নীড় পাতা / উত্তরবঙ্গ / পুঠিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজে আকস্মিক পরিদর্শনে ইউএনও

পুঠিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজে আকস্মিক পরিদর্শনে ইউএনও

নিজস্ব প্রতিবেদক, পুঠিয়া
কোনো প্রকার নিয়মনীতি ছাড়াই চলছে রাজশাহীর পুঠিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ। অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমানের সাথে কিছু শিক্ষকদের বিশেষ সমঝোতা থাকায় তারা আসছেন ইচ্ছেমত। আবার অনেক শিক্ষক কলেজে না এসে মাস শেষে গড়হাজিরা দিয়ে বেতন নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে ওই অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে। এ সকল অনিয়মের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি ওলিউজ্জামান আকস্মিক অভিযানে কলেজে এসে এর সত্যতা পান।

তিনি বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গিয়ে দেখি ৩০ জন শিক্ষকের মধ্যে ১০ জনই কতৃর্পক্ষের অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত। কলেজে উপস্থিত আছে মাএ ৫ জন শিক্ষক বাকী শিক্ষকগন তাদের ক্লাশ শেষ করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে আগেই চলে গেছেন। কোন শিক্ষার্থীদের কলেজে পাওয়া গেল না। ক্লাশ সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই শিক্ষার্থীদের বৃষ্টি ও আবহাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের এমন কর্মকান্ডে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারী দিয়েছেন।

একাধিক শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, কলেজের অধ্যক্ষ কোনো দিনই যথা সময়ে কলেজে আসেন না। উপাধ্যক্ষও রাজশাহী শহরে থাকার অযুহাতে কলেজে আসেন সকাল ১১ টার সময়। তিনি এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে দুপুর ১২ টার আগেই আবার বাড়ি ফিরেন। তারা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নিজের বাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন। কলেজে এমনও শিক্ষক আছেন যারা অধ্যক্ষকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে নিয়মিত ক্লাসে আসেন না। অথচ মাস শেষে বেতন নেয়ার দিনে কলেজে এসে হাজিরা খাতায় অনুপুস্থিত দিনগুলোর স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক ছাত্রীরা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, কলেজে কখন ক্লাস শুরু হবে তার কোনো সময়সূচী নেই। আমরা সকাল ৯টার দিকে কলেজে আসলেও শিক্ষকরা আসেন ১০টার পর। এরপর শিক্ষকরা বিভিন্ন গল্পগুজব শেষে ইচ্ছে হলে ক্লাসে আসেন। আবার অনেকেই গল্প শেষে বাড়ি ফিরে যান। শিক্ষকদের এমন অবহেলা ও কর্মকান্ডে প্রায় বেশীরভাগ ছাত্রীরা ক্লাসে না এসে প্রাইভেটে বেশী মনোযোগী হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২০১৬ ইং সালে ২৬ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে সরকারী অর্থ আত্মসাত ও ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির তদন্তে এসে এর প্রমান পেয়েছেন। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপসচিব, নুসরাত জাবীন বানুর স্বাক্ষরিত প্রঙ্গাপনে জারি করা হয়। যার স্বারক নং- ৩৭.০০.০০০০.০৭৪.০০১.০০৩.২০১৫.৪৫৪।

পত্রে উল্লেখ করা হয়, কলেজ অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমান তার শ্যালক ওই কলেজের প্রভাষক আব্দুর রউফ গত ৪ বছর ৮ মাস অনুপস্থিত ছিলেন। অথচ অধ্যক্ষ ভূয়া স্বাক্ষর করে আব্দুর রউফের নামে বেতন-ভাতাদির প্রায় ৮ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারী তদন্ত টিম তাদের চুড়ান্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেন। যার স্বারক নং-৭জি/১৫০/(ক-৩)/২০১৬/৬০১। ওই প্রতিবেদনে আব্দুর রউফের নামে উত্তোলনকৃত অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা দিতে নিদের্শ প্রদান করেন। অপরদিকে প্রভাষক আব্দুর রউফ ও অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমানের বেতন-ভাতাদি সাময়িক বন্ধ রাখাও হয়েছিল।

এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উঠেছে তা সবগুলোই মিথ্যা। আমি প্রতিদিন সময়মত কলেজে আসি। আর গত বুধবারে কলেজের কাজে ঢাকায় গিয়েছিলাম তাই কলেজে আসতে কয়দিন দেরি হয়েছে। সে সুযোগে কোনো কোনো শিক্ষক কলেজে আসেননি হয়তো।

এ ব্যাপারে পুঠিয়া মহিলা কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান বলেন, কলেজের শিক্ষকরা সময়মত উপস্থিত থাকেন না এ বিষয়গুলো আমি শুনেছি। তাই কাউকে কিছু না জানিয়ে আকষ্মিক অভিযানে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। অধ্যক্ষ নাকি ছুটি নিয়েছেন অথচ আমি অন্তর্র্বতীকালীন সভাপতি হয়েও তা জানিনা। ছুটি ও কলেজের সভাপতির অনুমতি ছাড়ায় কিভাবে ঢাকায় গেলেন প্রশ্ন করা হলে তিনি ব্যস্ত বলে ফোনের লাইন কেটে দেন। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের এমন কর্মকান্ডে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

আরও দেখুন

নগরীর পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের জনপ্রতিনিধি ও  আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের সাথে রাসিক মেয়রের মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রেস বিজ্ঞপ্তি, ২৪ জুন ২০২৪ দেশের চলমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে  রাজশাহী মহানগরীর পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল …