ২০ একর, নয়াপাড়ার ২২৪ একর, টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের পুঁটিবুনিয়ার ৮৮ দশমিক ৬০ একর, কেরনতলী ও চাকমারকুল এলাকার ৭৯ দশমিক ৮০ একর এবং লেদারের ৪৫ একর সংরক্ষিত বনভূমি উজাড় করে রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসন শিবির গড়ে তোলা হয়েছে। কক্সবাজার বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় হিসাবে এই পরিমাণ জমির দাম দাঁড়ায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। যা সরকারের নিজস্ব সম্পত্তি।

রোহিঙ্গাদের পেছনে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ক্ষতি হচ্ছে পুরো রাষ্ট্রের। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য সরকার মিয়ানমারের সাথে দুই দফা কথা বললেও কথা বললেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তবে এই অচলাবস্থা চলতে থাকলে দেশের মানুষের জন্য সামনে আরো দু:সময় আসছে তা আন্দাজ করেই বলে যায়। এখনি সবার উচিৎ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এক হয়ে রোহিঙ্গাদের তার মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো।

আরও দেখুন

পিরোজপুরে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে দিনব্যাপীপ্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:  ১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবার, ঢাকা: মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে পিরোজপুরের …