সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর শের-ই–বাংলা হল থেকে আবরার ফাহাদ নামে একজন শিক্ষার্থীদের মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। স্বয়ং বুয়েটেই শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলন শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে উপাচার্যের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা এখনই বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার দুপুরে পাঁচ দাবি মেনে নেওয়ার নোটিশ প্রকাশ করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের দাবি ও বুয়েট কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ হলো—
১. আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে
এখনই সাময়িক বহিষ্কার করতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হবে, তাদের
স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে মর্মে বুয়েট প্রশাসন থেকে নোটিশ জারি করতে
হবে।
শিক্ষার্থীদের উক্ত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার
অভিযোগে ১৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে স্থায়ীভাবে
বহিষ্কারের ঘোষণাও দিয়েছে বুয়েট।
২. আবরার হত্যা মামলার সব খরচ বুয়েট প্রশাসন
বহন করবে এবং তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য
থাকবে, সেটাও নোটিশে লেখা থাকবে।
আবরার হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে বুয়েট কর্তৃকপক্ষ আবরার আহমেদের পরিবারকে
ক্ষতিপূরণ ও মামলার সব খরচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহন করবে বলে ইতোমধ্যে
নোটিশ প্রকাশ করেছে বুয়েট।
৩. বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সকল
হল থেকে অবৈধ ছাত্র উৎখাত করতে হবে। অবৈধভাবে হলের সিট দখলকারীদের উৎখাত
করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিস রুম সিলগালা করতে হবে। সাংগঠনিক
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পর ভবিষ্যতে কেউ যদি এ রকম সাংগঠনিক কার্যক্রমে
জড়িত হয় কিংবা কোনো রকম ছাত্র নির্যাতনে জড়িত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেবে- তা বিস্তারিত জানিয়ে নোটিশ জারি করতে হবে।
পরবর্তীতে এটি যে অর্ডিন্যান্সে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তা নোটিশে উল্লেখ থাকতে
হবে। পাশাপাশি, এ ধরনের কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি কমিটি করতে হবে এবং
কমিটি গঠনের বিষয়টিও নোটিশে উল্লেখ করতে হবে।
এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব
সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও আবরার ফাহাদ হত্যার
এজাহারভুক্ত ১৯ আসামিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে স্থায়ী ভাবে বহিস্কার করা হবে।
৪. বুয়েটে পূর্বে ঘটে যাওয়া সকল ছাত্র
নির্যাতন, হয়রানি, র্যাগিংয়ের ঘটনা এবং ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা প্রকাশের জন্য
বিআইআইএস অ্যাকাউন্টে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে। বিষয়টি মনিটরিংয়ের
মাধ্যমে শাস্তি বিধানের জন্য একটি কমিটি থাকতে হবে। বিষয়টি নোটিশের মাধ্যমে
নিশ্চিত করতে হবে।
ইতোমধ্যে নোটিশ দিয়ে র্যাগিংসহ অন্যান্য হয়রানি বন্ধে নোটিশ জারি করেছে বুয়েট।
৫. প্রত্যেক হলের সকল ফ্লোরের দুই পাশে সিসি
ক্যামেরা যুক্ত করতে হবে এবং এই সিসিটিভি ফুটেজ সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের
ব্যবস্থা করা হবে- এই মর্মে নোটিশ আসতে হবে।
হলের প্রতিটি ফ্লোরের দুইপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি মেনে নিয়েছে
বুয়েট কর্তৃপক্ষ। খুব দ্রুত হলে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।