ভ্রমন ডেস্ক
হাজার বছরের পুরোনো একটি শহর পম্পেই। ইতালির ক্যাম্পানিয়া প্রদেশে নেপলসের (নাপোলি) আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস পর্বতের পাদদেশে ‘পম্পেই’ নামক ছোট্ট এ নগরী অবস্থিত। বর্তমানে উপকূল থেকে বেশ দূরে সরে গেলেও প্রাচীন এই নগরী এক সময় ছিল একেবারে উপকূলের ধার ঘেঁষে। ঘুরে এসে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ইসমাইল হোসেন স্বপন-
গত অক্টোবরের কোনো এক সকালে গিয়েছিলাম ইতালির নেপলসে। নেপলস থেকে খানিক পরপরই ট্রেন ছাড়ে। ট্রেন ছাড়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পম্পেই পৌঁছানো যায়। স্টেশন থেকেই পম্পেইর দিকে যাওয়ার দিক-নির্দেশনা চোখে পড়ে। মিনিট দুয়েক হাঁটলেই তার একাধিক প্রধান ফটকের একটি দেখা যায়। ফটক দিয়ে শতশত পর্যটকের সাথে প্রাচীরের ভেতরে ঢুকতেই যেন দুই হাজার বছর পিছিয়ে গেলাম। সারি সারি স্তম্ভ, পলেস্তারা খসে পড়া দেয়াল, লম্বা পাথরের রাস্তা চলে গেছে শহরের আরেক মাথা পর্যন্ত, দেব-দেবীর মন্দির।
![pompei-in-(1)](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/pompei-in-1-20191112141233.jpg)
প্রথমেই ফোরাম নামে ফাঁকা জায়গাটি দেখা হলো। এখানেই নগরের সব বড় বড়
অনুষ্ঠান হতো। ফোরামের চারদিকে বিভিন্ন ধরনের ভবন। অনেকগুলো স্মৃতিস্তম্ভও
দেখা গেল ফোরাম স্কয়ারে। শহরের দেবরাজ জুপিটারের মন্দিরের পরে অ্যাপোলোর
মন্দিরে যাওয়া হলো। অনেকটা একই ধাঁচের সবখানে। সারি সারি স্তম্ভ, ধসে পড়া
ছাদ, ফাঁকা সবুজ জমি।
এরমধ্যে হাউস অব দ্য ফন নামের বিখ্যাত
বাড়িটির মাঝে ঢুকতেই উদ্যানের সাথে লাগানো ছোট একটি ঝরনার সামনে ফনের
ভাস্কর্য দেখা গেল। যদিও এককালে কোন ধনি ব্যক্তির বিশাল বাড়িটির মূল আকর্ষণ
একটি অসাধারণ মোজাইকের কাজ। যেখানে সম্রাট আলেকজান্ডারের সাথে ইরানের
সম্রাট দারিউসের যুদ্ধ দেখানো হয়েছে।
![pompei-in-(1)](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/pompei-in-2-20191112141249.jpg)
হাউস অব দ্য ট্র্যাজিক পয়েট বাড়ির প্রবেশ পথে যেমন মোজাইকে খোদাই করা ভীষণ দর্শন কুকুর চোখে পড়ল, তেমন ভেতরে ছিল গ্রিক পুরাণের নানা চিত্র। কিন্তু নামটি কেন হাউস অব দ্য ট্র্যাজিক পয়েট, তার অবশ্য সঠিক ব্যাখ্যা মেলে না।
চমৎকার রাস্তাগুলো বৃষ্টির জল নেমে যাওয়ার জন্য সামান্য ঢালু করে তৈরি, সাথে ফুটপাতগুলোও। তবে নগরীতে টো টো করে ঘুরে মনে হলো- সবচেয়ে বেশি দেখলাম রান্নাঘর। বেশ চমৎকার মোজাইকের কাজ করা, রান্নার পাত্র রাখার জন্য গোল গোল ছিদ্র, এমন অনেকবারই চোখে পড়ল। আসলে সরগরম এলাকায় এমনই হওয়ার কথা।
![pompei-in-(1)](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/pompei-in-2-20191112141305.jpg)
কিছু দোকানের সামনে তাদের ভাষায় লেখা আছে যে, সেখানে কোথায় কী মিলত। চিহ্ন দিয়ে বোঝানো আছে যে, সেটা কুমারের দোকান, নাকি কামারের, নাকি শুঁড়িখানা। দুঃখজনকভাবে পম্পেই নগরীর সবচেয়ে চমৎকারভাবে সংরক্ষিত চিত্রকর্মগুলো নেপলস পুরাতত্ত্ব জাদুঘরে আছে, তেমনভাবে এখানে অধিবাসী মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণির মৃতদেহগুলোর অধিকাংশই একই জাদুঘরে স্থান পেয়েছে।
পম্পেই ইট-পাথরের মৃত নগরী হলেও সেখানে কিছু সবুজের ছোঁয়া আছে সবখানেই। বিশেষ করে প্রাচীন আবহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে উদ্যানগুলোতে সেই সময়ের গাছ রোপণ করেই। এছাড়া বড় ঘরগুলোর ভেতরের এক চিলতে বাগান তো আছেই।
![pompei-in-(1)](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/pompei-in3-20191112141323.jpg)
পম্পেই নগরীর জনসংখ্যা দশ হাজার হলেও ধারণা করা হয়, ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুতপাতের সময় এখানে হাজার বিশেক লোক জমায়েত হয়েছিল। কারণ রোমানদের কাছে পম্পেই অবকাশকেন্দ্র হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। গড়ে উঠেছিল রোমান অ্যারেনা। গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াই থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ভাষণ সবই চলত এখানে।