মঙ্গলবার , ডিসেম্বর ৩ ২০২৪
নীড় পাতা / সাহিত্য ও সংস্কৃতি / এবারের জয়ী সন্‌জীদা খাতুন, সেলিনা হোসেন ও স্বরলিপি

এবারের জয়ী সন্‌জীদা খাতুন, সেলিনা হোসেন ও স্বরলিপি

শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ অতিথি ও আয়োজকদের সঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকরা। অসুস্থতার কারণে সন্‌জীদা খাতুনের পক্ষে পুরস্কার নেন তার নাতনি -সমকাল

এ বছরের ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও লেখক সন্‌জীদা খাতুন, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং তরুণ কবি স্বরলিপি। ২০১৮ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের জন্য দেশের প্রথিতযশা সাহিত্যিকদের নিয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলীর রায়ে তারা পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিচারকমণ্ডলীর প্রধান ছিলেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। অন্য সদস্যরা হচ্ছেন- কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং কবি হেলাল হাফিজ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের কার্নিভাল হলে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার তুলে দেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আরএফ হোসেন, বিচারকমণ্ডলীর সদস্য আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং কবি হেলাল হাফিজ। অসুস্থতাজনিত কারণে হাসান আজিজুল হক এবং বিদেশে অবস্থান করায় সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সমকালের ফিচার সম্পাদক মাহবুব আজীজ।

দেশের বরেণ্য ও প্রতিশ্রুতিশীল লেখক, কবি, শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানস্থল পরিণত হয় মিলন মেলায়। অনুষ্ঠান শুরু হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্বপ্ন’ কবিতার সঙ্গে পূজা সেনগুপ্তের নেতৃত্বে তুরঙ্গমীর মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। এরপর জনপ্রিয় শিল্পী ফেরদৌস আরা বেশ কিছুটা সময় সুরের মূর্ছনায় আচ্ছন্ন করে রাখেন দর্শকদের। সংগীত পরিবেশনার পর ‘ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার’ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

দেশের মৌলিক সাহিত্যকর্মকে স্বীকৃতি দিতে সমকালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের প্রেরণায় ২০১১ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় প্রবর্তিত হয় ‘ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার’। সাহিত্যের তিনটি বিভাগে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। বিভাগ তিনটি হচ্ছে- ‘কবিতা ও কথাসাহিত্য’, ‘প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ’ এবং ‘হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্যিক পুরস্কার’। প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বরেণ্য এ লেখকের নামে ২০১৩ সাল থেকে সর্বশেষ ক্যাটাগরি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অনূর্ধ্ব ৪০ বছর বয়সী সাহিত্যিকরা এ ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হন। প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ নিয়ে মননশীল শাখা এবং কবিতা ও কথাসাহিত্য নিয়ে সৃজনশীল শাখা- এ দুই শ্রেণিতে বিজয়ী লেখক প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়। তরুণ সাহিত্যিক শ্রেণিতে বিজয়ীকে দেওয়া হয় এক লাখ টাকা। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে পদক এবং সম্মাননাপত্রও দেওয়া হয়।

এ বছর ‘ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারে’র অষ্টম আয়োজনে মোট ৪৮৭টি গ্রন্থ জমা পড়ে। এর মধ্য থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ের পর প্রতিটি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত ছয়টি গ্রন্থ পাঠানো হয় বিচারকমণ্ডলীর কাছে। বিচারকদের বিবেচনায় প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ ক্যাটাগরিতে ‘নজরুল মানস’ গ্রন্থের জন্য বর্ষসেরা লেখক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন সন্‌জীদা খাতুন। কবিতা ও কথাসাহিত্য ক্যাটাগরিতে ‘সাতই মার্চের বিকেল’ উপন্যাসের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন সেলিনা হোসেন এবং ‘হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্যিক’ ক্যাটাগরিতে ‘মৃত্যুর পরাগায়ন’ কাব্যগ্রন্থের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন কবি স্বরলিপি। ‘নজরুল মানস’ বইটি প্রকাশ করেছে নবযুগ প্রকাশনী, ‘সাতই মার্চের বিকেল’ গ্রন্থের প্রকাশক বেঙ্গল পাবলিকেশন্স এবং ‘মৃত্যুর পরাগায়ন’ প্রকাশিত হয়েছে প্রকাশনা সংস্থা ‘অর্বাক’ থেকে।

অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেকের ওপর নির্মিত আলাদা সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। তথ্যচিত্র উপস্থাপনা করেন ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব কমিউনিকেশন ইকরাম কবীর।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের লেখা থেকে এবং সম্মাননা স্মারক পাঠ করেন অভিনয় ও আবৃত্তিশিল্পী আল মনসুর, রূপা চক্রবর্তী এবং রুনা খান।

সেলিনা হোসেন ও স্বরলিপি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পুরস্কার নিয়েছেন। তবে অসুস্থতার কারণে সন্‌জীদা খাতুন উপস্থিত হতে পারেননি। তার পক্ষে পুরস্কার নেন তার নাতনি সায়ন্তনী তিশা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, সন্‌জীদা খাতুনের ‘নজরুল মানস’ বইতে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে লেখকের পরিবারের নিবিড় ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং নজরুল সৃষ্টিকর্ম লেখকের নিজস্ব অসাধারণ বিশ্নেষণে সমৃদ্ধ। সেলিনা হোসেনের ‘সাতই মার্চের বিকেল’ উপন্যাসটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। অসাধারণ বর্ণনা ও কল্পনার মিশ্রণে এটি অমূল্য সৃষ্টি হয়ে থাকবে। তরুণ কবি স্বরলিপিকে সাহিত্য জগতে স্বাগতম। তার সৃষ্টিকর্ম বলে দিচ্ছে তিনি অনেক দূর যেতে পারেন, তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। তিনি বলেন, লেখক পুরস্কারের জন্য লেখেন না ঠিকই, কিন্তু পুরস্কার লেখককে তার সৃষ্টি সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, যেটা তাকে আরও মহৎ সৃষ্টির প্রেরণায় প্রাণিত করে।

সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, এটাই প্রত্যাশা যে যতদিন সমকাল এবং ব্র্যাক ব্যাংক থাকবে ততদিন এই পুরস্কার অব্যাহত থাকবে। যতবারই এ পুরস্কার দেওয়ার আয়োজন করা হবে ততবারই সমকালের প্রয়াত সম্পাদক গোলাম সারওয়ারকে স্মরণ করা হবে। তিনি বলেন, ‘সাহিত্য সৃষ্টির সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদের উৎসাহিত করতে এ পুরস্কার দেওয়ার কাজটি আন্তরিকভাবে করা হচ্ছে। আমরা চাই জাতির মননচর্চায় কিছুটা হলেও অবদান রাখতে। সমকাল শুরু থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। মুক্তচিন্তার চর্চাকে ধারণ করে সমকাল আরও এগিয়ে যাবে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় দু’জন ব্যক্তিত্ব এবং তরুণ যারা পুরস্কার পেয়েছেন তাদের পুরস্কৃত করে সমকাল গর্বিত।’

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, দেশের সাহিত্যাঙ্গনে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত এই পুরস্কারের সঙ্গে থাকতে পেরে ব্র্যাক ব্যাংক গর্বিত। অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে এবারে পুরস্কৃত তিনজনই নারী। এটাও একটি মাইলফলক। সমকালের সঙ্গে এই পুরস্কারটি অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন তিনি।

বিচারকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, ২০১১ থেকে চালু হওয়া পুরস্কার এখন পর্যন্ত চালু থাকা বড় অর্জন। প্রয়াত সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের হাতে যাত্রা শুরু করা এ পুরস্কার সমকাল এখনও গৌরবের সঙ্গে চালু রেখেছে, এটাও আনন্দের। তিনি এ পুরস্কারকে বাংলা সাহিত্যের জন্য মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেন।

বিচারকমণ্ডলীর সদস্য কবি হেলাল হাফিজ বলেন, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ইতোমধ্যে বাংলা সাহিত্যের একটি নান্দনিক পুরস্কারে পরিণত হয়েছে। এবার যারা পুরস্কৃত হয়েছেন তারা নিজেদের সৃষ্টির গুণাবলির বিচারেই পুরস্কৃত হয়েছেন।

সেলিনা হোসেন তাকে পুরস্কৃত করার জন্য সংশ্নিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এ পুরস্কার প্রবীণদের স্বীকৃতি দিচ্ছে, তরুণদের অনুপ্রাণিত করছে। বাংলা সাহিত্যচর্চাকে উৎসাহিত করতে এ পুরস্কার বিশেষভাবে অবদান রাখছে।

সন্‌জীদা খাতুনের পাঠানো বার্তা পাঠ করেন সায়ন্তনী তিশা। বার্তায় তিনি তাকে সম্মানিত করার জন্য সংশ্নিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। সায়ন্তনী তিশা বলেন, সন্‌জীদা খাতুন শুধু রবীন্দ্রচর্চা এবং ছায়ানটের আড়ালে পড়ে গেছেন। আসলে তার কর্মক্ষেত্র আরও বিস্তৃত।

স্বরলিপি তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, কবিতা তার কাছে বৃক্ষের মতো, যা অনেক শাখায় ছড়িয়ে যায়। কবিতা অনেক বড় ক্যানভাস। কখনও এটি বিশাল স্রোতের আকর হয়ে ওঠে। স্বরলিপি বলেন, এই পুরস্কার তাকে টিকে থাকতে এবং এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

আরও দেখুন

কবি নাজনীন নাহার এর কবিতা “আমি মানুষ’’

আমি মানুষ! নাজনীন নাহারআমি মানুষ!হ্যাঁ আমি মানুষ।আমি অমানুষের করি নাশ,মানচিত্র থেকে মুছে দেবো আমি অমানুষদের …