নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / জনমত জরীপ: পিপরুল ইউনিয়ন আ.লীগ কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে কে এগিয়ে!

জনমত জরীপ: পিপরুল ইউনিয়ন আ.লীগ কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে কে এগিয়ে!

নূর ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
আগামী ২১ অক্টোবর নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিলেকশনের এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে পিপরুলের রাজনীতির মাঠ এখন অনেকটাই সরগরম। তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃত্বের ভিত্তি শক্ত ও জনসাধারণ-কর্মীদের সাথে কেন্দ্রীয়ভাবে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবেই আওয়ামী লীগ বর্তমানে বেশ তৎপর।

সাধারণ সম্পাদক পদের রানওয়েতে দৌড়ঝাঁপে রয়েছেন চারজন প্রার্থী। তৃণমূলের নেতৃত্বকে বিতর্কমুক্ত করার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কাউন্সিল করে তৃণমূল থেকেই স্বচ্ছ রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় আওয়ামী লীগ। এ বিষয় নারদ বার্তাকে নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলের নির্বাচক মন্ডলীর সদস্য এস এম ফিরোজ বলেন, “পিপরুলের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত প্রাণ, দুর্নীতিমুক্ত-মাদকমুক্ত-পরীক্ষিত এবং  অধিকতর অভিজ্ঞ লোককে অগ্রাধিকার দেয়া হবে,  তবে বিতর্কিত কাউকে কিংবা গ্রহণযোগ্যতাহীন কাউকে এবারের সম্মেলনে জায়গা দেয়া হবেনা।” দলে অনুপ্রবেশকারীদের কোন পদ না দেওয়া প্রসঙ্গে আরও বলেন, “দলে অনুপ্রবেশকারীদের কোনভাবেই কোন পদ দেয়া হবেনা এবং অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে তার ও স্থানীয় এমপি’র নিজস্ব গোয়েন্দা কাজ করছে।” পিপরুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে বিতর্কিত কেউ আছে কিনা এবং তাদের কিভাবে শনাক্ত করা হবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে এস.এম ফিরোজ বলেন, “তৃণমূল নেতৃত্বকে স্বচ্ছ ও ঢেলে সাজিয়ে আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তার (এসএম ফিরোজ), এমপি এবং প্রশাসনের পৃথক পৃথক তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা আলাদাভাবে প্রার্থীদের বৃত্তান্ত পর্যবেক্ষণ করছে, প্রতিটি টিমের পর্যবেক্ষণ রিপোর্টের সমন্বয় করে এগিয়ে থাকা প্রার্থীকে যোগ্য হিসাবে তাকে পিপরুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হবে।”

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী চার জন হলেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায় ২১ অক্টোবরের কাউন্সিলে চরম প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সম্প্রতি অব্যহতি নেওয়া দেওয়ান মোঃ শাহজালাল এবং পিপরুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আলী সরদারের মধ্যে। স্থানীয় দলীয় কর্মীদের ভাষ্যমতে, পিপরুলের স্থানীয় রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক পদে এই দুইজন প্রার্থী অত্যন্ত ফেবারিট। এবারের কাউন্সিলে প্রার্থী চারজন হলেন, মোহাম্মদ আলী সরদার, দেওয়ান মোঃ শাহজালাল, আক্তার হোসেন মৃধা ও সাইফুল ইসলাম মেম্বার।

নারদ বার্তাকে এক স্বাক্ষাৎকারে পিপরুল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যহতি নেওয়া দেওয়ান মোঃ শাহজালাল বলেন, “নাটোর ২ আসনের সাংসদ  শফিকুল ইসলাম শিমুলের কাছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমি যদি পিপরুল ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হতে পারি তাহলে মাদক, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো এবং আমি এ ব্যপারে শতভাগ আশাবাদী। প্রধানমনন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নাটোরের সাংসদ কর্তৃক সকল নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো এবং ৪ নং পিপরুল ইউনিয়নকে আধুনিক রোল মডেল ইউনিয়ন হিসাবে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে পিপরুল ইউনিয়নের একজন স্বচ্ছ রাজনৈতিক মানুষ হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটাবো”।
তিনি  “চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে” ছন্দ শ্লোগানটি ব্যবহার করেন ।

অপর এক স্বাক্ষাৎকারে আরেক ফেবারিট প্রতিদ্বন্দ্বী ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের পদে আসীন মোহাম্মাদ আলী সরদার তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস ও বাস্তবতার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, “দল ও কর্মী এবং দলের কর্মকান্ডকে সবসময় মূল্যায়ণ করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নাটোরের গণমানুষের নেতা, নাটোরের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপির দিকনির্দেশনা ও নীতি নির্ধারণী মেনে আসছেন। ইউনিয়নের কর্মীরা  অনেক ভালোবেসে প্রতিদিন অসংখ্য কর্মী আমার চেম্বারে আসেন এবং আমার জন্য দোয়া করেন, আমাকে আবার সাধারণ সম্পাদক পদে দেখতে চান।” তিনি তার ত্যাগী রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতি হিসাবে বলেন, “বঙ্গবন্ধু কর্তৃক অনুপ্রাণীত হয়ে আমি ছোটবেলা থেকেই আওয়ামী লীগ করি, ২০০১ সালে বিএনপির সময় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি”। এছাড়াও তিনি বলেন, “গোয়েন্দা সংস্থার নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণের তথ্য ভিত্তিতে সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়া হলে আমি শতভাগ আশাবাদি, নাটোরের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল আমার ত্যাগের বিনিময়ে, কর্মীদের ভালোবাসার বিনিময়ে আমাকে আবার সাধারণ সম্পাদক পদ উপহার দিবেন।”

তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুইজন প্রার্থী একই ধরনের প্রতিশ্রুতি ও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ইউনিয়নকে মাদক, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের মতো অপকর্ম থেকে ইউনিয়নকে মুক্ত রাখতে এগুলোর বিরুদ্ধে সহজাত অবস্থান নিবেন এবং দলীয় উচ্চ পর্যায়ের যেকোন সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে স্বাচ্ছন্দে মেনে নিবেন।

মুক্তমত স্বাক্ষাৎকারে নারদ বার্তাকে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী শাহজালালের পক্ষে যুক্তিতে ছাত্রলীগের দেওয়ান মোঃ রবিন বলেন, “দেওয়ান মোহাম্মদ শাহজালাল এযুগের নেতা। তিনি তরুণ্যের শক্তি, মেধা এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতীক। আমি বিশ্বাস করি তার (শাহজালাল) মেধা ও নেতৃত্বের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্বে তিনি যোগ্য ও সফল হবেন।”

অপরদিকে মোহাম্মদ আলীর পক্ষের যুক্তিতে, পিপরুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৯ নং ওয়ার্ডের সভাপতি মোঃ সাহেব আলী বলেন, “তার ওয়ার্ডে এবং পিপরুল ইউনিয়নে মোহাম্মদ আলী সরদার অত্যন্ত বিচক্ষণ, জ্ঞানী ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সিনিয়র নেতা, তার কর্মীঘনিষ্ঠতা বেশি। তার অনুপস্থিতিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অনেক ক্ষতি হবে।” 

ইলেকশন অথবা সিলেকশন এতে অতীতে প্রতিশ্রুতি ছিলো, এবারো থাকবে। তবে এসব প্রতিশ্রুতির বাইরে কোন প্রার্থীর সাথে কর্মী ও জনগণ সংশ্লিষ্টতা বেশি তা জানার জন্য কথা বলেছিলাম পিপরুল ইউনিয়ন জুড়ে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মীদের সাথে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মীদের কেউ কেউ বলেন, তারুণ্যের শক্তি নিয়ে নতুন উদ্যমে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্প্রতি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যহতি নেয়া দেওয়ান মোঃ শাহাজালালের হাত ধরেই পিপরুলের আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে চান তারা। তারা তারুণ্যের ঐক্যে শাহজালালের যুব নেতৃত্বকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বলে জানান এবং তার অতীতের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি ভরসা রেখে তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দেখার আশা ব্যক্ত করেন ।
তবে বেশিরভাগ সাধারণ কর্মী এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃত্বস্থানীয় বক্তাগণ স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিজ্ঞলোককে দেখার পক্ষে অবস্থানের কথা বলেন ও আস্থার কথা জানান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সরদারকে অত্যন্ত বিচক্ষণ, জ্ঞানী-অভিজ্ঞ হিসাবে অভিহিত করে তাকেই পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দেখতে চান বলে জানান।

তবে এখন পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মী এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃত্বস্থানীয় লোকের ভাষ্যমতে বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়ায় এগিয়ে আছেন বর্তমান পিপরুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সরদার এবং তারপরেই গ্রহণযোগ্যতার ২য় স্থানে রয়েছেন পিপরুল ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা দেওয়ান মোঃ শাহজালাল। বাদবাকি দুইজন প্রার্থীর সাথে যোগাযোগের প্রক্রিয়া সম্ভব হয়নি।

তবে এসব পক্ষে বিপক্ষের সমর্থক ও কর্মীদের মতামত টিকবে কি না তা ২১ অক্টোবরের কাউন্সিলেই স্পষ্ট হবে। সে পর্যন্ত প্রার্থীসহ তৃনমূল কর্মীদের শ্বাসরুদ্ধকর প্রহর অতিবাহিত হচ্ছে।

আরও দেখুন

নগরীর পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের জনপ্রতিনিধি ও  আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের সাথে রাসিক মেয়রের মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রেস বিজ্ঞপ্তি, ২৪ জুন ২০২৪ দেশের চলমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে  রাজশাহী মহানগরীর পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল …