যাতায়াত সহজ আর আরামদায়ক করতে একাধিক লেন করা হচ্ছে। কিন্তু যানবাহনের অতিরিক্ত ওজনের (ওভারলোড) কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হচ্ছে সড়কের আয়ুষ্কাল। এতে অনেক ক্ষেত্রে ভোগান্তি বাড়ছে জনগণেরই। দেশের সড়কের এমন পরিণতি ঠেকাতে এবং মহাসড়ক টেকসই করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সড়ক-মহাসড়কের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে ২১ পয়েন্টে বসানো হবে এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন (পণ্যবাহী গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রক যন্ত্র)। আর এই যন্ত্র বসাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ব্যয় করবে ১ হাজার ৬৩০ কোটি ২৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সড়কের ক্ষতিও কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সড়কে লোড নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ ও আরামদায়ক করতে বিভিন্ন বিভাগে ইতোমধ্যেই ফোরলেন চালু রয়েছে। সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করছে সড়ক পথ ভাল রেখে যাতায়াতে মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য। অথচ অনেক সময়ই দেখা যাচ্ছে যানবাহনের অতিরিক্ত ওজনের কারণে রাস্তা ভেঙ্গে যাচ্ছে, কোথাও দেবে যাচ্ছে। এতে ভোগান্তিও বাড়ছে। তাই সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের পুরোটাই অর্থায়ন করবে সরকারের নিজস্ব তহবিল।
সড়কে লোড নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সড়কে যান বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা প্রায়ই পণ্য বেশি নেন। সব সড়কেই বেশি লোড হচ্ছে। রাস্তা টেকাতে দুটি পদ্ধতি একটি হচ্ছে লোড মনিটরিং অন্যটি হচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণ। আমাদের এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভাগ লোড মনিটরিং করবে। এর জন্য যন্ত্র বসানো হবে। এছাড়াও সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেউ যেন ওভারলোডিং না করতে পারে প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে তারা আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী মহাসড়কে যানবাহনে যাতে লোড টেম্পারিং না হয় সে দিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, জাতীয়, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়কসহ মোট ২১ হাজার ৩০২ দশমিক ৮ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। সড়কগুলোর ডিজাইন প্রণয়নে আরএইচডি পেভমেন্ট ডিজাইন গাইড এবং দ্য আমেরিকান এ্যাসোসিয়েশন অনুসরণ করা হয়। সাধারণত ১০-২০ বছর ডিজাইন লাইফ ধরে কমিউলেটিভ ইক্যুইভ্যালান্ট স্ট্যান্ডার্ড এক্সেল লোড (সিইএসএএল) হিসাব করে ডিজাইন করা হয়। বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত সংখ্যা ৫ মে ২০০৪ অনুযায়ী, দুই চাকাবিশিষ্ট ফ্রন্ট এক্সেল ও চার চাকাবিশিষ্ট রিয়ার এক্সেলের সর্বোচ্চ ওজন সীমা ইউনিট ধরা হয় ১৫ দশমিক ৫ টন। যা বাংলাদেশে চলাচলকারী অধিকাংশ ডাবল এক্সেল অর্থাৎ ছয় চাকাবিশিষ্ট যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সড়কগুলোতে ২০-৩০ টন ওজনবিশিষ্ট ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান চলাচল করে।
মহাসড়কের ২১টি স্থানে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে পণ্যবাহী গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রক যন্ত্র স্থাপনের লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়। যা পরবর্তীতে একনেক সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।