বৃহস্পতিবার , অক্টোবর ৩১ ২০২৪
নীড় পাতা / সাহিত্য ও সংস্কৃতি / ইতিহাস ও ঐতিহ্য / কমরেড আব্দুস সামাদ স্মরণে -সাফিয়া নায়লা শুভ্রা

কমরেড আব্দুস সামাদ স্মরণে -সাফিয়া নায়লা শুভ্রা

সাফিয়া নায়লা শুভ্রা

কমরেড আব্দুস সামাদ স্মরণে

“আমি চেতনায় বাঙ্গালী, বিশ্বাসে বস্তুবাদী এবং মানবতা আমার ধর্ম।”- এই ছিল কমরেড আব্দুস সামাদের নিজের পরিচয় সম্পর্কে ভাষ্য, আজীবনের বিশ্বাস, দর্শন এবং এই লক্ষ্যে তাঁর কাজ করে যাওয়া।

বাবার বহুধা পরিচিতি ছিল। তাঁর জন্য উদীচীর শোক সভায় অনেকের অনেক স্মৃতিচারণ শুনছিলাম আর তাঁর সম্পর্কে জানছিলাম। কারণ তিনি তাঁর পরিবার ও সন্তানদের চাইতে তাঁর জীবন ও যৌবনের অধিকাংশ সময় পার্টি ও নানা সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠন গড়া ও আন্দোলন-সংগ্রামেই কাটিয়েছেন। তাই তাঁকে আমরা খুব একটা পাই নি বা তাঁকে জেনে বুঝেও উঠতে পারি নি।

বিহারি ও পাকিস্তানিভাবাপন্ন এ অঞ্চলে বাম গণরাজনীতি, ট্রেড ইউনিয়ন এবং প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক নানা সংগঠন গড়ে তোলা এবং আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু নাকি ছিলেন কমরেড আব্দুস সামাদ। শ্রমিক ইউনিয়নের সেন্ট্রাল কমিটির সভাপতি জনাব মোক্তাদির বলছিলেন যে, এই মানুষটি কখনও কেন্দ্রভিত্তিক রাজনীতি করেন নি। অথচ তিনি যখন মাঝে মাঝে কেন্দ্রে এসে বক্তব্য দিতেন- আমরা তখন হা করে তাঁর কথা শুনতাম। তীক্ষ্ন চিন্তা শক্তি, উপস্থিত বুদ্ধি, প্রচুর পড়াশোনা, পন্ডিতস্মন্য, বারগেইনিং এবং বিতর্কে তাঁকে পরাজিত করা নাকি অসম্ভব ছিল!

যাই হোক, আর কয়েকদিন পর শুনছি, নাগরিক শোক সভাও হবে। তখন নিশ্চয়ই তাঁকে আরেকটু জানা সম্ভব হবে। আমরা কাজী চাচা, জোয়ার্দার চাচা, Robayet Rahman চাচা, রঞ্জু চাচা এবং উদীচীর তরুণ নেতা অপু বিশ্বাসসহ সবাইকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। জাতি হিসেবে বাঙ্গালী হীনম্মন্য এবং পরশ্রীকাতর। খুব কম বাঙ্গালীই যোগ্য মানুষকে যথাযথ মূল্যায়ণ ও সম্মান জানাতে পারে এবং কারো অবদান অকুন্ঠ চিত্তে স্বীকার করতে পারে। আবার অনেকে অপরের শোক সভায় গিয়ে নিজের কথাই বলতে শুরু করেন! বিষয়টা যে অশোভন এবং পরিমিতিবোধহীনতার প্রকাশ- এই সচেতনতা এবং উপলব্ধি থাকাও জরুরি। আমার বাবা ‘আমি’ শব্দটা ভিষণ অপছন্দ করতেন। যে কারণে উদীচী যখন ২০১৫ সালে আব্বুকে সম্মাননা জানায়, আমি তখন সচেতনভাবেই সৈয়দপুর উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে আব্বুর সাথে সাথে অপর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের কথাও বলেছিলাম। আব্বু খুব খুশি হয়েছিলেন এবং কথা সেভাবে বলতে না পারলেও কোন রকমে বলেছিলেন- খুব ভাল বলেছো। সেই সম্মাননার জন্য উদীচীকে আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা। অবশ্য পার্টি দেবে কিনা জানি না। সিপিবি’র তেমন সংগঠক কী আছে !?

সুস্থ থাকতে আমি একবার তাঁকে জিগ্যেস করেছিলাম, আপনার কী মনে হয়, খোদা না খাস্তা আজ যদি আপনার কিছু হয়ে যায়- পার্টি কী আপনাকে স্মরণ করবে, শ্রদ্ধা জানাবে !?

অত্যন্ত মিতভাষী আমার বাবা তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে অতিশয় নিরাসক্ত ও ভাবলেশহীনভাবে শুধু দুটো শব্দে উত্তর দিয়েছিলেন, “করতেও পারে”। ব্যস, এটুকুই।

সুস্থ ও বেঁচে থাকা অবস্থায় তাঁর একটি বইয়ের অসাধারণ রিভিউ পশ্চিমবঙ্গের সিপিএমের মুখপত্র “গণশক্তি” পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। তবে আব্বুকে এটা নিয়ে কখনও কোথাও উচ্চ বাচ্য বা এমনকি আলোচনাও করতে শুনি নি। এমনকি আমি এটা জেনেছি এবং রিভিউটা পড়েছি যখন তিনি পুরোপুরি শয্যাশায়ী।

জাগতিক ও বৈষয়িক কোন কিছুর আশা না করে, তোয়াক্কা না করে, নির্মোহ থেকে সম্পুর্ণ নিঃস্বার্থভাবে অপরের জন্য অপরের কল্যাণে নিয়ত লড়াই-সংগ্রাম করে চলা- এই মানুষগুলো কী দিয়ে তৈরি, তাঁরা কীভাবে চিন্তা করেন, জানি না!

সবাই বলছিলেন, দুঃসহ দারিদ্র্যের মাঝেও অসাধারণ তাত্ত্বিক, অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক এবং নেতৃত্ব গুণের এই ধরণের ক্ষণজন্মা মানুষ, নেতা ও শিক্ষক-গুরুকে আর হয়তো পাওয়া যাবে না। বর্তমানে বাম রাজনীতি চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি পার করছে, তা নাহলে বিশাল ও ব্যাপক আয়োজনে এই শোক সভার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত ছিল। কথা কয়টি বলার জন্য আরেকবার ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা Robayet Rahman চাচা। তাঁর সম্পর্কে যা জানলাম, শুনলাম আর এখানে যা লিখলাম- সেগুলো সবই আপনাদেরই ভাষ্য। আপনারা আরো অনেক কিছুই বলেছেন, হয়তো বলবেনও- আমার ভাষা জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি আমার বাবার মত তীক্ষ্ণ নয়, বিধায় আপনাদের সবার আলোচনা তুলে ধরতে পারলাম না।

পার্টিগতভাবে না হলেও ভবিষ্যতে যদি তাঁর স্মরণে নাগরিক শোক সভা হয়, তখন হয়তো তাঁর বই, বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে মৃত্যু পরবর্তী তাঁর দেহদান সংক্রান্ত উইলের গুরুত্বপূর্ণ ভাষ্য এবং তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা বলব।

শ্রেণী ও বৈষম্যহীন যে সমাজের স্বপ্ন কমরেডরা দেখেছিলেন, আমরা যে যেই অবস্থানেই থাকি না কেন, যতটুকুনই সম্ভব হোক না কেন- মুক্তিযোদ্ধা এবং কমরেড আব্দুস সামাদদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করাই আমাদের কর্তব্য।

লেখক:
সাফিয়া নায়লা শুভ্রা, প্রয়াত কমরেড আব্দুস সামাদ এর কনিষ্ঠ কন্যা, সৈয়দপুর, নীলফামারী।
শনিবার, ০৩ আগস্ট, ২০১৯।

আরও দেখুন

শেখ হাসিনা সাড়ে ১৫বছর ধরে দেশের মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে-রফিকুল ইসলাম খান

নিজস্ব প্রতিবেদক লালপুর ,,,,,,,,,,,,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে লালপুরে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত …