বৃহস্পতিবার , এপ্রিল ২৫ ২০২৪
নীড় পাতা / উত্তরবঙ্গ / খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কালিকাপুর মডেলে সবজি চাষ

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কালিকাপুর মডেলে সবজি চাষ

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম

নোবেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রভাবে বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা শৃংখলহীন হয়ে উঠতে পারে। দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকট,নেমে আসতে পারে দুর্ভিক্ষ। আর সেই প্রভাব বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে এসে পড়বে স্বাভাবিক। একদিকে করোনা মহামারীতে মানবিক বিপর্যয়, অন্যদিকে খাদ্য সংকট, এমন পরিস্থিতি মাথায় রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দূরদর্শী ঘোষনা প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, “দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনতে হবে “।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাননীয় কৃষি মন্ত্রী কৃষিবিদ ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়েছেন নানা পদক্ষেপ। এমনি এক যুগোপযোগী পদক্ষেপের নাম কালিকাপুর মডেলে বসতবাড়িতে বছরব্যাপী সবজি উৎপাদন। আর এই সবজি উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২ টি করে কালিকাপুর মডেলে স্থাপিত হচ্ছে সবজি উৎপাদন বেড। উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই প্রনোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে সুসংগঠিত টিম সুনিপুণভাবে এই কর্মসম্পাদন করে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতেও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ বাড়ি বাড়ি গিয়ে কালিকাপুর মডেলের সবজি বেড প্রস্তুতিতে কৃষকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করছে।

একজন পূর্ণ বয়স্ক লোকের দৈনিক ২১৩ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমরা গড়ে মাত্র ৫৩ গ্রাম শাক-সবজি গ্রহণ করি। এর কারণে এদেশের কোটি কোটি মানুষ দৈহিক ও মানসিক অসুখে ভুগছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে শিশু এবং নারী। আমাদের মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ, বিশেষ করে মহিলারা লৌহের অভাবে রক্তশূন্যতার শিকার।
একমাত্র ভিটামিন-এ’ র অভাবে বছরে ৩০ হাজার শিশু অন্ধ হয়ে যায়। এসব সমস্যা সমাধানে শাক-সবজি খাওয়ার বিকল্প নেই। কারণ শাকসবজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছাড়াও সব ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করে। যেহেতু সব বসতবাড়ির আঙ্গিনায় কম বেশি খোলা জায়গা থাকে। তাই সেসব স্থানে কালিকাপুর মডেলে শাকসবজি চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়েরও ব্যবস্থা করা যায়।
কালিকাপুর মডেলে সবজি চাষ
আমাদের দেশে প্রায় দুই কোটি বসতবাড়ি আছে। প্রায় সবারই বাড়ির চারপাশে কিছু পরিমাণ জায়গা সারা বছরই পতিত থাকে যা সবজি চাষের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। কালিকাপুর মডেলে সবজি চাষের মাধ্যমে বসতবাড়ির পতিত জায়গুলোকে উৎপাদনমূখি করে একটি পরিবার সারাবছরের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত আয়ও করতে পারে। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার কালিকাপুর নামক এলাকায় ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত গবেষণা চালিয়ে গবেষকগণ এ মডেল উদ্ভাবন করেন। এ মডেলে বাড়ির আঙ্গিনায় ছোট আকারের বাগান করে পরিবারের দৈনন্দিন সবজি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

স্থান নির্বাচনঃ বসতবাড়ির যে জায়গায় দিনের বেশিরভাগ সময় রোদ লাগে, এমন জায়গা নিবিড় সবজি আবাদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগি। আঙ্গিনায় আলো আসার পথে বাধা দেওয়া বাড়ির আশেপাশের বড় গাছের ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। ভবিষ্যতে বড় হয়ে ছায়া সৃষ্টি করতে পারে এমন গাছও জন্মাতে দেওয়া যাবেনা।

সবজি বাগানের আকারঃ বসতবাড়ির আঙ্গিনায় ৫ মিটার x ৬ মিটার (১৬ ফুট x১৯-২০ ফুট) মাপের বাগান তৈরি করতে হবে। বাগানের জন্য খোলা উঁচু স্থান বেছে নিতে হবে। প্রত্যেক বেডের জন্য নির্ধারিত সবজি বিন্যাস অনুসরণ করতে হবে। কালিকাপুর মডেল অনুসারে বাড়ির পতিত জায়গায় চিত্র অনুযায়ী ৫টি বেড তৈরী করতে হবে। নির্বাচিত জমিতে ৫ মিটার (১৬ ফুট) লম্বা ও ৮০ সেমি (৩২ ইঞ্চি) চওড়া ৫টি বেড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি ২ বেডের মাঝে ২৫ সেমি (১০ ইঞ্চি) নালা রাখতে হবে। বাগানের যে দিকটা লম্বায় বড় সে দিকটি প্লটের দৈর্ঘ্য হিসেবে ধরে নিয়ে বাগানের নকশা করতে হবে। এ মডেলে জায়গার পরিমান, বেড ও সবজির সংখ্যা বাড়লেও অন্যান্য মাপ একই থাকবে।

বাগানের জমি, বেড ও নালা তৈরীঃ বাগানের জন্য চিহ্নিত জায়গার আবর্জনা পরিস্কার করে নিতে হবে। বেড়া দেওয়ার স্থানের ভেতরে চারপাশে জায়গা খালি রেখে নকশা অনুসারে চারদিকে ২৫-৫০ সেমি (১০-২০ ইঞ্চি) নালা ও দুই বেডের মাঝখানে ২৫ সেমি. (১০ ইঞ্চি) নালা তৈরি করতে হবে। নালার মাটি বেডগুলোতে তুলে দিতে হবে।

সবজি বিন্যাসঃ কালিকাপুর মডেল অনুসারে বাড়ির পতিত জায়গা যথাযথভাবে সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সারা বছর পারিবারিক শাক-সবজির চাহিদা মেটানো যাবে এমন সবজি বিন্যাস করতে হবে। বছরব্যাপী ৮ থেকে ১৪ রকমের শাকসবজি অনায়াসে চাষ করা যায়।

বেড বা সবজির সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে:

প্রথম খণ্ডে- পর্যায়ক্রমে লালশাক/ডাটাশাক/টমেটো চাষ করা যেতে পারে।
দ্বিতীয় খণ্ডে- পর্যায়ক্রমে পুইশাক/গিমাকলমি্/মুলা চাষ করা যেতে পারে।
তৃতীয় খণ্ডে- পর্যায়ক্রমে গিমাকলমি/লালশাক/বেগুন করা যেতে পারে।
চতুর্থ খণ্ডে- পর্যায়ক্রমে ধনিয়াপাতা/কাঁচামরিচ/মুলা, করা যেতে পারে।
পঞ্চম খণ্ডে- পর্যায়ক্রমে পালংশাক/পুইশাক/ বেগুন, করা যেতে পারে।

তবে, পারিবারিক চাহিদা, বাজারমূল্য, আবহাওয়া, স্থান, মাটির ধরন ও রুচি অনুযায়ী শাকসবজি নির্বাচন করা যেতে পারে।

লেখক: কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার পুঠিয়া, রাজশাহী।

আরও দেখুন

অর্থের বিনিময়ে সেনাবাহিনীতে ভুয়া নিয়োগের অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থের বিনিময়ে সেনাবাহিনীতে ভুয়া নিয়োগের অভিযোগে  আনোয়ার হোসেন (২৯) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *